‘হামলা হোক, যাই হোক- দেশ আমার’

গুলশানের ক্যাফেতে জঙ্গি হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই আসা ঈদে জাতীয় ঈদগাহের জামাতে অংশ নেওয়া কয়েকজন মুসল্লি বলেছেন, সাধারণ মানুষের মাঝে ওই ঘটনার জন্য শোক কাজ করলেও ভয় নেই।

সুলাইমান নিলয় নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2016, 10:37 AM
Updated : 31 July 2016, 07:26 PM

বাংলাদেশের মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এই উৎসব উদযাপনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দল বেঁধে অনেকেই হাজির হতে থাকেন ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে।

জাতীয় ঈদগাহে সাড়ে ৮টায় ঈদ জামাত হওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে ৭টার পরই কদম ফোয়ারা থেকে বঙ্গবাজার-পল্টন-মৎস ভবন পর্যন্ত লাইন লেগে যায়।

মুসল্লিদের ঈদগাহে প্রবেশের জন্য ছিল তিনটি গেইট। প্রধান গেইট ছিল পুরুষদের জন্য। দক্ষিণ পাশের নারী প্যান্ডেলের পাশের গেটটি খোল রাখা হয় তাদের জন্য।

ভিআইপিদের জন্য খোলা ছিল হাই কোর্টের প্রধান গেইট। সেখান দিয়ে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রীবর্গ এবং উচ্চ আদালতের বিচারকগণসহ ভিআইপিরা প্রবেশ করেন।

নিরাপত্তার কারণে বসানো একাধিক আর্চওয়ে দিয়ে মানুষ ঈদগাহে প্রবেশ করে। জায়নামাজ ছাড়া আর কিছু নিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি তাদের।

সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটের দিকে বঙ্গবাজারের দিক থেকে আসা রাস্তার লাইন ভেঙে মানুষ গেইটে চলে আসে। এ সময় কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে র‌্যাব-পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়।

সোয়া ৮টার পর ঈদগাহের ভেতরের প্যান্ডেল ভরে যায়। এরপরও নামাজ শুরু পর্যন্ত অনেকে প্রবেশ করেন। তারা প্যান্ডেলের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় জায়নামাজ বিছিয়ে দাঁড়িয়ে যান।

এ সময় বিপুল সংখ্যক মানুষ ঈদগাহের বাইরে পূর্ত ভবন থেকে শিক্ষা ভবন পর্যন্ত এবং পল্টনের দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়েন নামাজের জন্য।

নামাজ শেষে সিদ্দিক বাজারের বাসিন্দা মীর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আবহাওয়া খারাপ না থাকলে রোজার ঈদে এমনিতেই অনেক মানুষ হয়। এবারও অন্যবারের মতো হয়েছে।

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা সংক্রান্ত এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “না গুলশানের ঘটনায় মানুষ ভয় পায় নাই। ঘটনাটা মানুষের এখানে আসায় বাধাও দিতে পারে নাই। যারা আসার, তারা এসেছে। তবে ঈদের কয়েকদিন আগে আমাদের দেশে এই রকম একটা ঘটনা, খারাপ লাগা সবারই আছে। আমারও খারাপ লাগছে।”

প্রায় ২৫ বছর এই মাঠেই ঈদের নামাজ আদায় করার কথা জানান এই ‘ঢাকাইয়া’।

কমলাপুরের জসীম উদ্দিন রোডের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, “নিরাপত্তা বেষ্টনীর কারণে ঢুকতে একটু দেরি হয়েছে। কিন্তু খারাপ লাগেনি। আমাদের জন্যইতো তারা এটা করছে।”

গুলশানের ঘটনার পর এমন নিরাপত্তা দরকার আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “গুলশানের ঘটনায় ঈদগাহে আসতে মানুষ ভয় পায় নাই। নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কাজ করছে। আমরা আমাদের মত নামাজ পড়তে আসছি।”

সার্বিক ব্যবস্থাপনায় খুশি সূত্রাপুরের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, “সাড়ে ৭টার দিকে এসেছি। সুন্দরভাবে ভেতরে ঢুকে নামাজ পড়ে যাচ্ছি।”

বৃষ্টি হলে কিছুটা সমস্যা হতো বলে জানান মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর।

চার বছরের সন্তান মুমতাহিনুল ইসলাম রাব্বীকে নিয়ে ঈদগাহে এসেছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আহমেদ আশরাফ।

তিনি বলেন, “আমি সন্তানকে নিয়ে গুলশানে ফুল দিতেও গিয়েছি। ওকে জীবন দেখতে হবে, জীবনের মুখোমুখি হওয়া শিখতে হবে। এখানে হামলা হোক, যাই হোক- এটা আমার দেশ। এই দেশকে ভালো রাখার চেষ্টা আমাদেরকে সব সময় করতে হবে।”

গুলশানের হামলার পর অনুষ্ঠিত এই ঈদ জামাতের মোনাজাতে দেশের মঙ্গল কামনা করা হলেও জঙ্গিবাদ নিয়ে কোনো কথা না হওয়ায় মুসল্লিদের কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তাদেরই একজন একটি বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরের কর্মকর্তা নিয়াজ মাখদুম শিবলী।

ঈদগাহ থেকে ফিরে নিজের ফেইসবুক পেইজে তিনি লিখেছেন, “জাতীয় ঈদগাহে নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম। আশা ছিল, মোনাজাতে ইমাম সাহেব গুলশান হামলাসহ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট উচ্চারণে আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন। হয়ত জীবনের ভয়ে তিনি তা করেননি। আশাহত হয়েছি।”

জাতীয় ঈদগাহে ৯টার দিকে নামাজ-খুৎবা-মোনাজাত শেষ হওয়ার পর ঘরে ফিরতে শুরু করেন মুসল্লিরা। ভিআইপিদের চলে যাওয়ার পর তাদের জন্য নির্ধারিত হাই কোর্টর প্রধান গেইট খুলে দেওয়া হয় সাধারণ মানুষের জন্য।

নামাজের পর কোলাকুলি করে পরস্পরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মুসল্লিরা। মোবাইলে ছবি এবং সেলফি তুলতেও ব্যস্ত দেখা যায় অনেককে।