স্বাধীনতা পদক নিলেন মুহিত, গুণসহ ১৫ জন

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে এবং জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ ১৫ জন এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ভূষিত করা হলো স্বাধীনতা  পুরস্কারে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2016, 05:54 AM
Updated : 24 March 2016, 05:52 PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এবারের পুরস্কারজয়ী এবং তাদের প্রতিনিধিদের হাতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা তুলে দেন।

১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সংগঠক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে এই পদক দেওয়া হয়েছে এবার।

৮৩ বছর বয়সী মুহিত তিন দফায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে মোট নয়বার জাতীয় বাজেট দিয়েছেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এবার স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন পাটের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করে সাড়া ফেলে দেওয়া বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম। তোষা ও দেশি পাটের জীবন রহস্য আবিষ্কারের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি তার এই মরণোত্তর পুরস্কার।

প্রয়াত মাকসুদুলের পক্ষে তার স্ত্রী রাফিয়া হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে রাষ্ট্রের এই সর্বোচ্চ পদক নেন।

মন্ত্রিসভার আরেক সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রমানিক এবার এ পুরস্কার পেয়েছেন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য।

মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ১৯৭১ সালে ভারতের মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্প, অপারেশন ক্যাম্প ও শরণার্থী ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনের জন্য তাকে এই স্বীকৃতি।

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা ও সমাজসেবক মরহুম মৌলভী আচমত আলী খান। তার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেন আচমত আলীর সন্তান নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।

সুপারসনিক এয়ারক্রাফট এফ-৬ এর পাইলট এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ এয়ারফোর্স গঠন প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারী অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার বদরুল আলম বীরউত্তমও পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার।

পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন বদরুল আলম। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ১৬টি অপারেশন পরিচালনা করেন।

এ সম্মাননা পেয়েছেন ১৯৭১ সালে রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপার হিসাবে কর্মরত থাকা অবস্থায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক রাজশাহী পুলিশ লাইনস আক্রমণ প্রতিরোধে পুলিশ ফোর্স সংগঠনে নেতৃত্বদানকারী শহীদ শাহ আব্দুল মজিদ। তার পক্ষে পদক নেন তার ছেলে মামুন মাহমুদ শাহ।

রাঙামাটিতে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে নেতৃত্বদানের জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শাহাদতবরণকারী রাঙামাটির তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এম আবদুল আলীও এবার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার কন্যা নাজমা আক্তার লিলির হাতে স্বাধীনতা পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীনতার পক্ষে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার এবার সৈয়দ হাসান ইমামকে স্বাধীনতা পদক দিয়েছে।  রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী এবং রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন।

১৯৭১ সালে পাকিস্তান হাইকমিশন, লন্ডনে কর্মরত থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী এবং বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান নিজের হাতে লিখেছিলেন যিনি, সেই এ কে এম আবদুর রউফও স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন এবার। প্রয়াত চিত্রশিল্পী রউফের পক্ষে তার স্ত্রী শাহান আরা রউফ প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে স্বাধীনতা পদক নেন।

১৯৭১ সালে দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনে কর্মরত থাকাকালে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী এবং দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রথম মিশন স্থাপনকারী কে এম শিহাব উদ্দিন মরণোত্তর এ পুরস্কার পেয়েছেন। তার ভাই কে এম ফরিদ উদ্দিন অনুষ্ঠানে পদক গ্রহণ করেন।

একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী মরহুম রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম এবার স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন মাতৃভাষা ক্ষেত্রে। প্রয়াত রফিকুল ইসলামের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেন মেয়ে দিলরাজ বুলি ইসলাম।

শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ রফি খান (এম আর খান) চিকিৎসা বিদ্যায় এবার এ পুরস্কার পেয়েছেন।

আর সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে স্বাধীনতা পুরস্কার নেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, যিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ১৯৭৭ সালে প্রথম কবিতার রচয়িতা।

স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান এবং দেশের জলসীমায় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দায়িত্ব পালনরত বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠান হিসাবে এবারের স্বাধীনতা পদক পেয়েছে।

১৯৭১ সালের জুলাইয়ে প্রতিষ্ঠিত এই বাহিনীর প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে স্বাধীনতা পদক গ্রহণ করেন।

পুরস্কারজয়ী প্রত্যেকে পেয়েছেন একটি করে স্বর্ণপদক, সনদ এবং পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে দুই লাখ টাকার চেক।

তাদের পক্ষে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক সৈয়দ হাসান ইমাম অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। 

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। মন্ত্রিসভার সদস্য, সাংসদসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।