রিজার্ভ চুরির তদন্তে ফিলিপিন্স যাচ্ছেন সিআইডির ৩ কর্মকর্তা

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় রাজধানীর মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিআইডির তিন কর্মকর্তা মঙ্গলবার ফিলিপিন্স যাচ্ছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2016, 07:39 PM
Updated : 21 April 2016, 10:03 AM

এছাড়া অর্থ জালিয়াতির এ ঘটনায় তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত দলের শিগগিরই শ্রীলংকায় যাওয়ার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।

ফিলিপিন্সগামী তিন সদস্যের তদন্তদলে রয়েছেন সিআইডির ডিআইজি সাইফুল আলম, বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ হেল বাকী এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হানুল ইসলাম।

ডিআইজি সাইফুল আলম সোমবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তদন্তকাজে তারা তিনজন ফিলিপিন্সের উদ্দেশে মঙ্গলবার রাতে রওয়ানা হচ্ছেন। তারা সেখানে অন্তত ১০ দিন অবস্থান করবেন। তবে ২/১ দিন কমবেশিও হতে পারে।

চুরি হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনাই তাদের মূল উদ্দেশ্য জানিয়ে ডিআইজি বলেন, সেখানে এই ঘটনা নিয়ে যারা তদন্ত করছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলা ছাড়াও তথ্য আদান প্রদান করা হবে।

এ ঘটনায় ফিলিপিন্সে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তাদের সাথে কথা বলবেন কিনা এ ধরনের এক প্রশ্নের জবাবে সাইফুল বলেন, “সেখানে আইন রয়েছে। সেই আইনে সেখানেও বিচার চলছে। পরিস্থিতি বলে দেবে সেখানে কি করতে হবে।”

এদিকে রিজার্ভ লোপাটের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই সদস্যের একটি দল দেশটিতে রয়েছেন।

তাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করা হবে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডি কর্মকর্তা সাইফুল বলেন, “তারা তাদের লক্ষ্য নিয়ে সেখানে গেছেন, আমরা যাচ্ছি আমাদের লক্ষ নিয়ে। তবে প্রয়োজন হলে সে অনুযায়ী কাজ করা হবে।”

ফেব্রুয়ারির শুরুতে ভুয়া নির্দেশনা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্সের রিজল কর্মাশিয়াল ব্যাংক পাঠানো হয়।

(বাঁ থেকে) বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা, বিএসপির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভিসেন্তে অ্যাকুইনো, ম্যানিলায় বাংলাদেশ মিশনের উপ প্রধান শাহনাজ গাজী, এএমএলসির সদস্য ইমানুয়েল দুক ও নির্বাহী পরিচালক জুলিয়া বাকে-আবাদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা, কিমের আইনজীবী ভিক্টর ফার্নান্দেজ ও ইনোসেনসিও ফেরার। ছবি: ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বিএসপি)

রিজল ব্যাংকের চারটি অ্যাকাউন্ট থেকে ওই অর্থ ক্যাসিনোর জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ফিলিপিন্সের মুদ্রা ব্যবস্থায় মিশে যায় বলে স্থানীয় পত্রিকাগুলি খবর প্রকাশ করে। অর্থ উদ্ধারে দেশটির মুদ্রা পাচার কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সিনেটের একটি কমিটি  কাজ করে যাচ্ছে।

সিনেট কমিটির কয়েকটি শুনানির পর ইতোমধ্যে রিজার্ভ চুরির অর্থ থেকে দুই দফায় প্রায় ৫৫ লাখ ডলার ফেরত দিয়েছেন ক্যাসিনোর জাঙ্কেট অপারেটর কিম অং, যাকে এ ঘটনার মূল হোতা বলা সন্দেহ করা হচ্ছিল।

তবে শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে চীনা ও ম্যাকাওয়ের দুই জাঙ্কেট অ্যাজেন্টের নাম বলেছেন অং, যাদের কাছ থেকে ‘ধার উসুল’ হিসেবে না জেনে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া ওই অর্থ নিয়েছিলেন বলে দাবি তার।

সুইফট ম্যাসেজে জালিয়াতির মাধ্যমে পাঠানো ভুয়া নির্দেশনার একটিতে শালিকা ফাউন্ডেশন নামে শ্রীলংকার একটি বেসরকারি সংস্থার অ্যাকাউন্টেও ২০ মিলিয়ন যায়। তবে ফাউন্ডেশন বানানে ভুল থাকায় চূড়ান্তভাবে ওই আটকে যায়।

এ বিষয়ের তদন্তে শ্রীলংকায় যে তিন সদস্যের যাওয়ার কথা শোনা গেছে তাদের মধ্যে ইন্টারপোল বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি)’র এক কর্মকর্তা এবং সিআইডিতে কর্মরত বিশেষ পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপার পদ মর্যাদা থাকতে পারেন বলে জানা গেছে।

তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি এনসিবির সহকারী মহাপুলিশ পরিদর্শক (এআইজি) রফিকুল ইসলাম গণি।

“তাদের যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, তবে কখন যাওয়া হবে- সে বাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।”

শ্রীলংকায় তদন্ত দল কী কী বিষয়ে কাজ করবে তা নিয়ে সংশ্লিস্টদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান গণি।