‘স্পষ্ট’ ছবি নিয়ে ৪ খুনিকে খুঁজছেন গোয়েন্দারা

জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যাকাণ্ডের পর খুনিদের পালানোর সময় ধারণ করা একটি ভিডিওতে চার যুবকের ‘স্পষ্ট ছবি’ পেয়ে তাদের ধরতে মাঠে নেমেছেন গোয়েন্দারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2016, 05:25 PM
Updated : 28 April 2016, 12:13 PM

কলাবাগানে এই জোড়া খুনের তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একথা জানিয়েছেন। এই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব এদিনই গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দেওয়া হয়েছে।

গত সোমবার লেক সার্কাসে ইউএসএআইডি কর্মকর্তা সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাজের বাড়িতে এই হত্যাকাণ্ডের পর হামলাকারী যুবকরা চাপাতি উঁচিয়ে ও গুলি ছুড়ে অনেকের সামনে দিয়েই দৌড়ে পালিয়েছিলেন।

ওই সময়ে কয়েকটি ভবনের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ার পাশাপাশি কয়েক ব্যক্তি মোবাইল ফোনেও ওই দৃশ্য ধারণ করেছিলেন, যা পুলিশ ইতোমধ্যে সংগ্রহ করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি ভিডিওতে চার যুবকের চিহ্নিত করার মতো উপযোগী ছবি পাওয়া গেছে।

“যারা ওই যুবকদের দেখেছেন তাদের কয়েকজনকে ওইসব ছবি দেখিয়ে মিলিয়ে নেওয়া হয়েছে। চার যুবকের চেহারা শনাক্ত করা হয়েছে। আমরা এখন ওইসব যুবকদের পরিচয়, অবস্থান জানার চেষ্টা করছি।”

ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের খুনিদের মতো সোমবারের হামলাকারীরাও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের মতো মনে হয়েছে বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান।

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়াও বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা বেশ কিছু আলামত পেয়েছেন। তবে ‘তদন্তের স্বার্থে’ এখনি কিছু বলছেন না।

খুনিদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ব্যাগে পাওয়া মোবাইল ফোন থেকেও ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য’ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

পুলিশের সামনে দিয়েই ওই যুবকরা সেদিন পালিয়েছিলেন। তাদের  ঠেকাতে ব্যর্থ হলেও একজনকে জাপটে ধরে ব্যাগ রাখতে গিয়ে আঘাত পেয়ে পুলিশের একজন এএসআই আহত হন।

ঘটনার সময়কার একটি ভবনের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম পেয়েছে, যাতে পাঁচ যুবককে দৌড়ে যেতে দেখা গেছে।

সিসি ক্যামেরার ছবিতে দৌড়ে পালানো এক যুবক, যাকে অন্যতম খুনি বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা

 

ওই পাঁচজনকে দেখার কথা অধিকাংশজন জানালেও আরও কয়েক যুবকের থাকার কথাও প্রত্যক্ষদর্শী দু-একজনের বর্ণনায় উঠে এসেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হামলাকারী যুবকদের সংখ্যা ছিল সাত।

পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কুরিয়ার সার্ভিসের একটি পার্সেল দেওয়ার কথা বলে ওই যুবকরা জুলহাজের বাড়ি আছিয়া নিবাসে ঢুকেছিলেন।   

এরপর এক দারোয়ানকে আঘাত এবং অন্য দুজনকে নিচের একটি কক্ষে আটকে  দোতলায় জুলহাজের ফ্ল্যাটে ঢোকেন হামলাকারীরা। তখন তনয় ছাড়া ওই বাসায় ছিলেন জুলহাজের ৯০ বছর বয়সী মা ও একজন গৃহকর্মী।

যে যুবকরা বিকালে এসেছিল, তারা দুপুরেও একবার এসেছিল বলে ওই ভবনের এক বাসিন্দা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন। তবে জুলহাজ না থাকায় ফিরে গিয়ে বিকালে ফের এসেছিলেন।

পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান বলেন, “ঘড়ি ধরে মাত্র পাঁচ মিনিট তারা (হামলাকারীরা) সেখানে ছিল। জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু তনয়কে নির্মমভাবে কুপিয়ে একই পথ ধরে ডলফিন গলি দিয়ে তারা চলে যায়।”

এই ভবনেই ঘটে হত্যাকাণ্ড

পরনে জিন্সের প্যান্ট ও টি শার্ট, কাঁধে ব্যাগসহ ওই যুবকদের দৌড়ে যেতে ভিডিওতে দেখা গেছে। পুলিশের পাওয়া ব্যাগটিতে একটি পিস্তল, আরবিতে লেখা কিছু কাগজ পাওয়ার কথা ইতোমধ্যে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

গত বছর অভিজিৎ রায়সহ যাদের ঘরের বাইরে পথে একইভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, কোনো ক্ষেত্রে কোনো ভিডিওচিত্র পায়নি পুলিশ।  ঘরের ভেতরে হত্যাকাণ্ডের শিকার ফয়সল আরেফিন দীপন ও অনন্ত বিজয় দাশের ক্ষেত্রেও কোনো ভিডিও পাওয়া যায়নি।

যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যাকাণ্ডের সময় ধারণ করা একটি ভিডিও দেখে খুনি শনাক্ত করতে পারলেও গত বছর পহেলা বৈশাখে যৌন নিপীড়নের ভিডিওচিত্র দেখেও তদন্তের সুরাহা করতে পারেনি পুলিশ।

এর আগে অন্য ক্ষেত্রে খুনের সময় পুলিশের উপস্থিতি না থাকলেও এবার একাধিক পুলিশ সদস্যের সামনে দিয়ে খুনিরা পালিয়েছিলেন। ফলের তাদের দেখার সুযোগ পুলিশের পক্ষে ঘটেছে।

তবে গত বছর ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে ঢাকার তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়িতে হত্যা করে পালানোর সময় দুজনকে ধরিয়ে দিয়েছিল জনতা। ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদেরও এখনও খুঁজে পায়নি পুলিশ।