নাম এসেছে ৩ জনের, ছবি নিয়ে বিপত্তি

ঢাকার কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় নিহতদের মধ্যে নিজেদের সন্তান রয়েছে বলে ধারণা করেছে তিনটি পরিবার, তবে এর মধ্যে একটি ছবির যুবকের দাবিদার দুই পরিবার।

নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম ব্যুরো ও নোয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2016, 11:04 AM
Updated : 27 July 2016, 02:47 PM

মঙ্গলবার ভোরে কল্যাণপুরের অভিযানে নয়জন নিহত হওয়ার পর রাতে তাদের ছবি (রক্তাক্ত লাশের ছবি। অপ্রাপ্তবয়স্কদের দেখার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের নির্দেশনা নেওয়ার অনুরোধ করা হল) প্রকাশ করে শনাক্ত করতে সবার কাছে তথ্য চায় পুলিশ।

এই নয়জনের মধ্যে একজন সেজাদ রউফ অর্ক ওরফে মরক্কো বলে তার বাবা তৌহিদ ধারণা করছেন, যদিও তিনি নিশ্চিত নন। ছবির ষষ্ঠ যুবকটি সেজাদ বলে মনে করা হচ্ছে।

ডিএমপির উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, “তৌহিদ রউফ আমাদের কাছে এসে বলেছে-‘সেজাদ আমার ছেলে, আমরা ছবি দেখে ধারণা করছি’।”

সকালে ময়নাতদন্তের পর নয়টি লাশই ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রয়েছে। সন্তানের লাশ শনাক্তে সেখানে  গিয়ে যাওয়া হয় তৌহিদকে।

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, “উনি এসেছেন, ডেডবডি দেখেছেন। নাকে তিল এবং কানটা একটু বাঁকা তার ছেলের, এই লাশেরও তা রয়েছে। তবে সন্দেহ করেছেন যে (ছেলেকে) শুকনা মনে হচ্ছে।”

তৌহিদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা লাশ দেখেছি। চেহারায় পুরোপুরি মিল নেই। ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজন রয়েছে।”

“তাকে (তৌহিদ) বলে দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে,” বলেন ফরেসনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল।

সেজাদ রউফ অর্ক ওরফে মরক্কো

সেজাদ গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালানোর পর কমান্ডো অভিযানে নিহত নিবরাজ ইসলামের বন্ধু। তারা দুজনই ঢাকার নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে পড়েছিলেন একসঙ্গে। শাহবাগ থানার একটি মামলায়ও দুজনই আসামি ছিলেন।   

রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার বাড়ি থেকে সেজাদ গত ৬ ফেব্রুয়ারি বেরিয়ে যাওয়ার পর আর ফেরেননি জানিয়ে তার বাবা ভাটারা থানায় জিডি করেছিলেন।

নিবরাজও ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন বলে তার পরিবারের ভাষ্য। এরপর ১ জুলাই গুলশানের ক্যাফেতে নিহত হওয়ার পর জানা যায়, তিনি ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঝিনাইদহের একটি মেসে ছিলেন।

ওই মেসে নিবরাজের আরেক সঙ্গী আবীর রহমানও ছিলেন, যিনি ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়ায় পুলিশের উপর হামলা চালানোর পর গুলিতে নিহত হন।  

নিবরাজের মতো আবীরও নিখোঁজ ছিলেন কয়েক মাস ধরে। তাদের সঙ্গে ওই মেসে যে আটজন ছিলেন, তাদের মধ্যে সেজাদও ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

সেজাদ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ঢাকা মেডিকেলে লাশ শনাক্তে যাওয়ার সময় তার বাবার সঙ্গে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একজন কর্মকর্তাও ছিলেন।

গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর নিখোঁজ তরুণ-যুবকদের যে তালিকা র‌্যাব দিয়েছিল, তাতে সেজাদের নামও ছিল।

কল্যাণপুরে নিহতদের ছবির অষ্টম যুবককে নিজেদের সন্তান বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর দুটি পরিবার।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ফুলগাজীপাড়ার বরুমছড়া গ্রামের আজিজুল হক দাবি করছেন, নিহতদের ছবির অষ্টম যুবক তার ছেলে সাব্বিরুল হক কণিক।

বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ার বাসিন্দা আজিজুল জানান, তার ছেলে চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সাব্বির গত ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন।

ছবি দেখে তিনি ছেলের বিষয়ে ‘অনেকটাই নিশ্চিত’বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগে পরিদর্শক আজিজুল।

সাব্বিরুল হক কণিক

ছেলে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে ঘর ছেড়েছে ধারণা করলেও ‘ক্ষোভে-দুঃখে’ থানায় জিডি কিংবা পুলিশের শরণ নেননি বলে জানান আনোয়ারার বরুমছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল।

যে ছবির যুবককে সাব্বির বলছেন তার বাবা আজিজুল, সেই ছবির যুবককে নিজের সন্তান জোবায়ের হোসেন বলে দাবি করছেন নোয়াখালীর সদর উপজেলার পশ্চিম মাইজদীর আব্দুল কাইউম।

জোবায়ের নোয়াখালী সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। গত ২৫ মে থেকে তিনি নিখোঁজ জানিয়ে গত ১২ জুলাই থানায় জিডি করে তার পরিবার।

পুলিশ খবর দেওয়ার পর সুধারাম থানায় গিয়ে নিহত ৯ জনের ছবি দেখে একজনকে নিজের ছেলে জোবায়ের বলে দাবি করেন কাইউম। এরপর তিনি ঢাকায় রওনা হন।

কাইউম জানান, গত ২৫ মে তার ভাস্তে বাহাদুরের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ জোবায়ের।

ছেলেকে হারানোর জন্য জামায়াতের ‘রোকন’ বাহাদুরকে দায়ী করে কাইউম বলেন, “সে আমার ছেলেকে শিবিরের রাজনীতিতে নিয়ে গিয়েছিল। তার প্ররোচনায় আমার ছেলে জঙ্গি তৎপতায় জড়িয়ে পড়ে।”

এলাকাবাসী জানায়, সৌদি আরব ও আফগানিস্তান থেকে ফিরে বাহাদুর গত কয়েক বছর দরে জামায়াতে সক্রিয় হন। তার বাবা জয়নাল আবদিন চিহ্নিত রাজাকার ছিলেন। তাকে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা করা হয়।

নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জোবায়েরকে জঙ্গি সন্দেহে পুলিশ খুঁজছিল। তার চাচাত ভাই বাহাদুরের বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”

নিহতদের মধ্যে সন্তান রয়েছে বলে যারা দাবি করছেন, তাদের ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে বলে জানান ডিএমপির উপকমিশনার মাসুদুর রহমান।

“তারা মৃতদেহ দেখে পরিচয় নিশ্চিত করবে। যদি তাতে নিশ্চিত করা না যায় তাহলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় বের করা হবে।”