সঠিক ধরেছি কি না, তা যাচাইয়ে বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

মাহমুদা আক্তার মিতুর স্বামী এসপি বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে ধোঁয়াশার প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, সন্দেহভাজন খুনিদের গ্রেপ্তারের পর যাচাইয়ের জন্যই তাকে ডেকে নেওয়া হয়েছিল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2016, 12:18 PM
Updated : 27 June 2016, 12:22 PM

গত শুক্রবার মধ্যরাতে আকস্মিকভাবে ঢাকায় শ্বশুরের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত এসপি বাবুলকে।

পরদিন বিকাল পর্যন্ত তার মোবাইল ফোন সচল না হওয়ায় স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল। এনিয়ে নানা গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে দেখা দেয় বিভ্রান্তি।

মধ্যরাতে এভাবে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে পুলিশের কোনো স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এরপর শনিবার সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কয়েকজন আসামির সামনে মুখোমুখি করে এই পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে রোববার ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, তদন্তের ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ’ হিসেবে মামলার বাদী বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এরপর আবার হত্যাকাণ্ড ও তদন্তস্থল চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি নাকচ করে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাবুল আক্তারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, তবে এটাকে জিজ্ঞাসাবাদ বলা যায় না। 

বাবুল আক্তার

তবে বাবুলের সঙ্গে কী নিয়ে কথা বলা হয়েছে, সে বিষয়ে তদন্তের স্বার্থে কিছুই প্রকাশ করতে রাজি হননি চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার, যেখানে কিছু দিন আগেও দায়িত্ব পালন করে আসেন বাবুল। 

পুলিশের রাখঢাকের মধ্যে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, “যাদের ধরেছি, তাদের সঙ্গে বাবুল আক্তারের কথা বলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা কেন খুন করেছে, সেজন্য..।”

রাতের বেলায় নিয়ে ১৫ ঘণ্টা কেন রাখা হয়েছিল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি যেটুকু বলেছি, আপনারা তার উত্তর পেয়েছেন।

“সন্দেহভাজন ধরলে তা আসলে সঠিক ধরেছি কি না সেজন্য বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়েছিল।”

বাবুল আক্তারের মোবাইল ফোন বন্ধ রাখাসহ সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “আমি যতটুকু জানি, সেটুকু বলেছি। এরপর আবার জানলে আবার বলব।”

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার ইকবাল রোববারের ওই সংবাদ সম্মেলনে বাবুলের স্ত্রী মিতুর দুই খুনিকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানান, যারা পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের মামলায় এর আগে দুজনকে গ্রেপ্তারের খবর জানালেও নতুন গ্রেপ্তার মোতালেব মিয়া ওয়াসিম ও আনোয়ার হোসেনকে কখন, কোত্থেকে গ্রেপ্তার করা হয়, সে বিষয়ে পুলিশ কিছু বলেনি।

ওয়াসিম (ডানে) ও আনোয়ারকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয় রোববার

তবে মন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট, এই দুই যুবককে শুক্রবার রাতের আগেই গ্রেপ্তার করা হয়। কেননা তাদের যাচাইয়ের জন্য ওই রাতে বাবুলকে ডেকে নেওয়া হয়েছিল।  

আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, “বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে যারা খুন করেছেন, সেই খুনের সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করা গেছে এবং দুই-একজনকে আমরা ধরেছি। আরও দুই-একজন ভবিষ্যতে ধরা পড়বে বলে আমরা সুনিশ্চিত।”

চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার বলেছেন, এসপিপত্নী বাবুলের স্ত্রী খুনে সরাসরি জড়িত ছিলেন ওয়াসিম ও আনোয়ার। আরও সাত-আটজন  জড়িত ছিলেন, যাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

চট্টগ্রামে জিইসি মোড়ে এসপি বাবুলের স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিদের প্রথমে সন্দেহ করছিল ‍পুলিশ। হত্যার ধরন এবং বাবুলের জঙ্গিবিরোধী তৎপরতার কারণে এই ধারণা হয়েছিল। তবে এখন বলা হচ্ছে, জঙ্গি নয়, গ্রেপ্তার আনোয়ার ও ওয়াসিম পেশাদার অপরাধী।