চ্যানেল নিউজ এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার এই ছয়জনকে আদালতে হাজির করা হলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
এর মধ্য দিয়ে দেশটির সন্ত্রাসবিরোধী আইনে প্রথম কেউ বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।
এই ছয় বাংলাদেশি হলেন- মিজানুর রহমান (৩১), লিয়াকত আলী মামুন (২৯), রুবেল মিয়া (২৬), দৌলতুজ্জামান (৩৪), মো. জাবেদ কায়সার হাজি নুরুল ইসলাম সওদাগর (৩০) ও ইসমাইল হাওলাদার সোহেল (২৯)।
স্ট্রেইটস টাইমস জানিয়েছে, শুক্রবার দুপুরে কড়া পাহারার মধ্যে আর্মার্ড ট্রাকে করে ওই ছয়জনকে আলাদা গাড়িতে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।
তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের জন্য ‘অর্থ সংগ্রহ ও সরবরাহের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া রুবেল ও জাবেদের বিরুদ্ধে একই আইনের অন্য একটি ধারায় জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সরঞ্জাম রাখার অভিযোগ এনেছে সিঙ্গাপুরের পুলিশ।
দেশটির সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, এই বাংলাদেশিরা নিজেদের ‘ইসলামিক স্টেট ইন বাংলাদেশ (আইএসবি)’ নামে এক গোপন সংগঠনের সদস্য বলে দাবি করেছেন। তারা পুলিশকে বলেছেন, দেশে ফিরে সন্ত্রাসী হামলা চালানোরও পরিকল্পনায় ছিলেন তারা।
গত এপ্রিলে ওই ছয়জনের সঙ্গে সোহাগ ইব্রাহিম (২৭),শরিফুল ইসলাম (২৭) নামে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করে সিঙ্গাপুরের পুলিশ। তবে সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মে মাসের শুরুতে এক বিবৃতিতে গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশ করে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আট বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের পর সিঙ্গাপুরের পুলিশ তাদের ঔপনিবেশিক আমলে তৈরি ‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনে’ গ্র্রেপ্তার দেখায়। ওই আইনে দীর্ঘদিন বিনা বিচারে আটকে রাখার সুযোগ রয়েছে।
শুক্রবার ছয়জনকে আদালতে হাজির করা হলে তাদের মধ্যে পাঁচজন দোভাষীর সহায়তা নিয়ে বাংলায় বলেন, তারা আদালতের কাছে দোষ স্বীকার করতে চান।
আগামী মঙ্গলবার এ মামলার শুনানিতে তারা দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে পারেন বলে চ্যানেল নিউজ এশিয়ার খবরে বলা হয়।
অন্যদিকে মামুন আদালতের কাছে দাবি করেছেন, তিনি কখনোই কোনো জঙ্গি অর্থের লেনদেনে ছিলেন না।তার বিষয়ে আরও শুনানির জন্য ৯ জুন পরবর্তী তারিখ রেখেছে আদালত।
সিঙ্গাপুরের পুলিশ বলছে, অভিযুক্তদের মধ্যে মিজানুর এস-পাসধারী মাঝারি পর্যায়ের দক্ষ কর্মী, বাকিরা সবাই ওয়ার্ক পারমিটধারী আধাদক্ষ শ্রমিক।
পুলিশের অভিযোগে মিজানকেই ইসলামিক স্টেট ইন বাংলাদেশ নামের কথিত সেই সংগঠনের মূল ব্যক্তি বলা হচ্ছে। বাকিদের তিনিই এ দলভুক্ত করেন।
তাদের গ্রেপ্তারের পর সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, মিজানুরের কাছে বাংলাদেশের সরকার ও সামরিক কর্মকর্তাদের একটি তালিকা পাওয়া গেছে, যাদের উপর হামলার পরিকল্পনা তারা করেছিল।
“তাদের ইরাক বা সিরিয়ায় যাওয়ার ভাবনা থাকলেও সেখানে যাওয়া কঠিন মনে হওয়ায় মত পাল্টে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে খেলাফত কায়েমের পরিকল্পনা করেন।”
এই গোষ্ঠীর অন্তত আরও দুজন সদস্য বাংলাদেশে রয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
মিজানুরের কাছ থেকে বোমা তৈরি ও অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশিকা এবং জিহাদের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পুস্তিকা উদ্ধারের কথা জানিয়ে সেই বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সিঙ্গাপুরে আইএসবির সদস্য সংগ্রহের কাজে এগুলোর ব্যবহার শুরু করেন তিনি।
“তারা দল ভারী করতে বাংলাদেশি নাগরিকদের সদস্য করার পাশাপাশি বাংলাদেশে হামলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অর্থও সংগ্রহ করতেন, যেগুলো জব্দ করা হয়েছে।”
‘জিহাদি জিনিসপত্র’ পাওয়ায় ও ধর্মের জন্য সশস্ত্র হামলা ‘সমর্থন’ করায় আরও পাঁচ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করার কথা জানানো হয় ওই বিবৃতিতে। তবে তদন্তে আইএসবির সঙ্গে সম্পৃক্ততা না মেলায় গতমাসেই তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
ওই পাঁচজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে বাংলাদেশের পুলিশ।