বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধন চলবে: হাই কোর্ট

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের বেঁধে দেওয়া নিয়ম ‘যথাযথভাবে’ অনুসরণ করার নির্দেশনা এবং গ্রাহকের তথ্যের সুরক্ষায় জোর দিয়ে মোবাইল ফোন নিবন্ধনের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিকে বৈধতা দিয়েছে হাই কোর্ট।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 April 2016, 07:50 AM
Updated : 12 April 2016, 12:07 PM

এ পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা এক রিট আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের বেঞ্চ মঙ্গলবার কয়েকটি নির্দেশনাসহ এই রায় দেয়।

এই রায়ের ফলে বায়োমোট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন চলবে বলে বিটিআরসির কৌঁসুলি ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা জানিয়েছেন।

রায়ের পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “দুটি বিষয়ে বলেছে আদালত। একটি হচ্ছে বায়েমোট্রিক পদ্ধতির ব্যাপারে বিটিআরসি অপরারেটরদের যেসব নির্দেশনা দিয়েছে- সেগুলো যেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়। আর জাতীয় পরিচয়পত্র যেখানে আছে, সেখানে প্রয়োজনে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে আঙুলের ছাপ যেন সংরক্ষণ করা হয়।”

রিট আবেদনকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, “এখন যে পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ চলছে তা আরও সুরক্ষিত ও সতর্কতার সাথে করার কথা বলেছে আদালত।... তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে, যাতে গ্রাহকের তথ্যের অপব্যবহার না হয়। বিটিআরসি এ বিষয়টির তদারকি করবে।”

ভুয়া পরিচয়ে অথবা নিবন্ধন ছাড়া সিম কিনে নানা অপরাধে ব্যবহারের অভিযোগ বাড়তে থাকায় সম্প্রতি গ্রাহকদের তথ্য যাচাই ও সিম পুনঃনিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর মোবাইল গ্রাহকদের সিমের তথ্য যাচাইয়ে শুরু হয় জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ভাণ্ডার ব্যবহারের প্রক্রিয়া।

গত ১৬ ডিসেম্বর সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হওয়ায় আঙুলের ছাপ না দিয়ে এখন আর নতুন সিম কেনা যাচ্ছে না। পাশাপাশি বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুরনো সিমের পুনঃনিবন্ধন চলছে, যা এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনার কথা বলে আসছে সরকার।

এই পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন কার্যক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এস এম এনামুল হক নামের এক আইনজীবী গত ৯ মার্চ হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন, যা ১৪ মার্চ  শুনানির জন্য ওঠে। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওইদিন আদালত রুল দেয়।

তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নাগরিকদের আঙুলের ছাপ নিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধন কার্যক্রম কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের ডিজি, মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোসহ ১৩ বিবাদীকে এর জবাব দিতে বলা হয়।

রুলের ওপর ৩ ও ১০ এপ্রিল শুনানি নিয়ে আদালত ১২ এপ্রিল রায়ের জন্য দিন রাখে। এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বিষয়টি আদালতে ওঠে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বিটিআরসির পক্ষে মুরাদ রেজা ও ব্যারিস্টার রেজা-ই রাকিব। এয়ারটেলের পক্ষে ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম শুনানিতে অংশ নেন। আর রিট আবেদনকারী পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক।

আদালত নির্দেশনাসহ রুল নিষ্পত্তি করে যে রায় দিল, তাতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের কার্যক্রম বৈধতা পেল।

রিট আবেদনকারী পক্ষের যুক্তি ছিল, দেশের ছয়টি মোবাইল ফোন অপারেটরের মধ্যে পাঁচটির মালিকানাই বিদেশিদের হাতে। দেশের ৯৭ শতাংশ গ্রাহকের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে। নিবন্ধনের সময় তারা আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করলে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হতে পারে এবং তার অপব্যবহার হতে পারে।

বায়োমেট্রিক তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ মানুষের সংশয় কাটাতে সরকার ও মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে। টেলিকম প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বার বার বলে আসছেন, মোবাইল অপারেটরগুলো আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করবে না। তারা কেবল এনআইডি তথ্য ভাণ্ডারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখবে, গ্রাহকের দেওয়া তথ্য সঠিক কি না।

এরপরও যদি কোনো মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রাহকের আঙুলের ছাপের অপব্যবহার করে এবং তা প্রমাণিত হয়, সেক্ষেত্রে ওই কোম্পানিকে ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করার সুযোগ রয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সম্প্রতি আশ্বস্ত করেছেন।