সেজাদের বাবা ঢাকার বসুন্ধরা এলাকার বাসিন্দা তৌহিদ রউফ বুধবার মর্গে লাশ শনাক্তের জন্য যাওয়ার সময় তার সঙ্গে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক কর্মকর্তাও ছিলেন।
বাংলাদেশে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের একজনের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব থাকার বিষয়টি প্রকাশের পর তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহতদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি আমেরিকান ছিলেন। এখন বিপরীত দিকেও একই ধরনের একজনকে পাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
তৌহিদ রউফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার ছেলে শেজাদের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব রয়েছে।
তবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়।
তৌহিদ রউফের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শেজাদ রউফের জন্ম বাংলাদেশেই। তবে ১৯৯৯ সালে তারা পরিবারের সবাই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হন।
ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, তৌহিদ রউফ একজন মিলিটারি ঠিকাদার ও অস্ত্র সরবরাহকারী।
তৌহিদের বাবা অর্থাৎ সেজাদের দাদা সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রউফ এক সময় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ছিলেন।
তার দুজন সহকর্মী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পাকিস্তান প্রত্যাগত আবদুর রউফ ১৯৭৩ সালে ডিএফআই ( বর্তমানে ডিজিএফআই) পরিচালকের দায়িত্ব পান। মেয়াদ শেষের পর ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তার দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা ছিল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদের কাছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় তা ঠেকাতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন ব্রিগেডিয়ার জামিল।
ব্রিগেডিয়ার রউফ অবসর নেওয়ার সময় জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থায় (এনএসআই) কর্মরত ছিলেন বলে তার তৎকালীন ওই দুই সহকর্মী জানান।
ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, তৌহিদ রউফ ছাড়া তার পরিবারের সবাই ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর দেশটির নাগরিকত্ব নেন এবং শিকাগো থেকে স্যান ফ্রান্সিসকোতে গিয়ে বসবাস শুরু করেন।
শেজাদ রউফের কৈশোরের অনেকটা সময় কাটে ইলিনয় ও ক্যালিফোর্নিয়ায়। পরে তার মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তাদের পরিবার ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসে।
২০১০ সালে ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে পাস করে সেজাদ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সেজাদ আর ফেরেননি জানিয়ে তার বাবা তৌহিদ রাজধানীর ভাটারা থানায় জিডি করেছিলেন।
মঙ্গলবার কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহত নয়জনের ছবি (রক্তাক্ত লাশের ছবি। অপ্রাপ্তবয়স্কদের দেখার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের নির্দেশনা নেওয়ার অনুরোধ করা হল) পুলিশ প্রকাশ করার পর তা দেখে এক যুবককে নিজের ছেলে বলে ধারণা করলেও পুরোপুরি নিশ্চিত নন তৌহিদ।
ডিএমপির উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, “তৌহিদ রউফ আমাদের কাছে এসে বলেছে-‘সেজাদ আমার ছেলে, আমরা ছবি দেখে ধারণা করছি’।”
ময়নাতদন্তের পর নয়টি লাশই ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। সন্তানের লাশ শনাক্তে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় তৌহিদকে।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, “উনি এসেছেন, ডেডবডি দেখেছেন। নাকে তিল এবং কানটা একটু বাঁকা তার ছেলের, এই লাশেরও তা রয়েছে। তবে সন্দেহ করেছেন যে (ছেলেকে) শুকনা মনে হচ্ছে।”
তৌহিদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা লাশ দেখেছি। চেহারায় পুরোপুরি মিল নেই। ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজন রয়েছে।”
“তাকে (তৌহিদ) বলে দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে,” বলেন ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল।
রাতে ডিএমপির পক্ষ থেকে সেজাদসহ নিহত সাতজনের পরিচয় প্রকাশ করে জাতীয় পরিচয়পত্র ও আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার কথা জানানো হয়।
শেজাদ গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালানোর পর কমান্ডো অভিযানে নিহত নিবরাজ ইসলামের বন্ধু। ঢাকার নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আগে তারা দুজনই মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে পড়তেন। শাহবাগ থানার একটি মামলায়ও দুজনই আসামি ছিলেন।
নিবরাজও ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন বলে তার পরিবারের ভাষ্য। এরপর ১ জুলাই গুলশানের ক্যাফেতে নিহত হওয়ার পর জানা যায়, তিনি ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঝিনাইদহের একটি মেসে ছিলেন।
ওই মেসে নিবরাজের আরেক সঙ্গী আবীর রহমানও ছিলেন, যিনি ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়ায় পুলিশের উপর হামলা চালানোর পর গুলিতে নিহত হন।
নিবরাজের মতো আবীরও নিখোঁজ ছিলেন কয়েক মাস ধরে। তাদের সঙ্গে ওই মেসে যে আটজন ছিলেন, তাদের মধ্যে সেজাদও ছিলেন বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় ঘরছাড়া তরুণদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশের পর র্যাব নিখোঁজ তরুণ-যুবকদের যে তালিকা দিয়েছে, তাতে ২৪ বছর বয়সী সেজাদের নাম রয়েছে।