ক্রসফায়ার নয়, বিচার চান অজয় রায়

অভিজিৎ রায়ের একজন ‘খুনি’ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ায় সান্ত্বনা খুঁজলেও আইনি প্রক্রিয়ায় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের দাবি জানিয়েছেন তার বাবা অধ্যাপক অজয় রায়।

মাসুম বিল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2016, 10:03 AM
Updated : 21 June 2016, 01:28 PM

তিনি মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কোনো ক্রসফায়ার মানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। বিবেকবান হিসাবে আমরা এটা চাইব না।”

“আমরা সন্তুষ্ট হব যেদিন হত্যাকারীদের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। মহামান্য আদালত তার অপরাধের মাত্রা দেখে শাস্তি দেবেন। এ কাজটা না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য হিসাবে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারব না,” বলেন অজয় রায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রায় দেড় বছর পর সন্দেহভাজন খুনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য মুকুল রানার (শরীফ) পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় একথা বলেন এই অধ্যাপক।   

মুকুল রানা এবং তার আগের দিন আনসারুল্লাহর আরেক সদস্য গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিমের নিহত হওয়া নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। বিএনপি এই ঘটনাগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।  

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সমর্থন না করলেও সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে বন্দুকযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি হতে পারে বলে মনে করছেন অজয় রায়। 

“কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্রসফায়ারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মারা যায়, পুলিশও অনেক সময় মরে। ওভাবে আমরা চাইনি, তাকে জীবন্ত ধরার চেষ্টা করার উচিত ছিল। একে জীবিত ধরতে পারলে হত্যার অনেক রহস্য বের হত। পুলিশ সেটা পারেনি, এতে যৌক্তিক কারণও নিশ্চয় আছে। হয়ত ওই সময় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল।”

“আমাদের পুলিশও বলেছে, জঙ্গিরা তাদের চেয়ে মেধাবী, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও শক্তিশালী অস্ত্রের অধিকারী,” এ প্রসঙ্গে বলেন তিনি।

জঙ্গি কায়দায় বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে পুলিশের ‘সাঁড়াশি অভিযানের’ পরপরই গত রোববার ভোররাতে ঢাকার মেরাদিয়ায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শরীফুল নামে একজনের নিহত হওয়ার খবর আসে।

পরে গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের এই সদস্য গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন। ঘটনার সময়ে ধারণ করা একটি ভিডিওতে তার উপস্থিতি দেখা গেছে।    

এরপর নিহতকে শনাক্ত করে সাতক্ষীরার একটি পরিবার জানায়, এ তাদের সন্তান মুকুল রানা, যাকে চার মাস আগে যশোর থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল। 

অভিজিতের সন্দেহভাজন যে ছয় খুনির ছবি গত মে মাসে পুলিশ প্রকাশ করে তাদের বিষয়ে তথ্যের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, তাতে মুকুলের নামও ছিল।

গোয়েন্দাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় কথা বলার ভিত্তিতে অজয় রায় নিশ্চিত, শরীফুল নামের আড়ালে থাকলেও মুকুলই তার ছেলের খুনি।  

“আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী একবছর আগে তিন খুনির ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করে। বাবা-মার তথ্যও এতে আছে। এটা সায়েন্টিফিক ওয়েতে করেছে, এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। হত্যাকারীর ডিএনএ প্রোফাইল তাদের কাছে আছে। আইডেনটিটি সম্পর্কে কোনো অনিশ্চয়তা নাই।”

একজন ‘খুনি’ নিহত হলেও আরও দুজন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন দাবি করে তিনি বলেন, পুলিশ হয়ত তাদের জীবিত ধরার চেষ্টা করবে।

অভিজিতের পাশাপাশি ফয়সাল আরেফিন দীপন, অনন্ত বিজয় দাশসহ সব হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চেয়েছেন সন্তানহারা অজয় রায়।

“সবগুলোর তদন্ত চলছে দীর্ঘকাল, কিন্তু তদন্তের কোনো দৃশ্যমান ফল আমরা পাচ্ছি না। তাদেরকে ধরা, আদালতে হাজির করা, পুলিশ প্রসিকিউশনে দাঁড় করানো এসব কাজগুলো হচ্ছে না। কাজে তদন্তের অগ্রগতিতে একজন ক্ষতিগ্রস্ত হিসাবে আমাদের পুরোপুরি সন্তুষ্টির জায়গাটা নাই।”

খুনিরা বিদেশে পালিয়েছে- কিছুদিন আগে ডিএমপি কমিশনারের এমন বক্তব্যের সমালোচনাও করেন অভিজিতের বাবা।

“কিছুদিন আগে ডিএমপি কমিশনার একটা স্টেটমেন্ট দিলেন, অভিজিতের খুনিরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে, ও আসল কোত্থেকে? এই যে উজবুকের মতো স্টেটমেন্ট করেন!”

‘নজরদারিতে’ থাকা জঙ্গিরা কীভাবে বিদেশ গেল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অজয় রায়।