সাংসদসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নয়: হাই কোর্ট

নারায়ণগঞ্জের এক স্কুল শিক্ষককে কান ধরিয়ে উঠ-বস করানোর ঘটনায় সাংসদ সেলিম ওসমানসহ যাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে হাই কোর্ট।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2016, 10:05 AM
Updated : 18 May 2016, 07:07 PM

পাশাপাশি ওই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিল করতে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। 

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বুধবার এই আদেশ দেয়।

স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বন্দরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসিসহ বিবাদীদের দুই সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে হবে।

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে একদল লোক মারধর করে। পরে তাকে কান ধরিয়ে উঠ-বস করান স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমান।

দেশজুড়ে ওই ঘটনার প্রতিবাদ ও দোষীদের বিচার দাবির মধ্যেই মঙ্গলবার সেই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ জড়িত অন্যদের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

ওই শিক্ষককে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে ১৪ দল বলেছে, ওই কাজ করে সেলিম ওসমান সাংসদ পদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন।

শিক্ষক লাঞ্ছনার ওই ঘটনায় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন বুধবার দুপুরে আদালতের নজরে আনেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান ও মহসীন রশিদ। শুনানিতে তাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সোয়েব আহমেদ ও ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজীম।

রাষ্ট্রপক্ষে এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

আদালতের আদেশে বলা হয়, “অমানবিক ও নিগ্রহজনক ওই ঘটনা আমাদের বিচারিক বিবেকে নাড়া দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিবাবক। সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে আমরা আমাদের চোখ বন্ধ রাখতে পারিনা। গণমাধ্যমে  প্রকাশিত ঘটনা বিবেচনায় দেখা যায়, এটি একটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদে এ ধরনের কাজে নিষেধ করা হয়েছে।”

অবশ্য পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেছিলেন, ওই ঘটনায় কোনো ‘ফৌজদারি অপরাধ’ তিনি দেখছেন না। সুতরাং সেখানে পুলিশের ‘করার কিছু নেই’।

আদেশের অনুলিপি দ্রুত সংশ্লিষ্টদের পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেছে, বিষয়টি ২৯ মে আবার তালিকায় আসবে।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান আদেশের পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো নাগরিককেই জনসম্মুখে এ রকম শাস্তি দেওয়া যায় না। এটি সংবিধানের ৩৫(৫) ও ১১ অনুচ্ছেদের চরম লঙ্ঘন।... আদালত বলেছে, এ ধরনের ঘটনা কারও কাছে কাঙ্ক্ষিত নয়।”

সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে ‘বিচার ও দণ্ড সম্পর্ক রক্ষণ’ বিষয়ে বলা হয়েছে। ৩৫(৫) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো ব্যাক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না কিংবা কারও সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার করা যাবে না। আর সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে বলা আছে।