ভারতে ৫ ‘জঙ্গি’র বিষয়ে কথা হয়নি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

পাঁচ ‘জঙ্গির’ ভারতে অবস্থানের সন্দেহের কথা জানিয়ে তাদের ফেরতে আলোচনার খবর দেশটির সংবাদ মাধ্যমে এলেও তা নাকচ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2016, 02:27 PM
Updated : 31 July 2016, 05:44 PM

ভারত থেকে ফিরে রোববার তিনি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, এনিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা ভারতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার হয়নি।

গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় ঘরছাড়া তরুণ-যুবকদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশের পর নিখোঁজ কয়েকজনের যে তালিকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়েছিল, তার পাঁচজন ভারতে পালিয়ে আছেন বলে বাংলাদেশি গোয়েন্দাদের সন্দেহের কথা টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছিল।

গত শুক্রবার সংবাদপত্রটিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্দেহভাজন ওই জঙ্গিদের ফেরত আনার বিষয়ে নয়া দিল্লিতে বৈঠকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করেন আসাদুজ্জামান কামাল।

টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত খবরের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এই প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ হয়নি। আলাপ হয়েছে সব নিয়ে। আমাদের মূল সমস্যা যেখানে ছিল, সেগুলো নিয়ে আলাপ হয়েছে।”

সফরে বহিঃসমর্পণের বিষয়ে সংশোধিত চুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “এসমস্ত জঙ্গিদের কিংবা অপরাধীদের ফিরিয়ে আনা কিংবা ফেরত দেওয়া। সেই সমস্যা যা ছিল, তা নিয়ে আলাপ হয়েছে।”

টাইমস অফ ইন্ডিয়া বলছে, ওই পাঁচজনের একটি তালিকা ভারতের কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়।

এদের মধ্যে সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরী একজন কানাডিয়ান বাংলাদেশি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাইফুল্লাহ ওজাকি জাপানি বাংলাদেশি। দেশ দুটি থেকে তারা নিখোঁজ। লক্ষ্মীপুরের এ টি এম তাজউদ্দিন অস্ট্রেলিয়া থেকে নিখোঁজ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেরিন ইঞ্জিনিয়ার নজিবুল্লাহ আনসারী মালয়েশিয়া থেকে নিখোঁজ। 

ঢাকার বাসিন্দা নিখোঁজ জুন্নুন শিকদার নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রধান মুফতি জসীমউদ্দীন রাহমানীর সঙ্গে সন্ত্রাস দমন আইনের মামলার আসামি। 

তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “পলাতক জঙ্গি বলেন বা অপরাধী বলেন, এটা (তালিকা) আমরা সব সময় দিয়ে থাকি এবং তারাও (ভারত) দিয়ে থাকে।”

বহিঃসমর্পণ চুক্তির আওতায় ফেরত পেতে একটি  তালিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যাদের নাম দিয়েছি, ভারত সেগুলোর ব্যবস্থা করবে এবং খুব শিগগিরই আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে।”

তালিকা কত জনের নাম রয়েছে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “ফিগারটা (সংখ্যাটি) এই মুহূর্তে মনে নেই।”

বহিঃসমর্পণ চুক্তি সংশোধনের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “ভারত সরকার থেকে আমাদের জানিয়েছিল এই সংশোধন না হলে তারা অনেককে দিতে পারছে না এবং আমরাও তাদের যে প্রয়োজন, সেগুলোকে দিতে পারছি না।

“এখন যে কেউ অপরাধী আমাদের দেশে হোক কিংবা সে দেশে (ভারতে) হোক। অপরাধ যদি সংগঠিত হয় এবং তার নামে যদি ওয়ারেন্ট ইস্যু হয় কোনো কোর্টের মাধ্যমে। তাহলে আমরা যেমন তাকে ফেরত দেব, তারাও তেমনিভাবে ফেরত দেবে।”

যুদ্ধাপরাধী আবুল কালাম আযাদ (বাচ্চু রাজাকার) ভারতে পালিয়ে আছেন বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

তালিকায় তার ছিল কি না-প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাচ্চু রাজাকার যে ভারতে আছে, সেই ধরনের নিশ্চিত তথ্য আমাদের কাছে নেই। ভারতে থাকলে তাকে ফিরিয়ে আনা হবে। ভারত সরকার আমাদের সহযোগিতা করবে।”

