এগিয়েছে রোয়ানু, ৪ নম্বর সংকেত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের কাছ থেকে কিছুটা উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে সরে এসে সাগরের পশ্চিমমধ্য ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2016, 03:59 PM
Updated : 20 May 2016, 02:16 AM

অধিদপ্তরের বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের বিশেষ বুলেটিনে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে জারি করা ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সঙ্কেত বহাল রাখা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়টি কিছুটা সরে এসে মধ্যরাতে পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছিল বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়।

এ সময় ঘূর্ণিঝড়টির অবস্থান ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১১৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে।

গভীর নিম্নচাপ থেকে বুধবার গভীররাতে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে, যাতে তারা স্বল্প সময়ের নির্দেশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।

বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে হবে।

চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেতের মানে হচ্ছে- বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনও আসেনি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এটি কখন, কোথায় আঘাত হানতে পারে- তা নিয়ে আগাম কিছু বলা যাচ্ছে না।

“ঘূর্ণিঝড়টি ভারত-বাংলাদেশ ঊপকূলে আঘাত হানার শঙ্কা যেমন রয়েছে, তেমন প্রচুর বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এ নিয়ে চূড়ান্ত পূর্বাভাসের আগে আরও কিছু সময় পর্যবেক্ষণ করতে হবে।”

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দপ্তর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলের তালিকা অনুযায়ী এ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রোয়ানু’। মালদ্বীপ এ নামটি প্রস্তাব করেছিল।

মংলায় জাহাজে মালামাল উঠানামা বন্ধ

বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাগেরহাটসহ উপকূলীয় এলাকায় থেমে থেমে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝেমধ্যে বইছে দমকা হাওয়া। উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগর।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন এবং মংলা বন্দরের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, চার নম্বর হুঁশিয়ারি সঙ্কেত জারির পর বন্দরে সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বন্দরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বন্দরের সব নৌযান নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। বন্দরে সব ধরনের জাহাজে মালামাল উঠানামা বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে বিকালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভায় জানানো হয়, জেলার সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জেলায় ১৬টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। দুর্যোগকালীন সময়ে যাতে মানুষ আশ্রয় নিতে পারে এজন্য ২৩৫টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জেলার নয়টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। চিকিৎসক ও সেচ্ছাসেবক দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায়ও সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মামুন উল-হাসান, সহকারী পুলিশ সুপার সাদিয়া আফরোজ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আফতাব উদ্দিন ও বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সভাপতি শাহ্ আলম টুকু উপস্থিত ছিলেন।