র‌্যাবের নিখোঁজ তালিকার কয়েকজনের সন্ধান

সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলায় ঘরছাড়া তরুণদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশের পর সারাদেশে নিখোঁজ আড়াই শতাধিক ব্যক্তির যে তালিকা র‌্যাব দিয়েছে, তার মধ্যে একজন কারাগারে, একজন কর্মস্থলে এবং আরও আটজন নিখোঁজ হলেও পরে উদ্ধার হয়েছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2016, 01:26 PM
Updated : 20 July 2016, 01:26 PM

মঙ্গলবার র‌্যাবের দেওয়া ওই তালিকায় ২১৫ নম্বর ক্রমিকে থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. রহমতুল্লাহ রাজশাহীর কারাগারে রয়েছেন বলে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে তালিকার ১ নম্বর ক্রমিকে থাকা বগুড়ার ধুনট উপজেলার সাইদুল ইসলাম ঢাকায় তার কর্মস্থলে রয়েছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

তালিকায় থাকা আটজন ফেনীতে নিখোঁজ হওয়ার পর থানায় জিডি হলেও পরে তাদের উদ্ধার করা হয় বলে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রহমতুল্লাহ নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজলোর মাগুরা গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে।

রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল সাদিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত এপ্রিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের পর ১৭ মে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রহমতুল্লাহকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

“এর পর তাকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। বর্তমানে সে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে,” বলেন পুলিশ কর্মকর্তা সাদিক, যিনি অধ্যাপক রেজাউল হত্যামামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্বেও রয়েছেন।

তবে গত ১৪ মে রাতে নগরীর মতিহার থানায় রহমতুল্লাহর নিখোঁজ হওয়ার তথ্য জানিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নুরুল আলম।

জিডিতে তিনি বলেছিলেন, ১৩ মে সন্ধ্যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অসুস্থ এক স্বজনকে দেখতে যাওয়ার কথা বলে হল থেকে বের হয়ে যান রহমতুল্লাহ। রাতে তিনি আর হলে ফেরেননি। এর পর থেকে তার মোবাইল ফোনও বন্ধ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের ১০৭ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী রহমতুল্লাহকে নিয়ে জিডি দায়ের করার তিন দিন পর ১৭ মে শিক্ষক রেজাউল হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানাতে গিয়ে তৎকালীন মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন এই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার মাধবডাঙ্গার মৃত হায়দার আলীর ছেলে সাইদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্থানীয় সন্ত্রাসীরা তাকে ধরে নিয়ে গেলে গত ১৪ জুন তার স্ত্রী হোসনে আরা বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। তবে দুদিন পরেই সন্ত্রাসীরা তাকে ছেড়ে দেয়।

“খবর পেয়ে বনানী থানায় গিয়ে আজ সাধারণ ডায়েরি প্রত্যাহার করে নেই। আমি এখনও আমার কর্মস্থল পল্টনের ব্যাংক এশিয়ায় পিয়ন হিসেবে কর্মরত আছি,” বলেন তিনি।

ধুনট থানার ওসি মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, র‌্যাবের নিখোঁজের তালিকায় থাকা সাইদুলের অবস্থান তারা জানতে পেরেছেন।

বগুড়ার নিখোঁজদের তালিকায় গাবতলী থানার তেলিহারা গ্রামের সুজন নামে একটি নাম রয়েছে। তিনি ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ থেকে নিখোঁজ বলে তালিকায় জানানো হয়।

গাবতলী থানার ওসি শাহীদ মাহমুদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুজন নামের ১২টি পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কেউ নিখোঁজ নেই। তারপরে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”

ওই তালিকায় দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থানার আজিমিলন গ্রামের আকবর হোসেন ঢালির ছেলে সিয়াম (১৮) এর নাম রয়েছে।

বলা হয়েছে, তিনি বগুড়ার শাজাহানপুরে উত্তর শাকপালার বাইতুর মামুর মসজিদের পাশে আব্দুর রউফ খন্দকারের বাসায় ভাড়া থেকে বগুড়া শাহ সুলতান কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর থেকে তিনি নিখোঁজ।

শাহজাহানপুর থানার ওসি মাসুদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনও আমরা সিয়াম নামের কারও সন্ধান পাইনি। আমরা চারিদিকে খোঁজ-খবর রাখছি।”

র‌্যাবের তালিকায় ফেনীতে নিখোঁজ ১১ জনের মধ্যে আটজনকে নিয়ে ফেনী মডেল থানায় জিডি হয়েছিল। তার মধ্যে সাতজনই উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী মডেল থানার ওসি মাহবুব মোর্শেদ।

তারা হলেন- ৯৯ নম্বর ক্রমিকে থাকা সাতসতি গ্রামের মো. রুহুল আমিনের ছেলে মো. সাখাওয়াৎ হোসেন (১৮), ১০২ নম্বর ক্রমিকে থাকা লালপুল কাজি বাড়ির কাজি মতিউল ইসলামের ছেলে কাজি মহিবুল ইসলাম (৩৪), ১০৩ নম্বর ক্রমিকে থাকা ফুলগাজী উপজেলার আমজাদ হাট ইউনিয়নের দক্ষিণ ধর্মপুর গ্রামের নুরুল আমিনের ছেলে ওমর ফারুক (২৫), ১০৪ নম্বর ক্রমিকে থাকা কুমিল্লার লাঙ্গলকোট থানার বিরুলি গ্রামের মো. ইউসুফের ছেলে মো. ইসরাফিল (গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেনীর মিজান রোড থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন), ১০৫ নম্বর ক্রমিকে থাকা রাজশাহীর চারঘাট এলাকার মো. জিল্লুর রহমানের ছেলে আশিক (গত ১ মার্চ ফেনীর ফতেহপুর থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন),  ১০৭ নম্বর ক্রমিকে থাকা পরশুরাম উপজেলার সাত কুচিয়া গ্রামের আব্দুল লতিফ ভুইয়ার ছেলে তাইফুল ইসলাম, ১০৮ নম্বর ক্রমিকে থাকা ফেনী সদরের উত্তর খানের বাড়ির আব্দুর রউফের ছেলে রেজাউর রহমান রাজু।

তারা কোথায় আছেন- জানতে চাইলে ওসি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হয়ত তাদের বাড়ি কিংবা কর্মস্থলে আছেন।”  

র‌্যাবের তালিকায় ২১০ নম্বর ক্রমিকে থাকা ফেনীর পরশুরাম উপজেলার সুবার বাজার ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের মো. ফোরকান চৌধুরী উদ্ধার হয়ে বর্তমানে বাড়িতে রয়েছেন বলে পরশুরাম থানার ওসি আবুল কাশেম জানিয়েছেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বুধবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আসলে নিখোঁজের এই তালিকা তৈরি করেছি বিভিন্ন থানা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে।

“এখন যদি কেউ ফেরত আসে কিংবা কারও সন্ধান পাওয়া যায়, তা জেনে আমরা সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করে তালিকা হালনাগাদ করব।”

 

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক কামাল তালুকদার, ফেনী প্রতিনিধি নাজমুল হক শামীম, রাজশাহী প্রতিনিধি বদরুল হাসান লিটন ও বগুড়া প্রতিনিধি জিয়া শাহীন]