‘শেষ ভালোর’ চেষ্টা ইসির

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শতাধিক লোকের প্রাণহানির পর শেষ ধাপে এসে ‘সর্বোচ্চ সতর্ক ব্যবস্থা’ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2016, 12:22 PM
Updated : 3 June 2016, 03:11 PM

শনিবার ৬৯৮ ইউপিতে ভোটের আগেরদিন এ নির্দেশ এল।

সেই সঙ্গে অনিয়মের অভিযোগে এএসপি ও ওসি পর্যায়ের দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।

প্রভাব খাটানোর অভিযোগে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ইউপি ভোট বন্ধ ও সাংসদের বিরুদ্ধে মামলার পর শেষ ধাপকে কেন্দ্র করে এসব ব্যবস্থা নেওয়া হল।

ফেব্রুয়ারিতে প্রথম পর্বের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১০০ জনের প্রাণহানির তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে। সহস্রাধিক লোকের আহত হওয়ার পাশাপাশি রয়েছে গোলযোগ, অনিয়মের অভিযোগও।

অনিয়ম-সহিংসতা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরকে দোষারোপ করে এলেও নির্বাচনের পাঁচটি ধাপে তা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় সমালোচনার মুখে রয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী এই সংস্থা।

এমন পরিস্থিতিতে প্রথমবারের মত অয়োজিত দলভিত্তিক ইউপি নির্বাচনকে বিএনপি যখন ‘তামাশার ভোট’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে, তখন ক্ষমতাসীনদের কণ্ঠে ঠিক তার উল্টো ভাষ্য- ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’।

ভোটের মধ্যে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের এই সংঘর্ষ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার, শনিবার সারাদেশে ৭১৭টি ইউনিয়নে একযোগে ভোটগ্রহণ চলে।

অবশ্য ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার-  এমন প্রবাদ মেনে শেষ ধাপে ‘ভালো কিছু’ করে দেখাতে চায় নির্বাচন কমিশন। তারই প্রতিফলন দেখা গেছে স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে পাঠানো সংস্থাটির চিঠিতে।

শুক্রবার ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান ওই চিঠি পাঠান।

চিঠিতে বলা হয়, ইতোমধ্যে চলমান ইউপি নির্বাচনে পাঁচ পর্ব শেষ হয়েছে। ৪ জুন ষষ্ঠ ও শেষ পর্বের ভোট হবে। পঞ্চম পর্বের ভোটেও বিভিন্ন স্থানে সংঘাত, হানাহানি ঘটেছে এবং কিছু প্রাণহানি হয়েছে, যা কোনও মতেই কাম্য নয়।

“এ অবস্থায় শেষ পর্বের ইউপি নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়- তজ্জন্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।”

প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এ চিঠির অনুলিপি পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ র্যা ব, আনসার, বিজিবি মহাপরিচালককেও পাঠানো হয়।

দুই পুলিশ প্রত্যাহার

শেষ ধাপের ভোটের আগের দিন প্রত্যাহার করা দুই পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন টাঙ্গাইলের গোপালপুর সার্কেলের এএসপি জমিরউদ্দিন সরকার।

তার জায়গায় উপযুক্ত কর্মকর্তা নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে ইসি।

ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত ইসির নির্দেশ স্বরাষ্ট্রসচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে।

সেই সঙ্গে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। সহিংসতা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দিয়েছি। আশা করি, ভালো নির্বাচন হবে শেষধাপে।”

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। (ফাইল ছবি)

নির্বাচন কমিশনের ‘কঠোর বার্তায়’ শেষ পর্বে হলেও ‘ভালো’ ভোটের ‘আশা’ দেখছেন পর্যদবেক্ষক মহল।

পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ভোটে অনেক সহিংসতা হয়েছে; অনেক অনিয়ম, প্রভাব খাটানোর ভোট হয়েছে। শেষ পর্বে এসে এবার অন্তত ইসির বোধোদয় হবে। শেষটায় নিশ্চয়ই এমন কিছু করবেন যাতে ভালো নির্বাচন হয়।”

তিনি জানান, “বাঁশখালীতে একজন সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। শেষে এসে একটা কঠোর বার্তা দেওয়াও উচিত।

“শেষটায় ভালো করা ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অনিয়মে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না- এমন বার্তা নিশ্চিত করতে হবে। আর কোনও সহিংসতা নয়- শেষটা ভালো করতে পারে কিনা তার অপেক্ষায় থাকলাম আমরা।”

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদও এরই মধ্যে বলেছেন, কোনও ধরনের অনিয়মে ছাড় দেওয়া হবে না।