উগ্রপন্থিদের রুখতে তারুণ্যে ভরসা অজয় রায়ের

জঙ্গি কায়দায় একের পর এক হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে উগ্রপন্থিদের রুখতে তরুণ সমাজকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অজয় রায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2016, 12:43 PM
Updated : 19 June 2016, 05:20 PM

জঙ্গি হামলায় সন্তান হারানো এই অধ্যাপক বলেছেন, “যেসব উগ্রপন্থি আমাদের এই বাংলাদেশকে ভিন্নখাতে, ভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে, আমাদেরকে তা রোধ করতে হবে। এজন্য প্রগতিশীল দলসমূহ, ছাত্রসংগঠনগুলো এবং সর্বোপরি জনগণকে কাতারবন্দি হয়ে এই উগ্রপন্থিদের প্রতিরোধ করতে হবে।

“আমার আবেদন, তরুণ সমাজের কাছে..যেসব ছাত্র সংগঠন আছে, যেমন ছাত্রলীগ,ছাত্রদল-ছাত্র ইউনিয়ন বলুন, আরও যেসব ছাত্র সংগঠন আছে, যুব সংগঠন আছে, তাদেরকে উগ্রপন্থিদের রুখতে পথে নামতে হবে।”

রোববার শাহবাগে গণগ্রন্থাগারে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের প্রতি এই আহ্বান জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপক, যিনি নিজেও সক্রিয় আছেন এই ভূখণ্ডের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে। 

সন্তান হারানোর দুঃখ চেপে নিজের সক্রিয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি শক্ত মানুষ, আমি এখন এইসব উগ্রপন্থিদের রুখার জন্য যখন যেখানে যাওয়ার দরকার, করা দরকার... এখনও সেই উগ্রপন্থিরা আমাকে বিরত করতে পারেনি।”

অজয় রায়ের ছেলে বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক অভিজিৎ রায়কে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ লেখালেখির জন্য জঙ্গিদের হুমকির মুখে ছিলেন।

অভিজিতের পর তার বইয়ের এক প্রকাশককে একইভাবে হত্যা করা হয়। এরপর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, বিদেশি, হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান যাজক, বৌদ্ধ ভিক্ষু, শিয়া ও আহমদিয়া মুসলিমরাও। জঙ্গিরাই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।

‘শিল্পিত’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে বাবা দিবস ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী এ আর খানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর এই অনুষ্ঠানে ছেলে অভিজিৎসহ সব ব্লগার হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানান পদার্থবিদ অজয় রায়।

বাবা দিবসে সন্তান হারানোর কষ্টের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “সন্তান হারানোর কষ্ট, নিজের কষ্ট, এটা আমাকে অনুভব করতে দিন।

“উন্মাদ ব্যক্তি অভিজিৎকেই শুধু হত্যা করেন নাই, দেশের একজন বরণ্যে তরুণ উদীয়মান লেখককে হত্যা করেছে। বেঁচে থাকলে দেশকে অনেক কিছুই দিতে পারত, তাকে হত্যা করেছে। অনেক মুক্তমনা লেখককে হত্যা করেছে।”

“আমি শেখ হাসিনা সরকারের কাছে আবেদন রাখব, দাবি রাখব, এই অন্যায় এবং হত্যার অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়া দাঁড় করাতে হবে। তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করতে হবে। আমরা যে বিচারহীনতার কৃষ্টি বা সংস্কৃতি গড়ে তুলছি, এ থেকে বাহিরে বেরিয়ে আসতে হবে।”

শিল্পিত-এর সভাপতি ওসমান গণির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ডা. এ আর খান, বাংলাদেশ বেতারের সাবেক উপ-পরিচালক আশফাকুর রহমান খান, বেসিক ব্যাংকের ডিজিএম মরিয়ম বেগম ও অভিনেত্রী নূতন প্রমুখ।