গুলশান হামলা দেশের জন্য ‘বড় ধাক্কা’: ইউনূস

গুলশান হামলা দেশের জন্য ‘বড় ধাক্কা’ বলে মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2016, 06:51 PM
Updated : 31 July 2016, 07:17 PM

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম ক্লাবে ‘চট্টগ্রাম সামাজিক ব্যবসা কেন্দ্র লিমিটেড’ ও ‘নোবেলজয়ী ইউনূস সুহৃদ’ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এ হামলার প্রেক্ষাপটে ‘সামাজিক ব্যবসা দিবস’ উপলক্ষে দুই দিনের অনুষ্ঠান বাতিলের কথাও জানান ইউনূস। আগামী ২৮ জুলাই থেকে ঢাকায় এই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “সব রেডি। শেষ মুহূর্তে এসে বাতিল করলাম। এতে আমাদের কাজকর্ম বন্ধ হবে না। তবে দেশের জন্য একটা বড় ধাক্কা।

“দেশের সব নাগরিক যদি সচেতন হয়ে না দাঁড়ায় তাহলে এখান থেকে আর রক্ষা নেই। এটা যে কত বড় আঘাত দেশের থেকে বের হলেই বুঝতে পারবেন।”

জঙ্গি হামলার এই ঘটনাটি এখন আর শুধু দেশের ভেতর ‘সীমাবদ্ধ নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সিএনএন সারাক্ষণ দেখাচ্ছে, এটা তারা ছাড়ছে না। রাউন্ড দ্য ক্লক তারা দেখাচ্ছে। সব পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেল সবিস্তারে বর্ণনা করছে। গোপন করার উপায় নেই।”

এই হামলার নেপথ্যে ‘দীর্ঘ প্রক্রিয়া’ আছে বলে মনে করেন ইউনূস।

তিনি বলেন, “এটা তো একটা ফল দেখা গেল। এর পেছনে একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া আছে। কোথা থেকে এটা শুরু হয়েছে? এই প্রক্রিয়ার পুরোপুরি বিবরণ আমাদের জানতে হবে। সে প্রক্রিয়াটি বন্ধ না করা পর্যন্ত সুস্থ জাতি হিসেবে আমরা দাঁড়াতে পারব না।

“এর প্রক্রিয়াটা যদি আমরা ধরতে না পারি তাহলে এটা আমাদের ভেতরে ঢুকে যাবে। আজ পাঁচজনকে পেয়েছি, পরে আরও পাঁচজনকে পাব।”

জঙ্গিবাদ নিয়ে সবাইকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ইউনূস বলেন, “আজ হয়ত মনে করছেন, আপনার ছেলে নিরাপদ, আপনার মেয়ে নিরাপদ। তাদের (হামলাকারীদের) বাবা-মাও মনে করেছিলেন তারা নিরাপদ।

“একটা ঘটনা দেখলাম পরিণতি কোন দিকে যায়। আরও কত ছেলেমেয়ে এর ভিতরে আছে আমরা তো জানি না। আরেকদিন আরেক আরও ভয়াবহ কাণ্ডে আমাদের হয়ত বোধোদয় হবে।”

এখন পারস্পারিক দোষারোপের চর্চা থেকে বেরিয়ে এই সংকট মোকাবেলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “দোষারোপ না করে ওখানে নিষ্পত্তি করে ফেলতে হবে, যে ভয়াবহতার মধ্যে আছি। উৎপাটন করে ফেলতে হবে।

“এটা যদি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে থেকে থাকে, পারিবারিক পরিস্থিতিতে হয়ে খাকে, যদি রাজনৈতিক কারণে হয়ে থাকে। এখান থেকে আমাদের উদ্ধার হতে হবে।”

‘তাদের কোন মুখে আসতে বলি’

অনুষ্ঠানে ‘সামাজিক ব্যবসা দিবস’র অনুষ্ঠান বাতিলের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, এ বছর সবচেয়ে বড় আকারে এই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তারা।

“এবার জাপান থেকে ১০০ প্রতিনিধি আসছিল। বড় বড় কোম্পানির সিইও তাদের পার্লামেন্টের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসার কথা ছিল। রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে।

“ভারত থেকে একটা বিরাট ডেলিগেশন আসছিল। বহু মাস ধরে তারা আয়োজন করছিল। টাটা, মহেন্দ্রর সিইও, ডেপুটি সিইও আসার কথা ছিল।

“গতকাল আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হল এই বৈঠক আমরা করতে পারব কি পারব না। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, এটা আমরা বাতিল করলাম।”

গুলশানের এই হত্যাকাণ্ডে জাপানিদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতি ‘বিরূপ’ মনোভাব তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জাপানের মানুষ আমাদের দিকে তাকাচ্ছে যেন আমরা কতগুলো বর্বর মানুষ। তাদের পেলে কতল করে দেই। তারা তো আর পাঁচ জন বিচার করছে না। তারা বাংলাদেশ বিচার করছে।

“সেখানে যারা বাংলাদেশিরা আছে, তারা বলছে- ঘর থেকে বেরোতে এখন ভয় লাগে। তারা মনে করছে ‘আমিই সে বর্বর মানুষ, যে জাপানিদের কতল করেছে’।”

“তো তাদের কোন মুখে বলি- তোমরা আসো এদেশে। তাদেরকে বলেছি- মাফ করুন, আসার দরকার নাই।”

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ‘ইউনুস সুহৃদ’র চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যাপক মু. সিকান্দর খান বক্তব্য রাখেন।

উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক ও দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক তসলিম উদ্দিন চৌধুরী।