পুলিশের সন্দেহ থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক: হাসানাতের বাবা

গুলশানের ক্যাফেতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় হাসানাত রেজা করিমকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে তার বাবা এম আর করিম বলেছেন, সন্দেহ থাকলে পুলিশের উচিৎ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2016, 12:25 PM
Updated : 6 July 2016, 05:30 PM

গুলশান ক্যাফে থেকে বেরিয়ে আসার পর তিনদিন ধরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসানাত।  তাকে ‘বাড়ি ফিরিয়ে আনতে’ আইনজীবীদের কাছে যাবেন বলেও মঙ্গলবার জানিয়েছেন এম আর করিম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তিন দিন ধরে হাসানাত ডিবির কাছে আছে। তার সঙ্গে দেখা করতে পারছি না। হাসানাতের সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারছি না। আইন তো বাঁচার রাস্তা। এখন কী করতে হবে- সেই পরামর্শ নিতে আইনজীবীর কাছে যাব।”

শুক্রবার হলি আর্টিজান বেকারিতে ছয় বন্দুকধারী হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জিম্মিকে হত্যা করে। শনিবার সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জিম্মি সঙ্কটের অবসানের পর দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, সন্দেহভাজন ছয় হামলাকারী নিহত হয়েছেন, একজন ধরা পড়েছেন। অবশ্য নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে পরে হামলাকারী হিসেবে সনাক্ত করা হয়।

শনিবার সকালে উদ্ধার ১৩ জনসহ ২৭ জনকে নিয়ে যাওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে। পরে তাদের বক্তব্য শুনে যাচাই-বাছাই করে অনেককে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মঙ্গলবারই ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ক্যাফেতে জঙ্গি হামলায় সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন উদ্ধার হওয়া জিম্মি হাসানাত রেজা করিম ও তাহমিদ হাসিব খান; তারা তাদের হেফাজতেই আছেন। তদন্তের স্বার্থে সন্দেহভাজন অন্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে।

শনিবার কমান্ডো অভিযান শুরুর আগের এক ভিডিওতে ক্যাফে থেকে হাসানাত রেজা করিমকে সপরিবারে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর সাবেক এই শিক্ষক পুলিশকে বলেছেন, মেয়ে সাফা করিমের জন্মদিন করতে শুক্রবার স্ত্রী শারমিন পারভীন ও ছেলে রায়ান করিমকে নিয়ে গিয়েছিলেন হলি আর্টিজান বেকারিতে।

হাসানাত ক্যাফে থেকে বেরিয়ে আসার পর ডিবি বাসায় গিয়ে তার ল্যাপটপ নিয়ে যায় দাবি করে এম আর করিম বলেন, “এরপর হাসানাত ও তার পরিবারের সদস্যরাও ডিবি অফিসে ছিল। বাসায় তো ডিবি কোনো অভিযান চালায়নি। ডিবি তাকে আটক না বললেও বাসায় আসতে দিচ্ছে না।

“আমার ছেলেকে তারা যদি সন্দেহও করে থাকে, তাহলে তার তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করুক।”

তদন্তে সহযোগিতা করার জোরালো আশ্বাস দিয়ে হাসানাতের বাবা বলেন, “তাকে সন্দেহের কারণ আছে। তাকে নিয়ে জঙ্গিরা ঘুরে বেড়িয়েছে। কোরিয়ান নাগরিক ফটো তুলেছে। সে এমনভাবে বেরিয়ে এসেছে যেন তার কিছুই হয়নি।”

এসময় তিনি ছেলের ভূমিকা জানতে জঙ্গি হামলায় প্রাণে বেঁচে যাওয়াদের, বিশেষ করে ক্যাফের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান। 

“সেদিন ঘটনাটা কী হয়েছে, যারা বেঁচে আছেন তারাই কেবল জানেন, রেস্তোরাঁর বয়-বেয়ারারা জানেন। তাদের জিজ্ঞেস করলেই তো হয়, এই লোকের কী ভূমিকা ছিল?

“আমার দাবি, হাসানাতের পাসপোর্ট দরকার হলে ডিবি রেখে দিক। হাসানাতকে ছেড়ে দিক। তারা তদন্ত করুক পুরো বিষয়টা। এরপর তার বিরুদ্ধে কোনো কিছু পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

হাসানাতকে জঙ্গিরা ‘অস্ত্রের মুখে দলে ভেড়াতে পারে’ এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেন এম আর করিম।

“সন্ত্রাসীরা অস্ত্র দিয়ে ওখানের অনেককে হত্যা করেছে। অস্ত্র দিয়ে তারা কী করতে পারে হাসানাত দেখেছে। হাসানাতের কয়েকটি ভিডিও বিভিন্ন জায়গায় আসছে। সেগুলো তো তাকে অস্ত্রের মুখেও কোনো কারণে করানো হয়ে থাকতে পারে।”

পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কারণে হাসানাতকে অব্যাহতি দিয়েছিল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।

সাইট ইন্টেলিজেন্সে আসা হোলি বেকারির পাঁচ হামলাকারীর ছবির মধ্যে যাদের পরিচয় ফেইসবুকে আসছে, তাদের মধ্যে নিব্রাস ইসলামও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, যিনি কমান্ডো অভিযানে নিহত হন।

এম আর করিম বলেন, “সংবাদ মাধ্যমে যেসব খবর আসছে সেগুলো ফ্যাক্ট না। হাসানাত একসময় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করত। বর্তমানে আমার হাতে গড়া নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড-এর পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছে।

“প্রতিষ্ঠানটিতে সে আমার নেক্সট ম্যান। কিন্তু কাজে ওর তেমন মন নেই।”

এক প্রশ্নে হাসানাত ‘মৌলবাদী নন’ দাবি করে তার বাবা বলেন, “হাসানাত অর্থোডক্স না। ওভাবে নামাজ-রোজা করত না। কেবল জুম্মার নামাজ পড়ত। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ও কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনে জড়িত কি না- সে সম্পর্কে কিছু জানি না।”

হাসানাত লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন এবং আমেরিকা থেকে এমবিএ করেছেন বলেও জানান তার বাবা।

৬৬ সালে নিজে বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে সরকারি বৃত্তি নিয়ে নাইজেরিয়া গিয়েছিলেন জানিয়ে এম আর করিম বলেন, সেখানে সন্তানদের পড়াশোনা না করিয়ে তিনি লন্ডনে পড়াশোনা করিয়েছেন।

গুলশানের ঘটনার পর হাসানাতের স্ত্রী এবং দুই সন্তানকেও ডিবি অফিসে রাখা হয়। তারা রোববার বাড়ি ফেরার সুযোগ পেলেও হাসানাতকে ফেরার অনুমতি ডিবি পুলিশ দেয়নি বলে দাবি করেন তার বাবা এম আর করিম।

যোগাযোগের চেষ্টা করলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন মোবাইলে ফোনে এক এসএমএসে বলেন, “সরি, আই কান্ট টক রাইট নাউ। আই উইল কল ইউ ব্যাক।”

পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার শেখ নাজমুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের সাড়া মেলেনি।