সিরিয়া যাওয়ার কথা ছিল জঙ্গি আস্তানা থেকে আটক হাসানের

রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার মো. রাকিবুল হাসান রিগেনের সিরিয়া যাওয়ার কথা ছিল।

কামাল তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2016, 10:25 AM
Updated : 3 Oct 2016, 03:27 PM

এক বছর আগে বগুড়ার বাড়ি ছেড়ে আসা হাসানকে মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে রাজধানীর ওই বাড়ি থেকে আহত অবস্থায় আটক করা হয়।

কল্যাণপুরের যে মেসটিতে অভিযানে নয় জঙ্গি নিহত হন বলে পুলিশ জানিয়েছে, সেখানে বাবুর্চির কাজ করতেন বলে হাসান দাবি করেছেন।

তাজ মঞ্জিলে পুলিশের অভিযান শুরুর ঘণ্টাখানেক পর রাত পৌনে ২টার দিকে হাসানকে (২৫) আটকের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতোলে নিয়ে  যায়  পুলিশ।

মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে ওয়ার্ডে গিয়ে পুলিশ বেষ্টিত অবস্থায় হাসানকে শয্যায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তার পায়ে ও মাথায় জখমের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন  প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছেলেন তিনি নিচু স্বরে।

হাসান পুলিশকে বলছিলেন, কল্যাণপুরের ওই  ফ্ল্যাটে এক মাস ধরে রয়েছেন তিনি। শফিক নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি সেখানে ঢোকেন। ওই ফ্ল্যাটে আরও ১০ জন থাকতেন।

সোয়াটের নেতৃত্বে এই অভিযানে মোট নয়জন নিহত হন, তারা সবাই জেএমবির সদস্য বলে ধারণা করছেন পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক।

হাসান বলেন, ওই ফ্ল্যাটে তিনি শুধু রান্নার কাজ করতেন।

পুলিশের অভিযান

পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথোপকথনের এক পর্যায়ে হাসান বলেন, তার সিরিয়া যাওয়ার কথা ছিল।

আইএসে যোগ দিতে বিশ্বের অনেক দেশ থেকে অনেকের সিরিয়া যাওয়ার নজির রয়েছে। বাংলাদেশ থেকেও কয়েকজন গেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

হাসানের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে এসআই শাহজাহান বুঝতে পারেন আশপাশে সাংবাদিকও রয়েছেন। তখন পুলিশ সদস্যরা অন্য সবাইকে ওয়ার্ড থেকে বের করে দেন।

হাসাপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ফটকেও পুলিশ অবস্থান নেয়। ক্যামেরা নিয়ে কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

হাসানের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে উপস্থিত একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম কথা বলছে। একবার বলে সে পড়াশোনা করে, আবার বলছে, আমি পড়াশোনা করি না।

“একবার বলে জেহাদ করতে সিরিয়া যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার চুপ হয়ে যায়।”

গত ছয় মাস ধরে বাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না থাকার কথা হাসান জানিয়েছেন বলে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান।

তবে হাসানের মা রোকেয়া আক্তার দাবি করেছেন, এক বছর আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ তার ১৮ বছর বয়সী এই ছেলে।

রাকিবুল হাসান

বগুড়া সদর উপজেলার জামিলনগরের বাসিন্দা হাসানের মা নন্দীগ্রাম উপজেলার বিজরুল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবিকা। তার বাবা রেজাউল করিম এক বছর আগে মারা যান।

রোকেয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বগুড়া জেলা প্রতিনিধিকে বলেন, গত বছর ২৬ জুলাই সকালে কোচিং সেন্টারে যেতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি হাসান। তার মোবাইল ফোনও তখন থেকে বন্ধ। এর পরদিন তিনি ছেলের সন্ধানে থানায় জিডি করেছিলেন।

তবে গুলশান ও শোলাকিয়ায় ঘরছাড়া তরুণদের জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসার পর র‌্যাবের দেওয়া নিখোঁজের তালিকায় হাসানকে পাওয়া যায়নি।

হাসান গতবছর বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর বগুড়ার জলেশ্বরী এলাকায় ইসলামী ছাত্রশিবির পরিচালিত রেটিনা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছিলেন বলে পরিবারের ভাষ্য।

সকাল ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে হাসানকে দেখতে ঢোকেন ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার।

হাসানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তার (হাসান) সঙ্গে কথা বলিনি। যেহেতু সে আমাদের এরিয়ায় চিকিৎসা নিচ্ছে, তাই নিরাপত্তার বিষয়টি দেখাতে এসেছি।”

হাসানের বিষয়ে চিকিৎসক কিংবা সেবিকারা কেউ মুখ খুলছেন না। তিনি গুলিবিদ্ধ কি না, জানতে চাইলেও কেউ কথা বলেননি।

হাসপাতালে এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গুলিতে আহত হলে সাধারণত এই ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়ে থাকে।”