তারা বলছেন, হত্যার পেছনে জামিলের স্ত্রী মৌসুমী আক্তারের পরকীয়াও আরেকটি কারণ।
গত ৩ মে ভোর রাতে চকবাজার থানাধীন ৫৯ ওয়াটার ওয়ার্কস রোডে একটি ফ্ল্যাট থেকে পলিথিন মোড়ানো অবস্থায় ব্যবাসায়ী জামিল আহমেদের (৩৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
জামিল স্ত্রী ও পাঁচ বছর বয়সী শিশু সন্তান নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। চকবাজারে হার্ডওয়্যারসহ বিভিন্ন সামগ্রীর একটি দোকান চালাতেন জামিল।
এ ঘটনায় এ পর্যন্ত জামিলের স্ত্রী মৌসুমীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্য তিন জন হলেন, জামিলের দুই বন্ধু আসলাম ও আলামিন এবং মৌসুমীর ভগ্নিপতি জুয়েল।
মৌসুমী, আসলাম ও আলামিন বর্তমানে কারাগারে আছেন। আর বৃহস্পতিবার জুয়েলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঘটনার পর মৌসুমী দাবি করেন, আসলাম ও আলামিন তার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করে তাকে শাসিয়ে গেছে।
খুনের তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শুক্রবার চকবাজার জোনের পুলিশের সহকারী কমিশনার কানিজ ফাতেমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মৌসুমীর বড় বোনের স্বামী জুয়েলকেও বৃহস্পতিবার ভোরে হাজারীবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, মূলত মৌসুমীর পরিকল্পনায় জামিলকে খুন করা হয়েছে বলে জুয়েল জানিয়েছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “৩ তারিখ মৃতদেহ উদ্ধার করা হলেও মৌসুমী ও জুয়েল জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে জামিলকে খুন করা হয় ২ মে ভোর রাতে।
“পরে দিনভর মৌসুমী দোকানে ও জামিলের স্বজনদের কাছে ফোন করে জানায়, সকালে জামিল বাসা থেকে বের হয়েছে কিন্তু ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
“পরে রাতে থানায় এসে মৌসুমীর কথা শুনে সন্দেহ হলে তার বাসায় গিয়ে খাটের নিচ থেকে জামিলের মৃতদেহ উদ্ধার করে।”
ব্যবসায়ী জামিল
জামিলের স্ত্রী মৌসুমী
“রাত ২টার দিকে জামিল ঘুমিয়ে পড়ার পর মৌসুমী তার ভগ্নিপতি জুয়েলকে ফোনে ডেকে আনেন। মৌসুমী নিজেই ভবনের প্রধান ফটক খুলে দেন। পরে জুয়েল এক পেশাদার ভাড়াটে খুনিকে নিয়ে দোতলার জামিলের ঘরে ঢুকে।”
জিজ্ঞাসাবাদে মৌসুমী পুলিশকে বলেছেন, “ঘুমন্ত জামিলের পেটে ছুরিকাঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি চিৎকার দিয়ে জেগে উঠে ছুরিটি হাতে নিয়ে নেন এবং চিৎকার করে বলতে থাকেন- ‘মৌসুমী তোমরা ঠিক আছ তো, আমাকে বাঁচাও’। এসময় জামিলের হাতে থাকা ছুরিতে জুয়েলের পায়ে আঘাত লাগে।”
স্বামীর এমন আকুতি শুনেও এগিয়ে আসেননি মৌসুমী।
“উল্টো রান্না ঘর থেকে বটি এনে পেশাদার খুনির হাতে দেয়। তখন ওই খুনি এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পরে গলা কেটে জামিলকে হত্যা করে,” বলেন চকবাজার জোনের পুলিশের সহকারী কমিশনার কানিজ ফাতেমা।
এদিকে জুয়েল জানিয়েছে, এই খুনের জন্য মৌসুমী ওই ভাড়াটে খুনি ও তাকে চার লাখ টাকা দিয়েছে।
ডাকাতির পর খুনের পরিকল্পনা
পুলিশে কর্মকর্তা কানিজ বলেন, এই ফ্ল্যাটে মৌসুমীর পরিকল্পনায় সাত মাস আগে একবার ডাকাতি হয়েছিল, যা করিয়েছিলেন মৌসুমী নিজেই।
জিজ্ঞাসাবাদে জুয়েল জানিয়েছেন, ডাকাতরা জামিলদের ফ্ল্যাটে ঢুকে তার হাত-পা বেঁধে টাকা-পয়সা ও অলংকার লুট করে নিয়ে যায়। তবে ওই কথিত ডাকাতির সময় জুয়েল ভবনের বাহিরে ছিল বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছে।
আর লুটের মালামাল ও টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয় জুয়েল ও মৌসুমী।
বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর জুয়েল জানিয়েছেন, ওই ডাকাতির ঘটনার পরই জামিলকে হত্যার পরিকল্পনা করে মৌসুমী।
খুনের কারণ ‘পরকীয়া ও টাকা’
খুনের কারণ জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ মোরাদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “জামিল যে ব্যবসা করতেন সেখানে প্রায় সত্তর লাখ টাকা পুঁজি ছিল।
মৌসুমীর ভগ্নিপতি জুয়েল
জামিলের স্ত্রী মৌসুমী
অর্থ ছাড়া অন্য কোনো কারণ এ খুনের সঙ্গে যুক্ত কিনা জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, “এই পর্যন্ত যা পেয়েছি তা হলো- পরকীয়ার কারণে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল মৌসুমী, আর ভগ্নিপতি বখাটে হওয়ায় তাকে ব্যবহার করেছেন তিনি।”
অবশ্য মৌসুমীর সঙ্গে কার পরকীয়া ছিল তা এখনই জানাতে চাচ্ছে না পুলিশ।
মুহাম্মদ মোরাদুল ইসলাম বলেন, “মৌসুমী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়ে এখন কারাগারে আছেন। জুয়েলের স্বীকারোক্তির পর বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।”
সেই পেশাদার খুনির পরিচয় জানা গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “খুনিকে গ্রেপ্তার করতে পারলে আরও অনেক কিছু জানা যাবে।”