গত সপ্তাহে এ সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করেছে বলে কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
“নতুন ইভিএম এর প্রোটোটাইপ উপস্থাপন করেছে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ। এখন ইসি তা পর্যালোচনা করে দেখবেন। সম্মতি পেলে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত দিকগুলো নিয়ে পরবর্তী সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা হবে।”
তিনি জানান, নতুন এ পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে ভোটার পরিচিতি নিশ্চিত করা হবে।
“এরপর ভোটারকে ইলেকট্রনিক ব্যালটে যেতে দেওয়া হবে। এ পদ্ধতি চালু হলে জাল ভোট দেওয়া বন্ধ হবে।”
২০১০ সালে বুয়েটের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে আংশিক ভোটের মাধ্যমে ইভিএম চালু হয়। পাঁচ বছরের মাথায় সেগুলোর কয়েকটি বিকল হয়ে পড়ে।
বুয়েটের সঙ্গে দ্বন্দ্বের পর ‘বিব্রত’ ইসি তাই নিজেরাই এবার ইভিএম বানানোর সিদ্ধান্ত নিল। এ প্রক্রিয়ায় নিজস্ব জনবল ও কারিগরি দক্ষতাকে কাজে লাগানো যাবে বলে মন্তব্য করেন ইসি সচিব।
“আমরা নিজেরাই পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেছি, তৈরিও নিজেরাই করব। কারও কাছে আর মুখাপেক্ষী থাকতে হবে না।”
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের দেওয়া খসড়া এ প্রস্তাব নিয়ে কমিশন আলাপ-আলোচনা ও পর্যালোচনা শেষে সিদ্ধান্ত দেবে বলে সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।
বর্তমান কমিশনের মেয়াদ আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন ইভিএমে ‘ভোট করা যাবে কি না’ জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম জানান, বিধি সংশোধন ও যন্ত্রপাতি নির্মাণের উপরই পুরোটা নির্ভর করবে।
“সংসদ নির্বাচনের জন্য দু’লাখের বেশি ইভিএম-এর প্রয়োজন হবে। লাগবে ভোটার নিশ্চিতে বিশেষ যন্ত্রটিও। এছাড়া আইন-বিধিতেও সংশোধনী আনতে হবে। ইসির অনুমোদন পেলে পরবর্তী পদক্ষেপে যাব আমরা। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে স্থানীয় পর্যায়ের কোনো নির্বাচনে পরীক্ষামূলক প্রকল্প করার চেষ্টা চলবে।”
দীর্ঘমেয়াদে ‘ডিজিটাল’ পদ্ধতিতে ভোটদান চালুর ক্ষেত্রে এটা ‘এক ধাপ অগ্রগতি’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন জানান, প্রস্তাবিত পদ্ধতিটি দুই ভাগে কাজ করবে। যার প্রথমভাগে থাকবে ‘সিকিউরিটি সিস্টেম’।
“এ পদ্ধতিতে ভোটারের বায়োমেট্রিক যাচাই করা হবে। আঙুলের ছাপ জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মেলার পর নির্বাচনী কর্মকর্তা তাকে ব্যালট ইউনিটে যেতে দেবেন।
“এরপর ইভিএমে বাটন টিপে পছন্দসই প্রতীকে রায় দেবেন ভোটার। এখানেও ভোটারের পরিচিতি নিশ্চিতে আঙ্গুলের ছাপ দিতে হবে”, বলেন তিনি।
খসড়া প্রস্তাবে ‘ব্যালট ইউনিট’ স্থানান্তরের সুযোগ রাখা হয়নি বলে জানান সুলতানুজ্জামান।
“কেউ ব্যালট ইউনিট কেন্দ্র থেকে সরিয়ে নিতে চাইলে তা অকার্যকর হয়ে যাবে।”
ইভিএমে ‘দেশীয় ব্যাটারি’ ব্যবহার নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে চিঠি চালাচালি ও দ্বন্দ্ব শুরু হয় বুয়েট ও কমিশনের। বুয়েট কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ওই ব্যাটারি ব্যবহারের কারণেই ইভিএমগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না।
দেশীয় ব্যাটারি ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশন ‘চুক্তির স্বার্থ’ লঙ্ঘন করায় ত্রুটিপূর্ণ ইভিএম মেরামতে আগ্রহও দেখায়নি তারা।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের দাবি, দেশীয় ব্যাটারি ব্যবহার করে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে ইভিএমে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি।
যদিও গত বছরের ১৮ মার্চ ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম নির্বাচনের তফসিল দেওয়ার সময়ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ চার সিটি নির্বাচনের সময় ইভিএমে সমস্যা দেখা দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।