জঙ্গিরা উন্মাদনা সৃষ্টিকারী কিছু কি নিয়েছিল, পরীক্ষার অনুমতি

রাজধানীর কল্যাণপুরে পুলিশি অভিযানে নিহত জঙ্গিরা মাদক বা উত্তেজনা-উন্মাদনা সৃষ্টিকারী কোনো ‘ড্রাগ’ বা রাসায়নিক সেবন করেছিল কি না তা পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2016, 02:54 PM
Updated : 31 July 2016, 03:09 PM

পাশাপাশি পরিচয় নিশ্চিতের জন্য নিহতদের স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষা এবং জঙ্গিদের প্রোফাইল সংরক্ষণের অনুমতিও দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলাম রোববার এই তিন আবেদন মঞ্জুর করেন।

মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড  ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এদিন আদালতে আবেদনগুলো করেন।

এগুলোর একটিতে জঙ্গিদের রক্ত, মলমূত্র, অস্থিমজ্জাসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার অনুমতি চাওয়া হয়।

আবেদনে বলা হয়, “নিহত নয় জঙ্গি সেদিন কোনো মাদক, উত্তেজনা ও উন্মাদনা সৃষ্টিকারী ড্রাগ বা কোনো রাসায়নিক পদার্থ সেবন বা গ্রহণ করেছিল কি না তা নিরীক্ষার জন্য ওই লাশগুলো থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে উপাত্ত সংগ্রহ করা প্রয়োজন। ওই উপাত্ত বা আলামত দেশে বা বিদেশে পাঠিয়ে মতামত নেওয়া হতে পারে।”

এর আগে গুলশানের ক্যাফেতে হামলাকারীদের মৃতদেহ থেকেও এসব নমুনা সংগ্রহ করা হয় একই পরীক্ষার জন্য। গুলশান হামলার পর দায় স্বীকার করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস। আবার কল্যাণপুরে অভিযানে নিহত হওয়ার আগে জঙ্গিদের তৈরি করা ভিডিও ও ছবিতে আইএসের পতাকা দেখা গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এই ভবনের পঞ্চম তলায় জঙ্গিরা আস্তানা গেঁড়েছিল

বাঁ থেকে (উপরের সারিতে)- দিনাজপুরের মো. আব্দুল্লাহ, পটুয়াখালীর আবু হাকিম নাইম , ঢাকার ধানমণ্ডির তাজ-উল-হক রাশিক; নিচের সারিতে- ঢাকার গুলশানের আকিফুজ্জামান খান , ঢাকার বসুন্ধরার সেজাদ রউফ অর্ক, সাতক্ষীরার মতিউর রহমান এবং নোয়াখালীর জোবায়ের হোসেন

নৃশংস কায়দায় মানুষ হত্যার মাধ্যমে সারা বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া আইএস যোদ্ধারা ‘ক্যাপ্টাগন’ নামের এক মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে দিনের পর দিন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে গোয়েন্দা ও সমর বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

ষাটের দশক থেকেই পশ্চিমা দেশগুলোতে ক্যাপ্টাগন পাওয়া যায়। শুরুতে বিষন্নতা কাটানোর চিকিৎসায় এটি ব্যবহার করা হলেও পরে এটি নেশার বড়ি হিসেবে ব্যাবহৃত হতে শুরু করে। বিশ্বের অনেক দেশেই এখন ক্যাপ্টাগন নিষিদ্ধ।

তদন্ত কর্মকর্তার দ্বিতীয় আবেদন নিহতদের ডিএনএ পরীক্ষার। এতে বলা হয়, জঙ্গিদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাদের ডিএনএ নমুনার সঙ্গে মেলাতে বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।

তৃতীয় আবেদনটি হচ্ছে সিআইডি দিয়ে নিহত জঙ্গিদের প্রোফাইল সংরক্ষণের জন্য। সিআইডির ডিএনএ অ্যানালিস্ট ফরেনসিক ল্যাবরেটরি দিয়ে এই প্রোফাইল সংরক্ষণের আবেদনটি করা হয়।

গুলশান হামলায় চারজনের সাক্ষ্য

এদিন গুলশান হত্যাকাণ্ডের মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী আরও চারজন।

চার পৃথক বিচারক তাদের খাসকামরায় এই চারজনের জবানবন্দি নেন। তবে ১৬৪ ধারায় সাধারণ বিবৃতিতে তারা কে কী বলেছেন তা জানা যায়নি।

মেট্রোরেল প্রকল্পের গাড়িচালক  রাশেদ সরদার মহানগর হাকিম সত্যব্রত চৌধুরীর কাছে জবানবন্দি দেন।

এছাড়া মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন জবানবন্দি নেন রাসেল মাসুদের, হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর কর্মচারী মিরাজ হোসেন মহানগর হাকিম সাব্বির ইয়াসির আহসান চৌধুরীর কাছে  এবং ওই ক্যাফের ক্যাশিয়ার আর আমিন চৌধুরী সিজান মহানগর হাকিম মাসুদ জামানের খাসকামরায় জবানবন্দি দেন।

এর আগে ২৬ জুলাই ভারতীয় নাগরিক সত্যপ্রকাশ এবং আর্টিজান রোস্তোরাঁর পাচক শাহীন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী  হিসাবে জবানবন্দি দেন।