নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত এবং প্রবাসী যুবক তাহমিদকে উদ্ধারের পর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছে দাবি করলেও তাদের পরিবার বলছে, বাড়ি ফেরেনি কেউই।
হাসনাত-তাহমিদকে জিজ্ঞাসাবাদে হামলায় তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে কি না জানতে চাইলে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “সেটি এখনও জিজ্ঞসাবাদের পর্যায়ে রয়েছে। যুক্তিসঙ্গতভাবে এ মামলার সন্দেহভাজন হিসেবে তাদেরকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব।
“আরও সংশ্লিষ্ট অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেই আমরা সিদ্ধান্তে আসব- কার বিরুদ্ধে কতটুকু অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তবে বিনা কারণে অন্যায়ভাবে কোনো ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না।”
ওই দুজন কোথায় আছে- প্রশ্ন করা হলে তা এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, “সেটা তদন্তকারী দল বলতে পারবে। তাদের জিজ্ঞাসা করেন।”
হাসনাত ও তাহমিদ কোথায় জানতে চাইলে এক সপ্তাহ আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “যাদের উদ্ধার করা হয়েছিল তাদের প্রত্যেককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ এখন পুলিশের কাছে নেই।”
তারপর হাসনাতের বাবা এম আর করিম এবং তাহমিদের বাবা শাহরিয়ার খান উভয়েই বলেন, তাদের সন্তানরা বাড়িতে ফেরেনি। তারা পুলিশের কাছেই রয়েছে বলে তাদের ধারণা।
গুলশানের ওই ক্যাফেতে ১ জুলাইয়ের জিম্মি দশার একটি ভিডিওচিত্র প্রকাশের পর নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাতের বিরুদ্ধে হামলায় সম্পৃক্ততার সন্দেহের কথা উঠে আসে ফেইসবুকে।
নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে হাসনাতকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় অব্যাহতি দিয়েছিল বলে গণমাধ্যমের খবর। ক্যাফেতে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে যে পাঁচ হামলাকারী নিহত হন, তাদের মধ্যে নিবরাজ ইসলামও ঢাকার এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।
অন্যদিকে ব্যবসায়ী শাহরিয়ার খানের ছেলে তাহমিদ কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। গুলশানের ঘটনার একদিন আগে দেশে ফিরে ইফতারের পর বন্ধুদের সঙ্গে তিনি ওই ক্যাফেতে গিয়েছিলেন বলে পরিবারের ভাষ্য।
ঘটনার কয়েকদিন পর ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এই দুজনেরও হামলায় সম্পৃক্ততার সন্দেহের কথা জানিয়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান মিয়া গুলশানে জঙ্গি হামলার তদন্তে ‘যথেষ্ট অগ্রগতি’ হয়েছে বলে দাবি করেন।
“সন্ত্রাসীরা সবাই দেশি। দেশেই তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত থাকতে পারে- এটা উড়িয়ে দেই না। আমরা সেটা তদন্ত করে দেখছি।”
আবুল হাসনাত রেজাউল করিম ও তাহমিদ হাসিব খান
তিনি বলেন, “গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ ও আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। তার এই উদ্দেশ্য প্রণোদিত বক্তব্যে আমরা মর্মাহত হয়েছি। এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি।”
ওসি সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে গুম-খুনের অভিযোগ তুলে তার মরণোত্তর বিচার দাবি করেছিলেন জাফরুল্লাহ।
আছাদুজ্জামান বলেন, “তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আপত্তিকর। সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের মদদ দেওয়ার অপচেষ্টা করেছেন। এ ধরনের উস্কানিকর বক্তব্য দেওয়া থেকে সবাইকে আহ্বান জানাব। এর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গুরশান হামলার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
“ভবিষ্যতে যাতে এধরনের ঘটনা না ঘটে তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”