আনন্দের ঈদে রক্তের দাগ

সংযমের মাস রোজার মধ্যে গুলশানে ক্যাফেতে নৃশংস জঙ্গি হামলার রেশ না কাটতেই ঈদের দিন ফের হামলায় ভিন্ন এক আবহে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের দিনটি পার করল বাংলাদেশ। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2016, 05:09 PM
Updated : 7 July 2016, 05:39 PM

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে প্রতিবছর ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয় নজরুলের গানের সুরে; ‘দোস্ত-দুশমন’ ভুলে, সব ধর্মের মানুষ ‘হাতে হাত মিলিয়ে’।

এবারও হিংসা-বিদ্বেষ পেছনে ফেলে ঈদ সবার জন্য আনন্দ বয়ে আনবে- এমন প্রত্যাশা নিয়েই বৃহস্পতিবার সকালে ঈদের নামাজ পড়তে বের হয়েছিলেন মুসলমানরা। সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাতের মুনাজাতেও ছিল শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশা।

কিন্তু সকাল ৯টা পার হওয়ার আগেই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের মাঠের মাত্র আড়াইশ মিটার দূরে পুলিশের ওপর হামলা চালায় একদল অস্ত্রধারী।

তাদের বোমায় নিহত হন দুই পুলিশ সদস্য। গোলাগুলির মধ্যে ঘরের মধ্যে গুলি ঢুকে প্রাণ যায় এক গৃহবধূর। সন্দেহভাজন এক হামলাকারীও গুলিতে নিহত হন।     

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ জনের মৃত্যুর পর এক সপ্তাহ পার না হতেই ঈদের সকালে এল এই ধাক্কা।

কারা এ হামলা চালিয়েছে, কেন তারা ঈদের দিন হাজার হাজার মুসলমানের নামাজের পথে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে-তা স্পষ্ট হয়নি। হামলার দায়ও স্বীকার করেনি কেউ। 

এর কঠোর নিন্দা জানিয়ে গণভবনে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “যেখানে ঈদের জামাত হবে, তা কাছাকাছি জায়গায় হঠাৎ আমাদের আইনশঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা...।  এই ধরনের জঘন্য ঘৃণ্য অপরাধ যারা করে থাকে, তারা আদতে ইসলামে বিশ্বাস করে না, তারা ইসলামে শত্রু।” 

এর আগে সকালে বঙ্গভবনে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, পরস্পরের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্না  ভাগ করে নেওয়ার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের শিক্ষাই ঈদ দেয়।

“আর এটাই হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির নান্দনিক ঐতিহ্য,” বলেছেন তিনি। 

‘নিন্দা আর ধিক্কার’ জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন,  “নিরহ ও নিরাপরাধ মানুষকে যারা হত্যা করেছে তারা ভীরু ও কাপুরুষ। এরা মানবজাতির অগ্রগতির শত্রু।”

আর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, “পবিত্র ঈদের দিন যারা এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে পারে তারা ইসলামের শত্রু। ইসলামের এইসব অজ্ঞাত শত্রুদের চিহ্নিত করে নির্মূল করতে হবে। এই সব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হিসাবে রাজধানীর অর্ধকোটির বেশি মানুষ এবারও ঈদের ছুটিতে গ্রামে গেছেন। যানজট আর পথের ভোগান্তির সঙ্গে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলায় পর সৃষ্ট উৎকণ্ঠার মধ্যেও তারা স্বজনদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চেয়েছেন উৎসবের আনন্দ।

দেশের কোটি কোটি মুসলমান সকালে ঈদগাহে কিংবা মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ছেন। বরাবরের মতো এবারও রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত হয়েছে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের এই জামাতে অংশ নেন।

এছাড়া সকাল ৭টা থেকে এক ঘণ্টা পরপর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ছিল পাঁচটি জামাতের আয়োজন।

প্রতিবারের মতো এবারও দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত ছিল কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। সন্ত্রাসী হামলার কারণে সামান্য বিলম্বিত হলেও সেখানে ঈদের নামাজ পড়েছেন লাখো মুসলমান।  

ঈদ জামাত সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন করতে সারা দেশে এবার জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে দেন।

দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল, কারাগার, শিশু পরিবার, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, সেফ হোমস, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে ঈদ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার পরিবেশন করা হয় উন্নতমানের খাবার।

আষাঢ়ের ২২তম এই দিনে দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি উৎসবের আনন্দে বাগড়া দিতে পারে বলে আভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অফিস। তবে সে আশঙ্কা সত্যি হয়নি রাজধানীতে।  

বৃষ্টির উৎপাতে ভোগান্তি না হলেও শোলাকিয়ার ঘটনা ছায়া ফেলেছে সবার মনে;  দিনভর টেলিভিশন আর অনলাইনে বেশিরভাগ মানুষের চোখ খুঁজেছে হালনাগাদ খবর।