চাকরিতে ঢোকার বয়সসীমা ৩০ বছরই থাকছে

শিক্ষার্থীদের মধ্যে একদল সরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এলেও তা হচ্ছে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2016, 01:51 PM
Updated : 4 May 2016, 03:22 PM

জাতীয় সংসদে বুধবারের প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা বলেছেন, “আমরা যুব বয়সের মেধাশক্তিকে কাজে লাগাতে চাই। এজন্য আমরা চাই সকলে সময়মতো পড়াশুনা করে চাকরিতে প্রবেশ করুক। এজন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ থেকে বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই।”

বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর এক সম্পূরক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছরের বেশি বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?

এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ‘পরিকল্পনা নেই’ জানানোর পাশাপাশি কেন নেই, তার ব্যাখ্যাও দেন।

“৩০ বছর পার করলে তো কেউ যুবক থাকে না। এরপর তো সবাই প্রৌঢ় হয়ে যায়। মাননীয় সংসদ সদস্য ওই প্রৌঢ়দের জন্য চাকরির ব্যবস্থার কথা বলছেন কি না, বুঝতে পারছি না। কারণ ৩০ বছরের পর ‍চাকরি হলে সেটা তো যুবকের জন্য চাকরি হবে না, প্রৌঢ়দের জন্য হবে।”

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়সসীমা শুরুতে ২৮ বছর ছিল। পরে তা দুই বছর বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয়। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ৩২ বছর পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ঢোকার সুযোগ রয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে একদল শিক্ষার্থী চাকরিতে ঢোকার বয়স ৩৫ বছর করার দাবি জানিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে।  

প্রধানমন্ত্রী এই দাবি মেনে না নেওয়ার যুক্তি হিসেবে বর্তমানে শিক্ষা ক্ষেত্রে সেশনজট না থাকার বিষয়টিও তুলে ধরেন।

“বর্তমানে ১৫/১৬ বছরে এসএসসি পাস করে শিক্ষার্থীরা ২৩ বছরে মাস্টার্স পাস করে ফেলছে। ফলে পড়াশুনা শেষ করতে ২৪-২৫ বছরের বেশি লাগে না। এরপরও চাকরির জন্য তাদের হাতে আরও অনেক সময় থাকে।”

প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা

আসন্ন রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার আশ্বাসও দেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও যৌক্তিক রাখার লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন তিনি।

আসন্ন রমজানে বাজার সহনীয় রাখতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে,  তাও সংসদে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি জানান, আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে টিসিবি ও ডিলারদের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীতে ২৫টি, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১০টি ও অন্য বিভাগীয় শহরে ৫টি করে ২৫টি এবং অবশিষ্ট ৫৭টি জেলা শহরে প্রতিটিতে ২টি করে ১১৪টিসহ মোট ১৭৪টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

যশোরের মনিরুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি ৯৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকা।

২০১৭ সালে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে ২০টি বাংলাদেশের জন্য ব্যবহৃত হবে এবং বাকি ২০টি মধ্যপ্রাচ্য ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে লিজ দেওয়া যাবে।

এতে বর্তমানে স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ প্রদেয় বার্ষিক প্রায় দেড় কোটি ডলার সাশ্রয়সহ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে, বলেন তিনি।

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী নির্মিতব্য পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলে অথনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।

সংসদ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী

সংসদ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে উপস্থিত সফররত কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এখানে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত আছেন। তাদের সাথে আমরা কতগুলো চুক্তি সই করেছি।

“পায়রা সেতু নির্মাণে কুয়েত আর্থিক সহায়তা দেবে। লেবুখালী সেতুও কুয়েতের অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে। এজন্য কুয়েত সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।”

পায়রা বন্দরের বহুমুখী ব্যবহার হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বন্দর প্রতিবেশী দেশগুলোও ব্যবহার করতে পারবে। এতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটবে।