কল্যাণপুরে নিহত ৭ ‘জঙ্গি’ শনাক্ত

ঢাকার কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহত নয়জনের মধ্যে সাতজনকে শনাক্ত করা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2016, 02:45 PM
Updated : 28 July 2016, 03:56 PM

তাদের আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্রে ব্যবহৃত আঙ্গুলের ছাপের মিল পাওয়া যায় বলে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

নিহতরা হলেন - দিনাজপুরের আব্দুল্লাহ (২৩), পটুয়াখালীর আবু হাকিম নাইম (২৪), ঢাকার ধানমণ্ডির তাজ-উল-হক রাশিক (২৫), ঢাকার গুলশানের আকিফুজ্জামান খান (২৪), ঢাকার বসুন্ধরার সেজাদ রউফ অর্ক (২৪), সাতক্ষীরার মতিউর রহমান (২৪) এবং নোয়াখালীর জোবায়ের হোসেন (২২)।

এদের মধ্যে সেজাদ রউফ যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী। গত ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ এই যুবক গুলশানে ক্যাফেতে হামলাকারী নিবরাজ ইসলামের বন্ধু ছিলেন।

মঙ্গলবার ভোরে কল্যাণপুরের অভিযানে নয়জন নিহত হওয়ার পর রাতে তাদের ছবি (রক্তাক্ত লাশের ছবি। অপ্রাপ্তবয়স্কদের দেখার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের নির্দেশনা নেওয়ার অনুরোধ করা হল) প্রকাশ করে তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে সবার কাছে তথ্য চেয়েছিল পুলিশ।

ডিএমপি জানায়, প্রকাশিত লাশের ছবির প্রথমজন হলেন আব্দুল্লাহ। তিনি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানার ব্ল্লভপুর গ্রামের সোহরাব আলীর ছেলে।

লাশের দ্বিতীয় ছবিটি আবু হাকিম নাইমের। তিনি পটুয়াখালীর কুয়াকাটার নুরুল ইসলামের ছেলে।

তৃতীয় ছবিটি তাজ-উল-হক রাশিকের। তিনি ঢাকার ধানমণ্ডির ১১/এ নম্বর সড়কের রবিউল হকের ছেলে।

চতুর্থ ছবিটি আকিফুজ্জামান খানের। তিনি গুলশানের ১০ নম্বর সড়কের ২৫ নম্বর বাড়ির সাইফুজ্জামান খানের ছেলে।

ষষ্ঠ ছবিটি সাজাদ রউফ অর্কের। তার বাবা তৌহিদ রউফের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ৬২ পার্ক রোড, বাসা নং-৩০৪, রোড নং-১০, ব্লক-সি, ফ্ল্যাট নং-০৯, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা।

সপ্তম ছবিটি মতিয়ার রহমানের বলে পুলিশ জানিয়েছে। তিনি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ওমরপুর গ্রামের নাসিরউদ্দিন সরদারের ছেলে।

অষ্টম ছবিটি জোবায়ের হোসেনের। তিনি নোয়াখালীর সুধারাম থানার পশ্চিম মাইজদীর আবদুল্লাহ মেম্বারের বাড়ির আব্দুল কাইউমের ছেলে।

কল্যাণপুরের অভিযান শেষে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় ‘জঙ্গিদের’ লাশ

নয়টি ছবির পঞ্চম ও নবম জন এখনও অশনাক্ত অবস্থায় রয়েছে। সবগুলো লাশই ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রয়েছে।

ছবি প্রকাশের পর অষ্টম ছবিটি নিজের সন্তান সাব্বিরুল হকের বলে সন্দেহের কথা জানিয়েছিলেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ফুলগাজীপাড়ার বরুমছড়া গ্রামের আজিজুল হক।

একই ছবি নোয়াখালীর জোবায়েরের বলে তার বাবাও দাবি করেন। ডিএমপি এখন অষ্টম ছবিটি জোবায়েরের বলে নিশ্চিত করল।

এদের মধ্যে সেজাদ ঢাকার নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। তার আগে পড়তেন মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে।

দুটি বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়তেন গুলশানের ক্যাফেতে হামলার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত নিবরাজ ইসলাম। তারা দুই বন্ধু শাহবাগ থানার একটি মামলার আসামি ছিলেন।

সেজাদ গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বাসা বেরিয়ে যাওয়ার পর আর ফেরেননি জানিয়ে তার বাবা তৌহিদ রাজধানীর ভাটারা থানায় জিডি করেছিলেন।

নিবরাজও ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন বলে তার পরিবারের ভাষ্য। এরপর ১ জুলাই গুলশানের ক্যাফেতে নিহত হওয়ার পর জানা যায়, তিনি ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঝিনাইদহের একটি মেসে ছিলেন।

ওই মেসে নিবরাজের আরেক সঙ্গী আবীর রহমানও ছিলেন, যিনি ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়ায় পুলিশের উপর হামলা চালানোর পর গুলিতে নিহত হন।  

নিবরাজের মতো আবীরও নিখোঁজ ছিলেন কয়েক মাস ধরে। তাদের সঙ্গে ওই মেসে যে আটজন ছিলেন, তাদের মধ্যে সেজাদও ছিলেন বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।

কল্যাণপুরের এই বাড়ির পঞ্চম তলায় জঙ্গিরা আস্তানা গেঁড়েছিল

গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় ঘরছাড়া তরুণদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশের পর র‌্যাব নিখোঁজ তরুণ-যুবকদের যে তালিকা দেয়, তাতে ২৪ বছর বয়সী সেজাদের নাম রয়েছে।

বুধবার মর্গে লাশ শনাক্তের জন্য তৌহিদ রউফ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে যান, তার সঙ্গে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক কর্মকর্তাও ছিলেন।

তবে দুপুরে লাশ দেখে ছেলেকে শনাক্ত করতে পারেননি তৌহিদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা লাশ দেখেছি। চেহারায় পুরোপুরি মিল নেই। ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজন রয়েছে।”       

নোয়াখালীর কাইউম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধিকে বলেন, তার ছেলে জোবায়ের নোয়াখালী সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। গত ২৫ মে থেকে তিনি নিখোঁজ হলে গত ১২ জুলাই থানায় জিডি করেন তিনি।

কাইউম জানান, তার ভাস্তে বাহাদুরের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ জোবায়ের।

ছেলেকে হারানোর জন্য জামায়াতের ‘রোকন’ বাহাদুরকে দায়ী করে কাইউম বলেন, “সে আমার ছেলেকে শিবিরের রাজনীতিতে নিয়ে গিয়েছিল। তার প্ররোচনায় আমার ছেলে জঙ্গি তৎপতায় জড়িয়ে পড়ে।”

এলাকাবাসী জানায়, সৌদি আরব ও আফগানিস্তান থেকে ফিরে বাহাদুর গত কয়েক বছর ধরে জামায়াতে সক্রিয় হন। তার বাবা জয়নাল আবদিন চিহ্নিত রাজাকার ছিলেন। তাকে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা করা হয়।

অন্য যাদের নাম ডিএমপি দিয়েছে, তাদের বিস্তারিত পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।