গত চার বছর প্রথমে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ, এরপর জাবেদ আলী ও আবু হাফিজ এবং সর্বশেষ আবদুল মোবারকের স্বাক্ষর শেষে ফাইল যাচ্ছিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কাছে।
তবে সম্প্রতি এতে আপত্তি জানিয়েছেন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।
তিনি বলছেন, সব কমিশনারই সমান মর্যাদার; তাই সপ্তাহান্তে স্বাক্ষরের ক্রমও পরিবর্তন করতে হবে।
আগে যোগ দেওয়ায় ১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া জাবেদ আলী ফাইলে সই করেন ১৯৫০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণকারী শাহনেওয়াজের পরে।
জ্যেষ্ঠতায় এগিয়ে আবু হাফিজ ১৯৪৯ সালের ৩০ জুন ও আবদুল মোবারক ১৯৪৭ সালের ১ জুন জন্ম নেন।
এরই মধ্যে কমিশনারদের কার আগে কে ফাইলে সই করবেন- সে সমাধান চেয়ে ইসি সচিবের কাছে ‘আনঅফিসিয়াল নোট’ দেন শাহনেওয়াজ।
নোটের অনুলিপি কমিশনারদের কাছে বিতরণও করা হয়েছে।
জানতে চাইলে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ধরনের একটি ইউও নোট পেয়েছি। বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নজরে আনা হবে। এরপরই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”
মো. শাহনেওয়াজ ও জাবেদ আলী
“যেহেতু একই আদেশে কমিশনারদের নিয়োগ করা হয়েছে সেহেতু জটিলতার কারণে কেউ পরে যোগ দিলেও সরকারি নিয়ম অনুসারে তার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয় না। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার অবকাশ রাখে” ইসি সচিব বরাবর ইউও নোটে একথা লেখেন নির্বাচন কমিশনার ।
রোববার সকালে সিইসির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনারদের বৈঠকের পর বিকাল ৪টায় আরেক দফা বৈঠক হয়।
বৈঠকের পর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ইসি সচিব জানান, সিইসি সার্বিক সিদ্ধান্ত নেন, ফাইল অনুমোদন করেন। এক্ষেত্রে রেওয়াজ অনুযায়ী ক্রমানুসারে তা মেনে চলা হয়।
“আমরা যেহেতু ফাইল উপস্থাপন করি, সেজন্য বিষয়টিতে নজর দিতে নির্বাচন কমিশনার মহোদয় আমার বরাবর ইউও নোটটি দিয়েছেন। তবে সিদ্ধান্ত পেতে আমাকে সিইসির নজরে আনতেই হবে। তার মতামতেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ ও জাবেদ আলী ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যোগ দেন।
এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়ে যোগ দেন মো. শাহনেওয়াজ।
ইসির যে কোনো সিদ্ধান্ত অনুমোদনে প্রথমে ফাইল যায় কমিশনার শাহনেওয়াজের কাছে। পরে জাবেদ আলী ও আরও দুই নির্বাচন কমিশনার ঘুরে তা যায় সিইসির কাছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি ইউপি নির্বাচনের এক সিদ্ধান্ত অনুমোদন নিয়ে জাবেদ আলী ও শাহনেওয়াজের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সবার আগে শাহনেওয়াজ সই করার পর জাবেদ আলীর কাছে ফাইলটি আটকে যায়।
এ বিষয়ে সচিব বলেন, “এখানে জুনিয়র-সিনিয়রের বিষয়টি এভাবে বিবেচিত হয় না। আমরা দেখেছি, সিইসির পরে ১, ২ নম্বর এভাবে ক্রম থাকে। বয়সের বিষয়টিও আমলে আনা যাবে না। বিধি ও প্রথা অনুযায়ী যিনি আগে শপথ নিয়েছেন তিনি সবার আগে ক্রমে থাকবেন।”
কমিশনার শাহনেওয়াজের অনুরোধের পর বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
সচিব সিরাজুল বলেন, “এক সপ্তাহ পরপর বাইরোটেশন ফাইল স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া নেওয়ার বিষয়টি সিইসি মহোদয়ের বিবেচনার ওপর নির্ভর করবে।”
তবে স্বাক্ষর প্রক্রিয়া পাল্টালে ফাইল ব্যবস্থাপনায় নতুন জটিলতা হতে পারে বলে মনে করছেন ইসি কর্মকর্তারা।
একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, এমনিতেই যে কোনো ফাইল অনুমোদনে বেশ জটিলতা পোহাতে হয় তাদের। সর্বোচ্চ ৫ সদস্যের ইসি হওয়ায় তা নিয়ে এই জটিলতা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, “এখন নতুন করে কমিশনারদের ক্রম সপ্তাহে সপ্তাহে পরিবর্তন হলে ফাইল কার কাছে রয়েছে, তা কতদিনে অনুমোদন হবে- এসব নিয়ে জগাখিচুড়িতে পড়তে হবে।”
বিচারপতি এম এ আজিজ কমিশনে সিইসিসহ সর্বোচ্চ ছয় সদস্যের ইসি ছিল ২০০৬ সালে। তখন এতো বড় কমিশন নিয়ে কঠোর সমালোচনায় পড়তে হয় তৎকালীন সরকারকে।
এরপর এটিএম শামসুল হুদার কমিশন ছিল তিন সদস্যের। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান সংশোধন করে সিইসিসহ ৫ সদেস্যর ইসি গঠনের বিধান করে।
রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সব দলের সঙ্গে সংলাপ করে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বে ইসি গঠন করে তাদের নিয়োগ দেন। অবশ্য দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও শরিকদের সমলোচনার মুখে থাকতে হয়েছে কাজী রকিবের ইসিকে।