আবাসিকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদে অভিযান

আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধে অভিযান শুরু করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ভ্রাম্যমাণ আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2016, 08:12 AM
Updated : 25 July 2016, 12:09 PM

সোমবার বেলা পৌনে ১২টায় উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টর থেকে অভিযান পরিচালনা করেন রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার জাকির হোসেন।

দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ওই এলাকার চারটি বাড়ির গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সেগুলোতে থাকা অননুমোদিত ৯টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সিলগালা দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অভিযান শুরু হয় ৪ নম্বর সেক্টরের শাহজালাল অ্যাভিনিউয়ের আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শেলটেকের প্লাটিনাম রেসিডেন্স দিয়ে, যেখানে আবাসিক ভবনে অবৈধভাবে হোটেল পরিচালনা করা হচ্ছিল।

হোটেল পরিচালনার জন্য রাজউকের অনুমতি না থাকায় সোমবার বিকাল ৪টার মধ্যে অতিথিদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশাপাশি ভবনটির বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।

এই ভবনের নিচতলায় গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় অভ্যর্থনা ডেস্ক, উন্মুক্ত স্থানে সিঁড়িঘর, নিরাপত্তা কক্ষ ও রান্নাঘর তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় রেস্তোরাঁ এবং তৃতীয় থেকে ১০ম তলা পর্যন্ত আবাসিক হোটেল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।

পরে শাহজালাল অ্যাভিনিউয়ের ৪০ নম্বর বাড়িতে চলা বাকারু রেস্তোরাঁর দিকে যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। টের পেয়ে বাইরে প্রধান ফটকে তালা দিয়ে পালিয়ে যায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেখানে দেয়ালে সেঁটে দেওয়া হয় ‘রেস্টুরেন্ট স্থায়ী বন্ধ’।

ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকে রাজউকের কর্মীরা ওই ভবনটিরও বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এই ভবনে রেস্তোরাঁ ছাড়াও পার্টি সেন্টার ও এডভান্স হোটেল ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে।

পরে একই সড়কের আবাসিক ভবনগুলিতে থাকা এভারেস্ট রেস্তোরাঁ, স্পাইসি বাইটস, অপি’স ডেন্টাল ক্লিনিক, কুমিল্লা রসমালাই-সুইটস অ্যান্ড বেকারি, নান্না বিরিয়ানি, মেগা ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও লৌহজং টায়ার অ্যান্ড ব্যাটারি নামের প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়।

উচ্ছেদ অভিযান চলার সময় ঘটনাস্থলে জড়ো হওয়া বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক ও কর্মীরা অভিযোগ করেন, উচ্ছেদ অভিযান চালানোর আগে তাদের সময় দেওয়া হয়নি।

প্লাটিনাম রেসিডেন্সের প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক গোলাম সারওয়ার হোসেন বলেন, “আমরা এ ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। বিদেশি অতিথিদের এত অল্প সময়ের নোটিসে বের করে দেয়া ঠিক হচ্ছে না। এতে আমাদের পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হবে।”

উচ্ছেদ অভিযান শুরুর আগে আরেকটু সময় দেওয়া প্রয়োজন ছিল বলে জানান এভারেস্ট রেস্তোরাঁর মালিক আমিমুল এহসান মামুন।

“আমরা এখানে ২০০৫ সাল থেকে ব্যবসা করি। এতোদিন কেউ কিছু বলেনি। গুলশানের ঘটনার পর হঠাৎ করেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলো। এই সড়ক দিয়ে ২৪ ঘণ্টা বাস-ট্রাক চলে। তাহলে এটা আবাসিক এলাকা হলো কি করে?”

চাকরি হারানোর শঙ্কা প্রকাশ করে বাকারু রেস্তোরাঁর কর্মী মোশাররফ করিম রনি বলেন, “হোটেল ব্যবস্থাপনায় পড়ার পাশপাশি এখানে চাকরি করি আমি। এছাড়া বাড়িতেও টাকা দিতে হয়। চাকরি চলে গেলে খাব কি, বাসাভাড়া দেব কিভাবে, বাড়িতেই টাকা পাঠাবো কোত্থেকে?”

আগে থেকে জানানো হয়নি এমন অভিযোগকে অবান্তর হিসেবে বর্ণনা করে রাজউকের ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, “এটা কমন অভিযোগ। রাজধানীতে অননুমোদিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা হবে- এ ব্যাপারে আগেই গণমাধ্যমে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।

“এখানে আলাদা করে কাউকে নোটিস দেওয়ার দরকার নেই।”

উত্তরা এলাকায় হোটেল, রেস্তোরাঁ ও স্কুল-কলেজসহ অননুমোদিত ৪৩৯টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে জানান রাজউকের অথরাইজড অফিসার আশরাফুল ইসলাম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের তালিকা তৈরির কাজ এখনও চলছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।”

গুলশান ও ধানমণ্ডিতে অভিযান সোমবারও হয়নি

পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে না পাওয়ায় রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা ও ধানমণ্ডি এলাকায় সোমবারও উচ্ছেদ অভিযান শুরু করতে পারেনি রাজউক।

রাজউকের পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট খন্দকার অলিউর রহমান বিডিনিউজকে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ পাওয়া গেছে, আগামীকাল গুলশান এলাকায় অভিযান শুরু করব।”

ধানমণ্ডি এলাকার উচ্ছেদ অভিযানের দায়িত্বে থাকা রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাসির উদ্দিন বলেন, “গতকাল থেকেই উচ্ছেদ অভিযান শুরুর কথা ছিল। আমরাও সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। পুলিশ না আসায় তা করতে পারিনি।

“২৭ তারিখ (বুধবার) পুলিশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ওইদিন অভিযান শুরু করব।”

রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদে রোববার থেকে অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছিল রাজউক। তবে অভিযান পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ না পাওয়ায় তা হয়নি।

উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বাহিনী মোতায়েনের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার বরাবর ১৮ জুলাই চিঠি পাঠানো হয়েছিল।

রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) দুলাল কুষ্ণ সাহা স্বাক্ষরিত চিঠিতে, ২৪ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ২১ কার্যদিবস প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ১ প্লাটুন সশস্ত্র পুলিশ ও কিছুসংখ্যক নারী পুলিশ সদস্য মোতায়েনের অনুরোধ জানানো হয়।