বঙ্গবন্ধুর দুই খুনির ভারতে অবস্থানের খবরের বিষয়েও তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর কোনো খুনি ভারতে আছে, তা আমরা সুনিশ্চিত নই। তবে কানাডা, আমেরিকায় ছাড়াও আর দুই একটা দেশে আছে, তা সুনিশ্চিত।”

তিন দিনের এই সফরে নানা বৈঠকে সন্ত্রাস দমনসহ সব বিষয়ে ভারতের সহায়তার আশ্বাস মিলেছে বলে জানান আসাদুজ্জামান কামাল। 

“ভারত বারবার আমাদের বলছে, তারা সব সময় আমাদের পাশে থাকবে। যে কোনো সমস্যায়, সে কোনো সময়। সুদিন-দুর্দিন সব সময় ভারত সরকার আমাদের পাশে থাকবে।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা অপপ্রচার চালায়, তাদের শনাক্তে ভারত সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি।

ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদক্ষেপকে ‘অনন্যসাধারণ’ বলে প্রশংসা করেছেন বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

“ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয় এবং রাষ্ট্রপতির মতো তিনিও আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন।”

দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে নয়া দিল্লিতে এই সফরে আসাদুজ্জামান কামালের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলে মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, পুলিশ প্রধান, বিজিবি প্রধান, কোস্ট গার্ড প্রধানও ছিলেন।

সীমান্তে হত্যা

সীমান্তে হত্যাকাণ্ড সম্প্রতি বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তা শূন্যে নামিয়ে আনতে ভারত সরকারকে পুনরায় আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান।

“বহু বিষয় কথায় আসছে। গত দুই বছরে সীমান্তে কিলিংয়ের সংখ্যা বেড়েছে। সীমান্তে কিলিং শূন্যতে আনার জন্য বলেছি।”

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ এ বিষয়ে একমত হয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

“এখন কেমন হচ্ছে (কিলিং) জানতে চাওয়ায় তাকে আমরা সংখ্যাটি জানিয়ে দিয়েছি।”

মাদক চোরাচালান রোধের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয় বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান।

বিজিবির সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদেরকে আমরা বলেছিলাম যে আমাদের কিছু দুর্গম এলাকা আছে। সেখানে আমাদের রাস্তা নাই এবং ওখানে বিজিবির যাতায়াতটা একেবারে অসম্ভব।

“তিনি (ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন, যে সমস্ত জায়গায় রাস্তা নাই। সেখানে বিজিবিকে ভারতের রাস্তা ব্যবহার করতে দেবেন এবং বিজিবি সেখানে গিয়ে যদি দুর্ঘটনায় পড়ে বা অসুস্থ হয়ে যায়, তাহলে বিএসএফ তাদের হাসপাতালে নিয়ে বিজিবি সদস্যকে চিকিৎসা করাবে।”

ভিসা ‘সহজ হচ্ছে’

ভারতের ভিসা সহজ করার অনুরোধ করে তা পূরণের প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন বলে জানান আসাদুজ্জামান কামাল।

“ভারতে বহু বাংলাদেশি প্রতিদিন স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে, চিকিৎসার জন্য, লেখাপড়া করার জন্য, ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য, দর্শনীয় জায়গা দেখার জন্য গমন করেন। তিনি (ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) মত প্রকাশ করেছেন, ভিসা আরও সহজ করার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।”

জ্যেষ্ঠ নাগরিক (যাদের বয়স ৬৫ এবং তার বেশি) এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ভিসা আরও সহজ করারও প্রস্তাবেও ভারতের কর্মকর্তারা রাজি হয়েছে বলে জানান তিনি।

“মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সিটিজেনদের ভিসার মেয়াদ ৫ বছর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।”

ভারতের ভিসার ক্ষেত্রে আরেকটি জটিলতার বিষয়টি সমাধানের প্রস্তাবও দেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

“বেনাপোল দিয়ে কেউ ভারতে ঢুকে চিকিৎসা নিল, পরে চিকিৎসকের পরামর্শে  বিমানে আসতে হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে ভারতের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় তা সম্ভব নয়। এই সীমাবদ্ধতা শিথিল করারও প্রস্তাব দেওয়া হয় আমাদের পক্ষ থেকে এবং এই বাধ্যবাধকতাও থাকবে না বলে ভারত সরকার আশ্বস্ত করেছে।”