ফ্লাইওভারে ‘চেপে’ মগবাজারের যানজট তেজগাঁওয়ে

ঢাকঢোল পিটিয়ে রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের সাতরাস্তা-হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল অংশ চালু হলেও একে এখন মাথা ব্যথার কারণ বলছেন তেজগাঁওবাসী।

ওবায়দুর মাসুমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2016, 03:28 AM
Updated : 9 June 2016, 03:28 AM

মহাখালী থেকে ফ্লাইওভার পর্যন্ত সড়কে প্রতিদিনই যানজটে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ, গাড়িচালক ও সাধারণ মানুষকে।

পুলিশের ভাষ্য, চালুর পর ফ্লাইওভারে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ফ্লাইওভার মগবাজারের যানজট তেজগাঁও এলাকায় নিয়ে এসেছে।

ফ্লাইওভারের এই অংশ চালুর পর এ পথে গাড়ির সংখ্যা আগের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক) উপ-কমিশনার প্রবীর কুমার রায়।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফ্লাইওভার থেকে নেমে গাড়িগুলো খুব দ্রুত চলে আসে। একটি রাস্তা দিয়ে বেশি গাড়ি চলাচলের কারণেই যানজট লাগে।”

গত ৩০ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দীর্ঘতম এই ফ্লাইওভারের রমনা থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশের উদ্বোধন করেন।

বুধবার দুপুরে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়, লাভ রোড সিগন্যাল, তিব্বত, মহাখালী বাস টার্মিনাল হয়ে মহাখালী পর্যন্ত যানজট দেখা গেছে।

তেজগাঁও ফ্লাইওভার হয়ে লাভ রোড পর্যন্তও যানবাহনের সারি। এছাড়া মহাখালী থেকে লাভ রোড সিগন্যাল হয়ে বিজয় সরণিমুখী যানবাহনও আটকে আছে।

তিব্বত, নাবিস্কো মোড়ে অনেক গাড়ি ঘোরানোর কারণে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে গাড়ি বের হওয়ার সুযোগ দিতেও দুদিক থেকে আসা যানবাহন আটকে দেওয়া হয়।

তিব্বত সিগন্যালে দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবল মাজহারুল ইসলাম জানান, ফ্লাইওভার চালুর পর থেকেই এ সড়কে যানজট বেড়েছে।

“ফ্লাইওভার থেকে নেমে এখানে এসেই গাড়িগুলো থেমে যায়।”

গাড়িচালক এবং যাত্রীরা জানালেন, যানজট অনেক সময় ফ্লাইওভার হয়ে অন্যপ্রান্তে রমনা পর্যন্ত চলে যায়।

তিব্বত এলাকায় উইনার ট্রান্সপোর্টের বাসচালক নাসির উদ্দিন বলেন, “যেদিন ফ্লাইওভার চালু হইল, ওইদিন থেইকা এই রাস্তায় জ্যাম শুরু হইল।”

অটোরিকশা চালক মো. হাসিব তালুকদার জানান, কাকরাইল থেকে ফ্লাইওভার পর্যন্ত কোনো যানজট ছাড়াই এসেছেন। তবে আর এগোতে পারেননি।

এই ফ্লাইওভার কোনো কাজে আসছে না বলে মত এ পথের যাত্রী খিলক্ষেতের বাসিন্দা মোয়াজ্জেম হোসেনের, যিনি এই পথে নিয়মিতই চলাচল করেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফ্লাইওভার যদি বনানীর কাকলী পার করে দেওয়া হত তাহলে মানুষের উপকার হত। এখন কোনোই লাভ হয় নাই। আগে মগবাজার আটকে থাকতাম, এখন সাতরাস্তা পার হয়ে আটকে থাকি।”

শুধু ফ্লাইওভার বানিয়ে ঢাকার যানজট নিরসন করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক সারোয়ার জাহান।

“গত ১০ বছর ধরে বলে আসছি, শুধু ফ্লাইওভার করে যানজট কমানো যাবে না। যানজট কমাতে হলে প্রাইভেটকার কমাতে হবে, বাড়াতে হবে গণপরিবহন।”

দ্রুত বাস র‍্যাপিড ট্রান্সপোর্ট (বিআরটি) চালু, নগরবাসীর ফুটপাতে চলাচল নিশ্চিত করা গেলে যানজট কমে যেত বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, “এ কাজগুলো করতে ফ্লাইওভারের মতো এত বেশি টাকা খরচ হবে না। কিন্তু ছোট ছোট পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে সরকারের আগ্রহ কম।”

এদিকে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের সবগুলো অংশ চালু হলে যানজট কমবে বলে মনে করেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ কায়কোবাদ হোসেন।

তিনি বলেন, “আগে উত্তরা, গুলশান ও বনানীমুখী যানবাহন বেশিরভাগ কারওয়ান বাজার হয়ে যেত। সেসব যানবাহনের একটা অংশ এ ফ্লাইওভার ব্যবহার করায় চাপ বেড়েছে।

“আমাদের মূল ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হলে উত্তরা ও বনানী, গুলশান থেকে আসা যানবাহন মালিবাগ-শান্তিনগর হয়ে চলবে।”

তিন দফায় এ  প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ার পাশাপাশি ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২১৯ কোটি টাকা। নির্মাণ কাজের মধ্যেই নকশায় ত্রুটি নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ, সমালোচনা।

নগরীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকায় বিশাল নির্মাণ কাজের ভোগান্তি আর যানজটের ধকল থেকে রেহাই পেতে নাগরিকরা অধীর আগ্রহ নিয়ে ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। 

সব মিলিয়ে আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চার লেনের এ ফ্লাইওভারে ওঠা-নামার জন্য তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, রমনা (হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল সংলগ্ন রাস্তা) ছাড়াও সোনারগাঁও হোটেল, মগবাজার, বাংলামোটর, মালিবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ও শান্তিনগর মোড়ে লুপ বা  র‌্যাম্প রাখা হয়েছে।