‘নিয়ম অনুযায়ী’ গাড়িভাড়াও কমবে: সড়কমন্ত্রী

সরকার জ্বালানি তেলের দাম কমলে ‘নিয়ম অনুযায়ী’ গণপরিবহনের ভাড়াও কমবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 April 2016, 12:45 PM
Updated : 7 April 2016, 12:45 PM

জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম কমানোর সম্ভাব্য তারিখ জানানোর পরদিন এই আশ্বাস দিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ঢাকার এলেনবাড়িতে বিআরটিএ কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে গাড়িভাড়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নে মন্ত্রী কাদের বলেন, ঢাকার অধিকাংশ গণপরিবহন সিএনজি গ্যাসে চালিত। সে কারণে তেলের দাম কমানোর প্রভাব এসব গাড়িতে পড়বে না।

আরেক প্রশ্নে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের পুনর্নির্ধারিত মূল্য এখনও ঘোষণা করা হয়নি। তাই পরিবহনের ভাড়া কমার বিষয়টিও আলোচনার সময় হয়নি।

“তবুও নিয়মের কথা বলা যায়। তেলের দাম কমলে নিয়ম অনুযায়ী ভাড়াও কমবে। জ্বালানির দাম লিটারে এক টাকা কম/বৃদ্ধির জন্য প্রতি কিলোমিটারে ভাড়াও এক পয়সা কম/বৃদ্ধি হবে।

বুধবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সাংবাদিকদের জানান, সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম কমানোর পরিপত্র দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, “তেলের দাম ধীরে ধীরে আমরা সাশ্রয়ীভাবে দেখতে যাচ্ছি। তেলের মূল্যটাকে আমরা একটা যৌক্তিক রেটে নিয়ে যেতে চাচ্ছি।”

গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ও যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের অগ্রগতি দেখতে এদিন বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়েছিলেন মন্ত্রী কাদের।

গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের ‘দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ’ গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।

“মোবাইল কোর্ট, মামলা, ডাম্পিং ইত্যাদি পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি করতে না পারলে কোনো লাভ নেই।

“এমন কৌশল গ্রহণ করতে হবে যাতে একটি শাস্তিতে ১০ জন সতর্ক হয়ে যায়। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ও যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনাই আমাদের মূল টার্গেট।”

‘পরিবারপ্রতি গাড়ির সংখ্যা খসড়া ‘

অনুষ্ঠানে ঢাকা ও পাশের এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা, অনুমোদনহীন লেগুনা, হিউম্যান হলারের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ডাম্পিং করার নির্দেশ দেন সড়কমন্ত্রী।

তিনি জানান, পরিবারপ্রতি গাড়ির সংখ্যা নির্ধারণের বিষয়টি প্রস্তবিত সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ায় সংযোজন করা হবে। আগামী ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সে খসড়া নিয়ে নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা হবে।

চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে বিআরটিএর আয়ের হিসাবও সাংবাদিকদের কাছে এসময় তুলে ধরেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, মোটরযান কর ও ফি বাবদ চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই থেকে মার্চ) প্রায় সাড়ে ১২শ কোটি টাকা আয় করেছে বিআরটিএ। গত অর্থবছরে একই খাতে এক হাজার ৬০ কোটি টাকা আয় করেছিল সরকারি এই দপ্তর।

মোবাইল কোর্টের পরিধি বাড়ছে

যাত্রীদের কাছ থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায়, নগর পরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগের পর সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান বাড়িয়েছে বিআরটিএ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিআরটিএর অভিযান আরও জোরদারে নতুন ১১টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এতোদিন ৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিনে ও রাতে অভিযান পরিচালনা করে আসছিলেন।

মোবাইল কোর্টের অধীনে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৭ হাজার ৭৫০টি মামলা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ৮৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৩০১ জন চালককে। ডাম্পিংয়ে দেওয়া হয়েছে ৭১২টি গাড়ি।

অনুষ্ঠানে বিআরটিএর কার্যক্রমের কিছু তথ্যও তুলে ধরেন মন্ত্রী। সেগুলো হচ্ছে

* যানবাহনে ডিজিটাল নম্বর প্লেট সংযোজনের সময়সীমা ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি।

* মার্চ পর্যন্ত ১২ লাখ ২০ হাজারের বেশি আরএফআইডি ট্যাগ ও ডিজিটাল নম্বর প্লেট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে সংযোজন করা হয়েছে আট লাখ ৪০ হাজার।

* মার্চ পর্যন্ত চার লাখ ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেইট প্রস্তুত করা হয়েছে। বিতরণ করা হয়েছে দুই লাখ ৩ হাজার।

* ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ১১ লাখ ১৩ হাজার ডিজিটাল স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।

* ঢাকা শহরে এখন ৪০০ ট্রাক্সিক্যাব চলছে।