গুলশানে হামলা: মধ্যরাতে রক্তাক্ত অবস্থায় আটক তরুণ আর্টিজানকর্মী

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টার মাথায় ওই এলাকা থেকে রক্তাক্ত যে তরুণকে পুলিশ আটক করেছিল, তিনি ওই ক্যাফের কর্মী বলে তার পরিবারের দাবি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2016, 02:41 PM
Updated : 31 July 2016, 07:06 PM

ওই ক্যাফের অন্য এক কর্মচারীও বলছেন, জাকির হোসেন শাওন (২২) নামের এই তরুণ বাবুর্চির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।

শুক্রবার মধ্যরাতে হলি আর্টিজানের পিছন থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় আটক করা হয়েছিল শাওনকে।

দুই দিন খোঁজাখুজির পর সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছেলের খোঁজ পাওয়ার কথা জানান শাওনের মা মাসুদা বেগম।

পুলিশের বিরুদ্ধে শাওনকে নির্যাতনের অভিযোগ করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছেলে বেঁচে আছে কি নাই, জানতাম না। এখন সে বাঁচবে কি না সেটা জানি না। এমন পিটান পিটাইছে হ্যার চেহারা দ্যাহা যায় না। হাত-পা সব ফোলা।

“আমার নিরাপরাধ পোলার লগে এইডা কী করল? শরীরের কোনো জায়গা মাইরের বাকি নাই।”

শাওনকে কখন হাসপাতালে আনা হয়েছে তা তাকে জানানো হচ্ছে না বলেও অভিযোগ মাসুদার।

তবে হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে ৩ জুলাই (রোববার) রাত দেড়টার দিকে শাওনকে হাসপাতালে ভর্তির তথ্য রয়েছে।

শাওনের বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া কোনো কথা বলেননি।

জাকির হোসেন শাওন নামের এই তরুণ আর্টিজানে কাজ করতেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ফাঁড়ির একজন পুলিশ সদস্য জানান, শাওন নামে একজন হাতকড়া পরা অবস্থায় হাপসাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন।

শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে হলি আর্টিজান বেকারিতে ছয় বন্দুকধারী হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জিম্মিকে হত্যা করে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

শনিবার সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জিম্মি সঙ্কটের অবসানের পর দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, ছয় হামলাকারী নিহত হয়েছেন, একজন ধরা পড়েছেন।

পরে পুলিশ এ হামলায় দুজনকে আটকের কথা বললেও তাদের পরিচয় প্রকাশ করেনি।

সোমবার ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া রাজারবাগে এক সভায় বলেন, আটকদের একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মাসুদা বেগম জানান, রোববার তাদের নারায়ণগঞ্জের বাসায় ফেরার কথা ছিল শাওনের। কিন্তু তার কোনো খোঁজ-খবর না পেয়ে ওই দিন বিকালে ছেলের কর্মস্থল হলি আর্টিজান বেকারির সামনের সড়কে আসেন তারা।

অপর দুই ছেলে আরাফাত ও আবদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে শাওনের খোঁজে এসে মোবাইলে ছেলের পাসপোর্ট সাইজের একটি ছবি সাংবাকিদের দেখান তিনি।

খোঁজা-খুঁজির এক পর্যায়ে শিশির বৈরাগী নামে ক্যাফের এক কর্মচারী তাদের জানান, শাওন বেঁচে আছে এবং তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে থাকতে পারেন।

এরপর রাত ৮টা পর্যন্ত ওই হাসপাতালে খোঁজ করে শাওনকে না পেয়ে নারায়ণগঞ্জের বাসায় ফেরেন তারা। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের নয়াপাড়া এলাকায় থাকে তাদের বাসা।

সোমবার সকালে স্বামী আবদুস সাত্তার ও দুই সন্তানকে নিয়ে আবার গুলশান এলাকায় আসেন মাসুদা। এরপর ছেলের খোঁজ পেতে ইউনাইটেড হাসপাতাল ও আর্টিজান বেকারির সামনের সড়কে উপস্থিত সাংবাদিকদের সহায়তা চান তিনি।

এক পর্যায়ে এক সাংবাদিকের মাধ্যমে খোঁজ পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে শাওনকে পান তারা।

মাসুদা জানান, শাওনের সঙ্গে ঘটনার দিন শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সর্বশেষ কথা হয়েছিল তাদের।

“ও বলছিল, ‘মা বোনাস পাইছি আজকে। বেতনটা পাইলে রোববারের দিকে আপনাগোর কাছে আসমু’।”

এরপর থেকে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেকবার ফোন করছি। হয়তো বাজছে ধরে নাই, নয়তো ফোন বন্ধ পাওয়া গেছিল।”

প্রায় একবছর ধরে শাওন আর্টিজানে কাজ করতেন বলে জানান মাসুদা।

হলি আর্টিজানের কর্মচারী শিশির বৈরাগী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কিচেনে বাবুর্চির সহকারী হিসাবে কাজ করতেন শাওন। ‍ঘটনার সময় কে কীভাবে বাইরে বেরিয়ে আসে তা তার জানা নেই।

“আমি বাথরুমে পালাইছিলাম। রাতে এক পর্যায়ে আমাদের দুয়েকজনকে আমাদের কাছে পাঠায় ওরা (হামলাকারীরা)। বলেছে, ‘বাঙালিদের আমরা ছেড়ে দেব, সবাইকে বের হয়ে আসতে বল’। আমরা চার-পাঁচজন ওদের দিকে না গিয়ে বাথরুম ভেঙে পেছন দিয়ে পালিয়ে যাই,” বলেন আর্টিজানের বেকারি অংশের কর্মচারী শিশির।