মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য বিচারকের কাছ থেকে আশা করা যায় না।”
কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী তনু গত ২০ মার্চ ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মধ্যে খুন হন। এরপর এক মাস পেরিয়ে গেলেও কাওকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
চলতি মাসের শুরুতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, তনু হত্যার ঘটনা একটি ‘আধুনিক অপরাধ’। পুরনো ফৌজদারি আইন দিয়ে এর ‘সুষ্ঠু তদন্ত কিংবা বিচার’ সম্ভব নয়।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে গতবছর অবসরে যাওয়া এই বিচারক বলেন, “দেশের সর্বোচ্চ বিচারকের কাছ থেকে এ ধরনের কথা আসায় তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে।”
সার্ব নেতা রাদোভান কারাদজিচের যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল নিয়ে ধানমন্ডিতে এই আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
মীর কাসেম আলীর যুদ্ধাপরাধ মামলার আপিলের রায় নিয়ে মন্তব্যের কারণে সরকারের দুই মন্ত্রীর দণ্ড নিয়ে আলোচনায় কথা তোলেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান।
তিনি বলেন, “গত এক দেড় মাস খুব যাতনায় ভুগেছি। দুজন মন্ত্রী দণ্ডিত হয়েছেন। এই দণ্ড আমাদের জন্য আশীর্বাদ। উনারা দণ্ডিত, আমরা গর্বিত। আই ওউন ইট।”
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত ৮ মার্চ জামায়াত নেতা মীর কাসেমের যুদ্ধাপরাধ মামলার চূড়ান্ত রায়ের আগে এক গোলটেবিল আলোচনায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চে পুনঃশুনানির দাবি তোলেন।
তবে শেষ পর্যন্ত আপিলের রায়ে মীর কাসেমের ফাঁসির আদেশ বহাল থাকে এবং অবমাননার দায়ে দুই মন্ত্রীকে দণ্ড দেয় আপিল বিভাগ।
প্রধান অতিথি অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মাইক্রোফোন নিয়ে ওই রায় প্রসঙ্গেও কিছু কথা বলেন।
ওই বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত হওয়ার পর সাবেক এই বিচারক বলেন, প্রকাশের জন্য তিনি ওই কথা বলেননি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মিটিংয়ে বক্তব্য প্রদানকালে আমি মীর কাসেমের রায় নিয়ে কোনো কথা বলি নাই। মিটিং শেষ হওয়ার পর মধ্যাহ্নভোজের সময় হাসি-ঠাট্টাচ্ছলে কিছু কথা হয়ে থাকতে পারে। সেটি মিটিং এর অংশ নেয়। সাংবাদিকদের জন্যও নয়।”
এর আগেও বিভিন্ন সময়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী।
আপিল বিভাগে থাকা অবস্থাতেই গতবছর সেপ্টেম্বরে প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে রাষ্ট্রপতির বরাবরে একটি চিঠি পাঠান তিনি। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, রায় লেখা শেষ না করায় তার পেনশন আটকে দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি।
যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের রায়ের আগে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আরেক বিচারকের কথোপকথনের একটি অডিও টেপ প্রকাশ হয় এবং এ বিষয়ে জনকণ্ঠে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
ওই অডিও টেপের অপর কণ্ঠটি বিচারপতি শামসুদ্দিনের বলে সে সময় গণমাধ্যমে খবর আসে। আদালতের শুনানিতে জনকণ্ঠের আইনজীবী অডিও রেকর্ডের শ্রুতিলিখনের অংশবিশেষ তুলে ধরেন, যাতে দুই বিচারকের মতপার্থক্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
এরপর চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রধান বিচারপতি অবসরের পর রায় লেখা বন্ধ করতে বললে বিচারপতি শামসুদ্দিন তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজ করারও অভিযোগ তোলেন তিনি।
তার এসব কথায় ‘বিচার বিভাগ ও উচ্চ আদালতের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে’ অভিযোগ করে ফেব্রুয়ারিতে এক রিট আবেদনে বিচারপতি শামসুদ্দিনের বক্তব্য-বিবৃতি গণমাধ্যমে প্রকাশ-প্রচার বন্ধের আবেদন করা হলেও হাই কোর্ট তাতে সাড়া দেয়নি।