জঙ্গিদের জামিনে সতর্ক হওয়ার আহ্বান আইনমন্ত্রীর

দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় বিচার বিভাগের ‘দায়িত্বের কথা মনে রেখে’ জঙ্গিদের জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘কঠোর’ হতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 July 2016, 06:12 AM
Updated : 31 July 2016, 07:29 PM

নতুন নিয়োগ পাওয়া সহকারী বিচারকদের নিয়ে এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনের পর রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

বিভিন্ন জঙ্গি হামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জামিনে বেরিয়ে যাচ্ছে বলে এক সাংবাদিক দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জবাবে মন্ত্রী বলেন, “আমি আবারও বলব, বিচার বিভাগ স্বাধীন। জামিনের হাত আমাদের না।

“আমরা সরকারের দিক থেকে বা নির্বাহী বিভাগের দিক থেকে যেটা করতে পারি, প্রসিকিউশন সার্ভিস যেটা আছে, তাদেরকে আমরা এই সব মামলায় জামিন না দিতে বিচারকদের প্রতি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে তাদের যুক্তি-তর্ক রাখতে বলেছি এবং বলছি।

আনিসুল হক বলেন, “বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপরে কোনো হস্তক্ষেপ না করে আমি শুধু এইটুকু অনুরোধ করব, দেশ ও জাতি আমাদের সকলের। সেই দিকে লক্ষ্য রেখে, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার একটা বিরাট দায়িত্ব কিন্তু বিচার বিভাগেরও।

“সেই দিকে লক্ষ্য রেখে বিচার বিভাগকে তার সুবিবেচনায় অত্যন্ত কঠিন হতে আমি আবেদন করব।”

অভিযোগপত্রের দুর্বলতার কারণে অনেকের ‘ছাড় পাওয়ার’ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আইন মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা কোঅপারেশনে বিশ্বাসী, সব কিছুর একটা পদ্ধতি আছে। এই সব গুরুত্বপূর্ণ মামলায় এই রকম ফাঁকফোকর যাতে না থাকে, সেইগুলো দেখে দিব।”

তদন্ত সঠিক পথেই

গুলশানে জঙ্গি হামলার পর ১০ দিনে ঘটনার বিষয়ে তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের নিবৃত্ত করেন।

“আমার বিশ্বাস যে প্রশ্ন করবেন, সেগুলো তদন্তকেন্দ্রিক না হলে ভাল হয়। কারণ আমি মনে করি, তদন্ত শেষ হওয়ার পর এতে কী কী বের হয়েছে, সে সম্পর্কে তথ্য দেওয়া উচিত।

“আমি শুধু আপনাদেরকে বলব, এই তদন্ত সঠিক পদ্ধতিতে এবং সঠিক দিকে এগুচ্ছে।”

অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস অনেক মামলায় জামিনের বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে তথ্য প্রমাণের অভাবে  পড়ে অভিযোগের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমি এইটুকু বলবো, যে ক্ষেত্রে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যে সব ক্ষেত্রে অন্য মন্ত্রণালয় বা তদন্তকারী সংস্থার সহায়তা চেয়েছে, আইন মন্ত্রণালয় সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

“এখন থেকে এই সব মামলায় কোঅর্ডিনেশনের যেন কোন অভাব না হয়, সেটা আইন মন্ত্রণালয় দেখবে।”

জঙ্গিদের বিচারে তড়িৎ ব্যবস্থা

এক পর্যায়ে হাই কোর্টে বিচারাধীন রমনা বটমূলে বোমা হামলার মামলা ও নিম্ন আদালতে বিচারাধীন ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা মামলার কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রিতা নিয়েও প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।

জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমরা প্রসিকিউশন থেকে, অ্যাটর্নি জেনারেল  অফিস থেকে চেষ্টা করবো, এইগুলোর তড়িৎ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা আমরা নিবো। আপনারা এই ব্যবস্থার প্রতিফলন কিছু দিনের মধ্যেই দেখবেন।

“২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা এখন চলমান। যতটুকু আমি জানি, শেষ পর‌্যন্ত ২২৫ জনের ঊর্ধ্বে সাক্ষী হয়েছে, বিচার যেহেতু চলমান, সেই সম্পর্কে কোনো কথা বলি না।”

এই ধরনের মামলাগুলোর বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে না কি না জানতে চাইলে দণ্ডবিধি, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের কথা উল্লেখ করে আনিসুল বলেন, বাংলাদেশের এসব আইন এই ‘অপরাধগুলোকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করার জন্য যথেষ্ট’।

“আইন কিন্তু আমাদের দেশে রয়েছে। যে ব্যবস্থা নিব, সেটা হচ্ছে, যে মুহূর্তে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে পৌঁছাবে এবং সেটা আদালতে গৃহিত হবে, সেই মুহূর্ত থেকে এই বিচারগুলো যেন তড়িৎ হয়, সে ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করবে।”

বেসরকারি, ইংরেজি মাধ্যম নয়, লক্ষ্য হবে দায়ীরা

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে মন্তব্য করে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই পর্যায়ে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোনো একটা ইংরেজি মাধ্যম বা বাংলা মাধ্যম এইভাবে ক্যাটাগরি করা ঠিক হবে না। সেই কারণে যারা অপরাধ করেছে, ‘লেট আস বি স্পেসেফিক’ তাদের ব্যাপারে।”