আর্টিজানের কর্মচারীদের আটকে রাখা হয় টয়লেটে

গুলশানের হলি আর্টিজান ক্যাফের কর্মচারীদের টয়লেটে আটকে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তাদেরই একজন।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2016, 03:50 PM
Updated : 31 July 2016, 07:28 PM

ইমাম হোসেন সবুজ নামে ওই কর্মচারী শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওইদিন রাতে কয়েকটা লোক রেস্টুরেন্টে প্রবেশের পর আমাদের ১০/১৫ জন স্টাফকে নিচ তলায় একটি টয়লেটে তালাবদ্ধ করে রাখে। গাদাগাদি করে ওই টয়লেটে অবস্থান করতে হয়েছিল।”

তবে সেখানে কারা ছিলেন সপ্তাহের ব্যবধানে তাদের সবার নাম মনে করতে পারেননি ইমাম হোসেন।

মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লেও ছেলে এখন অনেকটাই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন তার বাবা আবদুল খালেক।

দুই তলার ওই রেস্তোরাঁয় স্প্যানিস খাবার ভাল পাওয়া যায় বলে ওই এলাকার অধিকাংশ বিদেশি নাগরিক খেতে আসতেন।

চাঁদপুরের ইমাম হোসেন সবুজ ওই রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন।

তিনি জানান, গত ১ জুলাইয়ের ঘটনায় নিহত পাচক সাইফুল খুব ভালো পিৎজা বানাতেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইমাম বলেন, “ওইখানে প্রচণ্ড ভয় লাগছিল। অনেক গুলির শব্দ পাচ্ছিলাম। মানুষের কান্না আর চিৎকারও কিছুটা শোনা যাচ্ছিল। বিভিন্ন সময়ে থেমে থেমে গুলির শব্দ আসছিল। মনে হচ্ছিল যেকোনো সময় মারা যেতে পারি।”

তিনি জানান, সারারাত ওই টয়লেটে আটকে থাকার পর ২ জুলাই সকালে সেনাবাহিনীর অভিযানে তারা মুক্ত হন।

উদ্ধার হওয়ার পর অন্তত ১৫ জনকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অফিসে নেওয়া হয়েছিল বলেও জানান ইমাম।

হলি আর্টিজান বেকারিতে ছয় বন্দুকধারী হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জিম্মিকে হত্যা করে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

২ জুলাই সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জিম্মি সঙ্কটের অবসানের পর দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, ছয় হামলাকারী নিহত হয়েছেন, একজন ধরা পড়েছেন।

সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী এক কর্মকর্তা শনিবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ওইদিন জঙ্গিরা অত্যন্ত নির্মমভাবে মানুষকে হত্যা করেছে। নিহতদের শরীরের ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। নিহত বিদেশি নাগরিকদের গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। শরীরেও ছিল নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন।”

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এমন একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পুরো হোটেলটিতে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ লেগে ছিল।

“মৃত্যু নিশ্চিত করতে অন্তত আট জনকে মাথায় গুলি করা হয়েছিল। নারীদের শরীরে আঘাত করা হয়েছে নির্মমভাবে,” জানান এক কর্মকর্তা।

ঈমামের বাবা আবদুল খালেক বলেন, “শনিবার (২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১২টার দিকে সবুজ ফোন করে বলে আব্বা আমি বেঁচে আছি। আপনে ডিবি অফিসে আসেন। মালিক আসলে আমাগো ছাইড়া দিব।”

“এরপর বিকেল ৫টার দিকে ডিবি অফিসের বাইরে যাই। অফিসের ভেতর থেকে বাইরে থাকা কয়েকজনকে ডেকে নেওয়া হলে দেখি সাদা ও কালো পোশাক পড়া অনেকগুলো ছেলে।

“যারা রান্নার কাজ করে তারা সাদা পোশাক ও যারা সার্ভিসে কাজ করেন তারা কালো পোশাক পড়া। কালো পোশাক পরা নয়টা ছেলে ছিল। ওই সময় কয়জন সাদা পোশাকে ছিল গুনতে পারি নাই।”

আবদুল খালেক বলেন, “সবুজ মানসিকভাবে এখন অনেকটাই ভাল আছে। এবার ঈদের দুইদিন আগে চাঁদপুর গিয়েছিলাম। শনিবার দুপুরের পর ঢাকায় ফিরে আসছি।”

“এলাকায় টেলিভিশন নেই, তাই ওই দিনের ঘটনায় সবুজ যে সেখানে আটকা ছিল তা কেউ জানে নাই। আমরাও কাউকে ঘটনাটা বলতে চাই নাই।”

ডিবি পুলিশ ওই ঘটনা নিয়ে কথা বলতে নিষেধ করেছেন বলেও জানান তিনি।