পুরস্কারের প্রথম ‘জঙ্গি’ গ্রেপ্তার টুটুল হত্যাচেষ্টায়

এক মাস আগে যে ছয় সন্দেহভাজন জঙ্গি সদস্যকে ধরিয়ে দিতে পুলিশ পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, তাদের মধ্যে প্রথম একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টার অভিযোগে।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2016, 05:43 AM
Updated : 16 June 2016, 12:01 PM

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার সুমন হোসেন পাটোয়ারি ওরফে সিহাব ওরফে সাকিব ওরফে সাইফুল নামের ২০ বছর বয়সী ওই যুবক নিষিদ্ধ জঙ্গি দল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে জড়িত।

বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকার বিমানবন্দর থানা এলাকা থেকে সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

তিনি বলেন, “প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের স্বত্ত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ টুটুলকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে।”

বৃহস্পতিবার দুপুরের পর সুমনকে আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিন হেফাজতের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে হাকিম পাঁচ দিন হেফাজতের অনুমতি দেন। 

এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন,  সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে হাজির করে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

গত ১৯ মে এক নোটিসে সুমন ওরফে সিহাবকে ধরিয়ে দিতে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।  তাকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকদের কেউ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে কি না- সে তথ্য জানা যায়নি।

মাশরুকুর রহমান খালেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সুমনের বাড়ি চাঁদপুরে হলেও সে বড় হয়েছে চট্টগ্রামের হালিশহরে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করা এই তরুণ আন্দরকিল্লায় একটি মেডিকেল ইকুইপমেন্টের দোকানে সেলসম্যানের কাজ করে আসছিলেন।

“জিজ্ঞাসাবাদে সে বলেছে, টুটুলকে সে নিজে তিনবার কোপ দিয়েছিল। ওই ঘটনায় তারা অংশ নিয়েছিল পাঁচজন; ব্যবহার করেছিল চাপাতি। পরে পাশের একটি মসজিদে ঢুকে সেই রক্তাক্ত চাপাতি ধোয়ার কথাও সুমন বলেছে।”

গতবছর ৩১ অক্টোবর লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে টুটুল এবং তার সঙ্গে থাকা ব্লগার তারেক রহিম ও রণদীপম বসুকে কুপিয়ে জখম করে হামলাকারীরা।

একই দিনে হামলা হয় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে। লালমাটিয়ার ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শাহবাগে জাগৃতির কার্যালয়ে এর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপনের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়।

এ দুটি প্রকাশনা সংস্থা থেকে লেখক অভিজিৎ রায়ের কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে, যিনি নিজেও গতবছর ফেব্রুয়ারিতে একইভাবে খুন হন। 

হামলার একদিন পর মোহাম্মদপুর থানায় টুটুলকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা করে তার পরিবার। সে সময় থেকেই পুলিশের সন্দেহ ছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে ঘিরে।

বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল বলেন, গত ১৯ ফ্রেব্রুয়ারি বাড্ডার সাতারকুল ও মোহাম্মদপুরে দুটি ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা বিভাগ জানতে পারে, আস্তানা দুটি আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের ‘সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ ও ‘বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।

ওই অভিযানে গ্রেপ্তার আনসারউল্লাহর দুই সদস্যের দেওয়া তথ্যে ঢাকার আশকোনা ও দক্ষিণখানে  এবং  চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আরও সাতজনকে।

“তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যেই বিমানবন্দর থানার ওভার ব্রিজ এলাকার একটি বাসস্ট্যান্ড থেকে গত রাতে সুমন ওরফে শাকিব ওরফে সিহাব ওরফে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়্। সে মোহাম্মদপুরের আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।”    

আহমেদুর রশীদ টুটুল সুস্থ হয়ে চলে গেছেন দেশের বাইরে

শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢোকার পথ

গত ১৯ মে সুমন ওরফে সিহাবসহ আনসারুল্লাহর ছয় সদস্যকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করেও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এই ছয় ‘জঙ্গি’ অভিজিৎ রায় থেকে শুরু করে কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান-মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যায় জড়িত। আগে গ্রেপ্তার আনসারুল্লাহ সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ছয়জনের নাম পাওয়া গেছে। 

ওই ছয়জনের মধ্যে শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে শরিফ ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী-১ এবং সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী-২ এর জন্য পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

আর সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আব্দুস সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সালমান ওরফে সাদ, সিহাব ওরফে সুমন ওরফে সাইফুল এবং সাজ্জাদ ওরফে সজিব ওরফে সিয়াম ওরফে শামসের জন্য দুই লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করে ডিএমপি।

অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যে ছয়জনের ছবি তারা প্রকাশ করেছিলেন, তাদের অনেকের বিষয়েই তারা তথ্য পেয়েছেন। কারও কারও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানাও পাওয়া গেছে।

বাকি পাঁচ জঙ্গিকে ধরতেও অভিযান চলছে জানিয়ে উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, শিগগিরই আরও সাফল্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা।