পানামা পেপার্স: বাংলাদেশিদের বিষয়ে অনুসন্ধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

আলোচিত পানামা পেপার্সের নথিতে নাম থাকা বাংলাদেশিদের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2016, 12:13 PM
Updated : 15 May 2016, 12:13 PM

রোববার অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমনটি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। কমিটির পক্ষ থেকে দ্রুত অনুসন্ধান শেষ করে জড়িতদের তালিকা ও প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য বলা হয়েছে।

“কমিটির পরবর্তী বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।”

চলতি মাসের শুরুতে  পানামা পেপার্স নিয়ে প্রকাশিত একটি তথ্যভাণ্ডারে অন্তত ১৮ বাংলাদেশির পাওয়া যায়, যারা বিদেশি ঠিকানা ব্যবহার করে শেল কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার হয়েছেন।

দি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিং জার্নালিস্টস (আইসআইজে)ফাঁস করা পানামা পেপার্স থেকে দুই লাখের বেশি অফশোর কোম্পানি, ট্রাস্ট ও ফাউন্ডেশনের তথ্যভাণ্ডার প্রকাশ করে।

একই সঙ্গে মোস্যাক ফনসেকার মতো আরও দুটি ফার্মে নিবন্ধিত এক লাখের বেশি কোম্পানি, ট্রাস্ট ও ফাউন্ডেশনের তথ্য প্রকাশ করা হয়।

বিশ্বের মোট ২১টি কর অঞ্চলে নিবন্ধিত তিন লাখের বেশি অফশোর কোম্পানি, ট্রাস্ট ও ফাউন্ডেশনে যাদের নাম এসেছে, তারা আইন ভেঙে সম্পদ গড়েছেন- এমনটা বলছে না আইসিআইজে, তবে অর্থ পাচার করতে বা কর ফাঁকি দিতে আইনের ফাঁক ফোকর খুঁজেছেন অনেকেই।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এরইমধ্যে জানিয়েছে তাদের একটি অনুসন্ধান দল এ নিয়ে কাজ করছে।

এবি ব্যাংককে তলব

এদিকে বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংকের অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটিতে তলব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংসদীয় কমিটি।

কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “কমিটির পরবর্তী বৈঠকে এবি ব্যাংককে আমরা ডাকব।”

একটি জাতীয় দৈনিকের প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, অফশোর ইউনিট থেকে চার বিদেশি কোম্পানির নামে ৪ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৩৪০ কোটি) বের করে নেওয়া হয়েছে।

ঋণের অর্থ অন্য হিসাবে পাচার করা হয়েছে। অর্থ পাচার হয়েছে সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

প্রতিষ্ঠান চারটি হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের গ্লোবাল এমই জেনারেল ট্রেডিং ও সেমাট সিটি জেনারেল ট্রেডিং, সিঙ্গাপুরের এটিজেড কমিউনিকেশনস পিটিই লিমিটেড ও ইউরোকারস হোল্ডিংস পিটিই লিমিটেড। এ ঋণের অন্যতম সুবিধাভোগী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের মালিকানাধীন প্যাসিফিক মোটরস। তিনি এবি ব্যাংকেরও সাবেক চেয়ারম্যান।

১৬ মিলিয়ন ডলার ফেরত ‘পাচ্ছে’ বাংলাদেশ

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, “বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ইতিমধ্যে ফেরত পাওয়া গেছে এবং আরও প্রায় ১৬ মিলিয়ন ডলার ফেরত পাওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে।”

কমিটি চুরির জন্য দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে অর্থ ফেরত আনার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদেরকে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার জোর সুপারিশ করে।

এছাড়া এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বৈদেশিক মুদ্রায় পরিচালিত অফশোর ব্যাংকিং এর সার্বিক ঝুঁকি হ্রাস এবং তুলনামূলকভাবে মুক্ত ও সহজ অফশোর ব্যাকিং সুবিধার সার্বিক সুফল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান অফশোর ব্যাকিং নীতিমালা সময়োপযোগী করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ গ্রহন করেছে বলে বৈঠকে জানানো হয়।

আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে  বৈঠকে কমিটির সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আব্দুল ওয়াদুদ, টিপু মুন্সি, ফরহাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং আখতার জাহান বৈঠকে অংশ নেন।

এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।