গুলশান হামলা: নর্থ সাউথের উপ-উপাচার্য গ্রেপ্তার

গুলশানের ক্যাফেতে হামলাকারীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-উপাচার্য গিয়াস উদ্দিন আহসানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2016, 05:11 PM
Updated : 17 July 2016, 04:24 AM

শনিবার বিকালে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ভবন থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন- গিয়াস উদ্দিনের ভাগনে আলম চৌধুরী এবং বসুন্ধরার ওই ভবনের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান তুহিন।

ওই ভবনেই গুলশানে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য।

উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর সড়কের ব্লক ই-এর  ৩০১/এ প্লটের টেনেমেন্ট-৩ এর এ/৬ নম্বর ফ্ল্যাটে গুলশানে হামলাকারীরা মিলিত হয়েছিলেন।

ওই বাসা থেকে বালুভর্তি কার্টন, জঙ্গিদের কাপড়সহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বালুভর্তি এসব কার্টনে হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড রাখা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গিয়াস উদ্দিন আহসান

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব হেলথ অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেসের ডিন গিয়াস উদ্দিন আহসান ওই ফ্ল্যাটের মালিক। ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন তার ভাগনে আলম ও ভবনের ব্যবস্থাপক তুহিন।

পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ বলেন, জঙ্গিদের জন্য গত মে মাসে ফ্ল্যাটটি ভাড়া করেছিলেন তাদের সহযোগী সদস্যরা। গুলশানের সন্ত্রাসী হামলার পর তারা দ্রুত ওই বাসা ছেড়ে পালিয়ে যান।

বাসা ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়ার তথ্য রাখতে ঢাকা মহানগর পুলিশের নির্দেশনা থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি বলে জানান তিনি।

গত ১ জুলাই রাতে গুলশান ২ নম্বরের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে দেশি-বিদেশি অন্তত ৩৩ জনকে জিম্মি করে একদল অস্ত্রধারী। পরদিন সকালে কমান্ডো অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী ওই ক্যাফের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

পরে সেখান থেকে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। অভিযানে নিহত হন পাঁচ হামলাকারী।

এর আগে রাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে জঙ্গিদের ছোড়া বোমায় পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন।

ওই হামলায় অংশ নেওয়া নিবরাজ ইসলাম নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। সেখান থেকে ‘মুক্তি পাওয়া’ আবুল হাসনাত রেজাউল করিমও ঢাকার এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক।

ঘটনার পর উদ্ধারদের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে হাসনাতকে সন্দেহের তালিকায় রাখার কথা জানায় পুলিশ।

এ হামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে বলে মাসুদুর রহমান জানান।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত মে মাসে বাসাটি একজন ভাড়া নিয়েছিল, যে জেএমবির সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। গুলশান হামলার দিন ওই ব্যক্তি বাসা ছেড়ে পালিয়ে যায়। হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিদের কেউ এই বাসায় এসেছিল বলে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে মনে হচ্ছে।”

অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিনসহ গ্রেপ্তার তিনজনকে রোববার আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।

গুলশান হামলার পর সপ্তাহ না হতেই গত ৭ জুলাই ঈদের সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলা চালাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত আবীর রহমানও নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।

গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ যে ১০ জন যুবকের তালিকা দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে জুন্নুন শিকদার এবং বাসারুজ্জামান নামে দুজন নর্থ সাউথে পড়াশোনা করেছেন।

তিন বছর আগে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডে নর্থ সাউথের ছয় ছাত্রের শাস্তির পর সাম্প্রতিক ঘটনায় আলোচনার মধ্যে রয়েছে ঢাকার এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি।   

২০১৩ সালে রাজীব হায়দার হত্যায় জড়িত থাকায় দণ্ডিত সাদমান ইয়াসির মাহমুদ, ফয়সাল বিন নাঈম দীপ, এহসান রেজা রুম্মান, মাকসুদুল হাসান অনিক, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজ সবাই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী।

সাম্প্রতিক এই দুই জঙ্গি হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রকাশের পর গত বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এই প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে যায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল।

জঙ্গিবাদী কার্যক্রম এবং আর্থিক অনিয়ম বিষয়ক তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে এর আগে গত বছর ১৯ অগাস্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছিল ইউজিসির একটি প্রতিনিধি দল।

সে দলের এক সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে বেশ কিছু নিষিদ্ধ জঙ্গিবাদী বই তারা পেয়েছিলেন এবং সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সদুত্তর দিতে পারেনি।

১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম দিককার এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন গোলাম মুজতবা ধ্রুব]