কল্যাণপুরের অষ্টম জঙ্গি গুলশানের প্রশিক্ষক রায়হান: পুলিশ

রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় নিহত নয়জনের মধ্যে অষ্টম জঙ্গির পরিচয় পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2016, 08:59 AM
Updated : 28 July 2016, 04:30 PM
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার এক সংবাদ ব্রিফিং জানান, রায়হান কবির ওরফে তারেক নামের ওই তরুণ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির ঢাকা অঞ্চলের সমন্বয়েকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। গুলশান হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিদের গাইবান্ধার চরে প্রশিক্ষণ দেন তিনি।

আশুলিয়ায় পুলিশ চেকপোস্টে তল্লাশির সময় ছুরিকাঘাতে কনস্টেবল হত্যার ঘটনাতেও রংপুরের পীরগাছার শাহজাহান কবিরের ছেলে রায়হান জড়িত ছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য।

কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কে তাজ মঞ্জিল নামের ছয় তলা একটি ভবনের পঞ্চম তলায় অভিযানে গিয়ে সোমবার রাতে হামলার মুখে পড়েন পুলিশ সদস্যরা। পরে মঙ্গলবার ভোরে সেখানে সোয়াটের বিশেষ অভিযানে নিহত হন সন্দেহভাজন নয় জঙ্গি।

মঙ্গলবার রাতে নিহত নয়জনের ছবি (রক্তাক্ত লাশের ছবি। অপ্রাপ্তবয়স্কদের দেখার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের নির্দেশনা নেওয়ার অনুরোধ করা হল) প্রকাশ করে তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে সবার কাছে তথ্য চায় পুলিশ।

তাদের মধ্যে সাতজনের আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্রে ব্যবহৃত আঙ্গুলের ছাপের মিলিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় পরিচয় প্রকাশ করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।

তারা হলেন- দিনাজপুরের আব্দুল্লাহ (২৩), পটুয়াখালীর আবু হাকিম নাইম (২৪), ঢাকার ধানমণ্ডির তাজ-উল-হক রাশিক (২৫), ঢাকার গুলশানের আকিফুজ্জামান খান (২৪), ঢাকার বসুন্ধরার সেজাদ রউফ অর্ক (২৪), সাতক্ষীরার মতিউর রহমান (২৪) এবং নোয়াখালীর জোবায়ের হোসেন (২২)।

এদের মধ্যে সেজাদ রউফ যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী। গত ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ এই যুবক গুলশানে ক্যাফেতে হামলাকারী নিবরাজ ইসলামের বন্ধু ছিলেন।

ব্রিফিংয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল বলেন, কল্যাণপুর অভিযানে নিহত জঙ্গি আকিফুজ্জামান (পিতা সাইফুজ্জামান) পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর মোনায়েম খানের নাতি। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।

অর্ক এবং রাশিকও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আর রায়হান, আব্দুল্লাহ ও নাঈম পড়াশোনা করেছেন মাদ্রাসায়।

“রায়হান কবিরের ছদ্মনাম তারেক। সে আশুলিয়ার বারুইপাড়ায় পুলিশের ওপর হামলায় জড়িত ছিল এবং পুলিশের খাতায় তার নাম লেখা ছিল তারেক বলে। তাকে পুলিশ খুঁজছিল।”

গত বছর ৪ নভেম্বর আশুলিয়ার বারুইপাড়া এলাকার একটি পুলিশ চেকপোস্টে তল্লাশির সময় ছুরিকাঘাতে এক কনস্টেবলকে হত্যা ও চারজনকে জখম করে জঙ্গিরা।

ব্রিফিংয়ে মনিরুল বলেন, “রায়হান কবির গুলশান হামলাকারীদেরও প্রশিক্ষক ছিল। তাকে আমরা তারেক নামে চিনতাম। গুলশানে হামলার আগে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের একটি চরে সাতজনকে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল, যাদের মধ্যে গুলশান হামলাকারীরাও ছিল। তাদের দুই প্রশিক্ষকের একজন ছিল রায়হান ওরফে তারেক।”

১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। পরে সামরিক বাহিনীর অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুলের দাবি এ বছরের প্রথম দিকে জেএমবির কয়েকজন সংগঠক পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার পর সংগঠনটির ঢাকা অঞ্চলের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন রায়হান ওরফে তারেক।