মাওলানা মাসউদ হামলার লক্ষ্য ছিলেন?

আলেম-ওলামাদের নিয়ে জঙ্গিবিরোধী জনমত গঠনে নেতৃত্ব দেওয়া মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ মনে করছেন, শোলাকিয়ায় হামলা তাকে লক্ষ্য করেও হতে পারে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2016, 03:02 PM
Updated : 7 July 2016, 06:12 PM

এ বিষয়ে তিনি শুক্রবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অসম্ভব কিছু না। আমি অনেক আগে থেকেই হুমকি পাচ্ছিলাম।”

সকালে ঈদ জামাতের আগে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের মাত্র আড়াইশ মিটারের মধ্যে এই হামলার পর পুলিশি অভিযানে গ্রেপ্তার এক তরুণ র‌্যাবকে বলেছেন, ‘ওস্তাদের’ নির্দেশে বিশেষ ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ নিয়ে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থেকে কিশোরগঞ্জে এসেছিলেন তিনি।

তবে বিশেষ ওই ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ কী তাৎক্ষণিকভাবে তা জানাননি র‌্যাব কর্মকর্তারা।  

ইসলামের নামে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদকে হারাম আখ্যায়িত করে লক্ষাধিক আলেম-ওলামার পক্ষে ফতোয়া ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা মাসউদ।

ইসলামের নামে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদকে ‘হারাম’ আখ্যায়িত করে গত মাসে লক্ষাধিক মুফতি ও আলেম-ওলামা যে ফতোয়া দিয়েছিলেন তার নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।

ঢাকার একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মাসউদ দীর্ঘদিন ধরে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম এই ঈদ জামাতে ইমামতি করেন।

আগে সব সময় ঈদের সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে এসে ঈদগাহর পাশের যে আজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে তিনি নামতেন, সেই স্কুলের ফটকের কাছের একটি পুলিশ চেকপোস্ট লক্ষ্য করেই বৃহস্পতিবারের হামলা হয়।

সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর বেশ কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরে হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক গোলাগুলি হয়। এ ঘটনায় দুই পুলিশসহ চারজন নিহত এবং অন্তত দশজন আহত হন।

গত শুক্রবার গুলশানে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ অন্তত ২২ জন নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এবার দেশের অন্যান্য এলাকার মতো শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান ঘিরেও বিশেষ নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছিল পুলিশ।

এদিন আজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে না নেমে পাশের একটি স্টেডিয়ামে অবতরণ করে মাওলানা মাসউদের হেলিকপ্টার।

শোলাকিয়ায় নামার পরপরই গুলি ও বোমার শব্দ শুনতে পান বলে জানান মাওলানা মাসউদ।

এর পরেই নিরাপত্তার কথা ভেবে পুলিশ তাকে সার্কিট হাউজে নিয়ে যায় বলে জানান তিনি।

মাওলানা মাসউদের অনুপস্থিতিতে স্থানীয় জামিয়া ইমদাদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা সোয়াইব আবদুর রউফের ইমামতিতে ঈদ জামাত হয়।  ১০ মিনিটের মধ্যেই নামাজ-খুতবা ও দোয়া শেষ করেন মাওলানা সোয়াইব। পরে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, “আপনারা কেউ আজিমুদ্দিন স্কুলের দিকে যাবেন না, ওদিকে গোলাগুলি হচ্ছে।”

এ সময় সার্কিট হাউজে নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে থাকা মাওলানা মাসউদ পরে ঢাকায় ফিরে আসেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদের (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) বলেছি, আমি অসুস্থ বোধ করছি না বা আমার পক্ষ থেকে কোনো সমস্যা নাই। এরপরেও আমার নিরাপত্তার বিষয়টি তারা গুরুত্ব দেয়।

“আমি তাদের বলেছি, আমি ইমামতি করতে না পারলে একটা বাজে মেসেজ যাবে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তার স্বার্থে অনুমতি দেননি।”

এ বিষয়ে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “হামলার পর পরিস্থিতি এমন ছিল যে তাকে (মাওলানা মাসউদ) নিরাপত্তা দিয়ে মাঠে আনার কোনো সুযোগ ছিল না। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যস্ত ছিল।”

হামলার পরপরই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মো. শফিউল ইসলাম নামে সন্দেহভাজন এক হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

তার কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে বলে র‌্যাব-১৪ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল ইসলাম জানান।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শফিউল হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা পুলিশকে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছিল। মাওলানা মাসউদ টার্গেট ছিলেন কি না তা পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে।”

গত শুক্রবার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় প্রাণহানির পর সপ্তাহ না হতেই শোলাকিয়ায় এই হামলা নিয়ে মাওলানা মাসউদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জঙ্গিরা যে সব কাজ করছে তাতে জাহান্নামে যাওয়ার পথে এগোচ্ছে, জান্নাতের পথে নয়।”

এ ধরনের হামলা প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আতঙ্কিত না হয়ে এসব জঙ্গি হামলা প্রতিরোধে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে, না হলে তারা এদেশ ছারখার করে ফেলবে, যা হতে দেওয়া যাবে না।”