গুলশানের হামলাকারীদের ‘জেএমবি’ বলছেন আইজিপি

গুলশানে ক্যাফেতে হামলা চালিয়ে বিদেশিসহ ২০ জনকে জিম্মি করে কুপিয়ে হত্যাকারীরা জেএমবির সদস্য বলে দাবি করেছেন পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2016, 12:41 PM
Updated : 31 July 2016, 07:06 PM

রাজধানীর কূটনীতিকপাড়ায় বিদেশিদের লক্ষ্য করে চালানো এই হামলায় জড়িতদের আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতা এখন আর উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি।

নিহত জঙ্গিদের আগে থেকে খুঁজছিলেন বলে দাবি করলেও তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য তিনি দিতে পারেননি।  

শুক্রবারের ওই হামলায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্য আলমগীর ও প্রদীপ এবং গাড়িচালক আব্দুর রাজ্জাককে দেখতে রোববার হাসপাতালে যান আইজিপি শহীদুল।

সেখানে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “অভিযানে নিহতরা, আমরা প্রাথমিকভাবে মনে করছি, তারা জেএমবির সদস্য এবং জেএমবির সদস্য হিসেবেই আমরা তাদের খুঁজছিলাম।”

ঢাকায় নজিরবিহীন এই হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের নামে দায় স্বীকারের বার্তা আসে ইন্টারনেটে। হামলাকারী ৫ জনকে নিজেদের সদস্য হিসেবে তুলে ধরে তাদের ছবিও প্রকাশ করা হয়।

ঢাকায় রমজানে হামলার হুমকি এবং হামলাকারীদের ছবি প্রকাশের পরও তাদের আই্‌এস সংশ্লিষ্টতা নাকচ করার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পুলিশ প্রধান বলেন, “এটাই এখন আমরা জানি, তদন্ত শেষে আমরা চূড়ান্ত মত দিতে পারব। এখন পর্যন্ত তারা আমাদের কাছে জেএমবির সদস্য।”

বিএনপি-জামায়াতে জোট সরকার আমলে রাজশাহীকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) ২০০৫ সালে সারাদেশে একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছিল।

এই দলটি পরে নিষিদ্ধ করা হয়। দলটির আমির শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইসহ শীর্ষনেতাদের পরে বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জেএমবির কোনঠাসা হয়ে পড়ার মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলাটিম নামে আরেকটি জঙ্গি দল সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন হামলায় তাদের সম্পৃক্তকতার খবরও দিতে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এরপর গত দেড় বছর ধরে কয়েকটি হত্যাকাণ্ডে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আইএসের নামে ইন্টারনেটে বার্তা আসা শুরু হলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা তা উড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশে আইএসের উপস্থিতি প্রমাণের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়।  

এতদিন উড়িয়ে দিলেও গুলশান হামলার দায় স্বীকার এবং পুলিশের আগেই হামলাকারীদের ছবি আইএস দেওয়ার পর আইজপি সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় বলেন, “এখন তো পৃথিবী ওপেন, যে কোনো লোক, যে কোনো সময় নেটওয়ার্কের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে।

“ইন্টারন্যাশনাল টেরোরিস্ট গ্রুপের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের সেটা জানা নেই।”

হামলাকারী হিসেবে আইএস যাদের নাম দিয়েছে, তাদের মধ্যে ঢাকার মোহাম্মদপুরের এক আওয়ামী লীগ নেতার সন্তান কয়েকমাস ধরে নিখোঁজ বলে থানায় জিডি হয়েছিল। আইএস তার ছবিতে আবার অন্য নাম দিয়েছে। 

এসব বিষয়ে পুলিশের কোনো তৎপরতা ছিল কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নে শহীদুল বলেন, “মোহাম্মদপুরের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে। এদের তো নিক নেম, ছদ্মনাম থাকে। আমরা তো তাদের পুরো ঠিকানা জানি না কোথায় বাড়ি, গ্রাম।

“এই ছয়জনকে আমরা জঙ্গি বলে সন্দেহ করছি। পাঁচজনকে আমরা এই ঘটনার আগে থেকে খুঁজছিলাম।”

অভিযানে ছয় জঙ্গি মারা যাওয়ার কথা বলা হলেও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সাংবাদিকদের কাছে পাঁচজনের ছবি রোববার পাঠানো হয়।

“অফিসিয়ালি কোনো ছবি দেওয়া হয়নি। তারপরও আপনারা পেয়েছেন,” বলেন পুলিশ প্রধান।