শনিবার রাজধানীতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে না পড়ে সে বিষয়ে শিক্ষকরা সবচে বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন।
“শিক্ষকদের দায়িত্বের কথাও মনে রাখতে হবে। কিছু শিক্ষক নামধারী লোক আমাদের ছেলে-মেয়েদের বিপথগামী করছে। এদের খুঁজে বের করবেন।”
সম্প্রতি দেশে জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিউট মিলনায়তনে ইউজিসি আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী।
সব শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতে এবং তাদের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হতে শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান নাহিদ।
শিক্ষা পরিবারের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস সারাদেশের মানুষ ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর মধ্যে সাহস সঞ্চার করবে বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আমরা এ ধরনের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে চাই। শুধু হত্যা করা হবে তাই না, আমাদের ছেলে-মেয়েদের ব্যবহার করে এ ধরনের জীবন সংহার করা হবে, সেটা আমরা চাই না।
“সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সজাগ করব, সচেতন করব এবং সার্বিকভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করব। সকল পর্যায়ে এটা পৌঁছাবে। আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি, ৩০ তারিখের মধ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমরা এভাবে সরাসরি কথা বলব।”
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাজীবন স্বাভাবিক রাখার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “শিক্ষা কার্যক্রমে যদি শিক্ষার্থীদের জড়িত রাখতে পারি, তাহলে অন্য যে কোনো কিছু আমরা মোকাবেলা করতে পারব। এদিক থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উদ্যোগী হয়ে পদক্ষেপ নিবেন।”
“প্রায় দুই বছর আগে থেকে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তদন্ত করে বিভিন্ন বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেছি। শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়াতে সে বিষয়েও বলা হয়েছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পদক্ষেপ না নেওয়ায় এখন তাদের নাম ঘুরেফিরে আসছে।”
তিনি বলেন, “এখন থেকে আমরা আর তদন্ত করে থেমে থাকব না। এসব কর্মকাণ্ড নিয়মিত মনিটর করব, পরিদর্শন করব, যোগাযোগ রাখব এবং সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বাবা-মার কাছ থেকেও যেন ছেলে-মেয়েরা স্নেহ-মমতা পায়। পরিবারও তাদের সন্তানদের বিষয়ে সবচেয়ে ভাল বলতে পারবে।
“বক্তৃতা দিয়ে কাউকে ফিরিয়ে আনা যাবে না। ব্যক্তিগত যোগাযোগে তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।”
‘প্রকৃত ইসলামের’ কথা তুলে ধরতে আলেম সমাজের প্রতি আহ্বান জানান নাহিদ।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল অনুষ্ঠানে বলেন, “নিবরাজ ইসলাম নামাজ-রোজার সঙ্গে ছিল না, খেলাধুলা ও যোগাযোগের মধ্যে ছিল। কীভাবে সে ইসলামের নামে ভ্রান্ত হয়েছে, কারা তাকে ভ্রান্ত কাজে ব্যবহার করল তাদের খুঁজে বের করতে হবে।”
শিক্ষক নিয়োগের সময় শিবিরকর্মী বা স্বাধীনতাবিরোধী কেউ যেন নিয়োগ না পায় সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, “অনেক সময়ই শিবিরের লোকজনকে নিয়োগ দিতে সুপারিশ নিয়ে আসেন সরকারি দলের নেতা–কর্মীরা। নিয়োগের সময় তাদের আদর্শের বিষয়ে খোঁজ-খবর করাটা জরুরি।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, “যারা জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে তাদের বয়স ১৮ বছর বা তার কাছাকাছি। তার মানে তারা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে জঙ্গি হয়ে যাচ্ছে না। আগে থেকে জঙ্গিবাদী মানসিকতা লালন করে আসছে। এ কারণে স্কুল-কলেজ পর্যায়েও মনোযোগ নিবদ্ধ করা দরকার।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান বলেন, “আমাদের সন্তানরা বিপথে চলে যাচ্ছে। আমরা শিক্ষকরা যদি এক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ না থাকি তাহলে তারা কার কাছে যাবে? আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে এবং তাদেরকে সেভাবে দেখাশোনা করলে তারা আমাদের অমান্য করে কোথাও যেতে পারবে না।”
সভায় অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোজাম্মেল হক খান, শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আলী আকবর, বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আলা উদ্দিন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইমামুল হক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মিজান উদ্দিন বক্তব্য দেন।