‘বিপথগামীদের’ খবর জানা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

গুলশানে জঙ্গি হামলার পর যে সব তরুণ নিখোঁজ বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের অবস্থান শনাক্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2016, 01:58 PM
Updated : 17 July 2016, 06:51 PM

ঘরছাড়া এই তরুণ-যুবকদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, “আমাদের কিন্তু সব জানা আছে। কে কোথায় অবস্থান করছে, আমাদের সব জানা আছে।”

শিক্ষিত তরুণ-যুবকদের জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়ার তথ্য প্রকাশের প্রেক্ষাপটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে রোববার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এক মতবিনিময় সভায় একথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

গত ১ জুন গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী যুবকদের অন্তত চারজন পরিবারের কাছে নিখোঁজ ছিলেন বলে পরে তথ্য প্রকাশ হয়। এর ছয় দিনের মধ্যে শোলাকিয়ায় হামলাকারী তরুণদের একজনও নিখোঁজ ছিলেন বলে তার পরিবার জানায়।

এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ আরও ১০ যুবকের ছবি সরবরাহ করা হয়, যারা জঙ্গিবাদী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েছেন বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের।

ওই তরুণদের মধ্যে একজন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী, একজন কানাডা প্রবাসী, একজন জাপান প্রবাসী। একজন আইএসে যোগ দিতে ইরাক যাওয়ার কথা বলেছিলেন বলে তার পরিবার জানায়। বাকিদের বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ পায়নি এখনও।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমি আহ্বান করছি এই বিপথগামী ছেলেরা যেন ফিরে আসে। আমরা কিন্তু কঠোর হতে চাই না। আমরা চাই, তারা সেই সমস্ত কার্যকলাপ বন্ধ করুক।”

এই সব তরুণ-যুবকদের বিরুদ্ধে আইনের বাইরে গিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার পরিণতি তুলে ধরতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এই পাঁচজনের (গুলশানে হামলাকারী) পিতা-মাতা ঘৃণা-ক্ষোভে লজ্জায় মৃতদেহও নিতে আসেনি।”

মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার এই বিষয়টি নিজেদেরও অজানা ছিল বলে স্বীকারোক্তি ফুটে ওঠে আসাদুজ্জামান কামালের কথায়।  

“আমরা প্রথম লক্ষ্য করতাম মাদ্রাসা। বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসা। ছোট ছোট কওমির মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের যারা কিছু বুঝত না, তাদের ব্যবহার করত জঙ্গিরা। তাদের যখন বিচার করলাম, শক্ত হলাম, এখন সেই দৃশ্য দেখলাম পরিবর্তন হয়ে অন্য জায়গায় চলে আসছে।”

তরুণ-যুবকদের জঙ্গিবাদে প্ররোচিত করার ক্ষেত্রে ‘মস্তিষ্ক ধোলাই’র পাশাপাশি মাদকের ব্যবহারও হচ্ছে কি না, তা যাচাই করে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

‘হামলার তথ্য ছিল’

গত দেড় বছরে জঙ্গি কায়দায় লেখক, প্রকাশক, অধ্যাপক, বিদেশিসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের উপর হামলার পর গুলশানে বড় ধরনের এই হামলার ক্ষেত্রে গোয়েন্দা ব্যর্থতার দিকে অভিযোগের আঙুল উঠলেও তা মানতে নারাজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।  

মন্ত্রী বলেন, “আমাদের কাছে গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল যে একটা কিছু হতে যাচ্ছে, হতে পারে গুলশান এলাকায়। আমরা নানানভাবে তৈরি ছিলাম।

“যখন গুলশানে রেস্টুরেন্টে ঘটনাটি ঘটেছে, তিন মিনিটের মধ্যে আমাদের পুলিশ কর্মকর্তা ফারুক সেখানে উপস্থিত হলেন। সে গুলিবিদ্ধ হয়ে পুলিশ কমিশনারকে মেসেজ দিলেন। পুলিশ কমিশনার যে যেখানে আছে-সমস্ত পুলিশকে সেখানে (গুলশানের ঘটনাস্থল) যেতে বললেন।”

“সেইদিন পুলিশ বাহিনী তৈরি ছিল, ভেতরের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করাসহ সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।”

গুলশানের পর শোলাকিয়ায় হামলার তথ্য পেয়ে গোয়েন্দারা সতর্ক থাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে দেশের প্রধান ঈদ জামাতে নাশকতার পরিকল্পনা ঠেকানো গেছে বলে দাবি করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

“আমি কথা বাড়াতে চাই না। আমি শুধু এটুকু বলতে চাই আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে যাচ্ছে। তারা দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন। জীবনবাজি রেখে জঙ্গিদের রোধ করার প্রচেষ্টা নিচ্ছে।”

বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনে নাশকতার পর ‘টার্গেট কিলিং’য়ের ঘটনা ঘটার তথ্য তুলে ধরে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, “আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সবকিছু জনগণের সম্মুখে তুলে ধরেছে, কারা করছে, কীভাবে সংগঠিত করছে। সবই আমরা করছি এক এক করে।”

এ পর্যন্ত ৫০টি ‘টার্গেট কিলিং’ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কাদের দ্বারা এটা সংগঠিত হয়েছে। কে কে এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল, সবই নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী বের করেছে। বাকিগুলোও তদন্ত করে বের করা হবে।”