নদীর সীমায় ৩৫% খুঁটি ভুল জায়গায়

রাজধানী চারপাশের নদীগুলোর সীমানা নির্ধারণে বসানো খুঁটির ৩৫ শতাংশই ভুল জায়গায় বসেছে বলে জানিয়েছেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2016, 10:54 AM
Updated : 23 March 2016, 12:37 PM

বুধবার সচিবালয়ে নদী রক্ষা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ৩১তম সভা শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার নদীগুলোতে ৬ হাজার ৮৪৩টি সীমানা পিলার বসানোর কথা ছিল। সেখানে ৪ হাজার ৬৩টি পিলার বসানো হয়েছে। ৯৪২টিই সঠিক স্থানে স্থাপন করা হয়নি।

এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২৫ জুন হাই কোর্ট বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদী রক্ষায় ১২ দফা নির্দেশনা দেয়। সেখানে নদীতীরবর্তী অবৈধ স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি ভূমি জরিপ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়কে সমন্বিতভাবে ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে বা সিএস রেকর্ড অনুসারে নদীগুলোর সীমানা নির্ধারণ করে খুঁটি স্থাপন করতে বলা হয়।

দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীর নাব্যতা এবং নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ঠিক রাখতে পরামর্শ ও সুপারিশ করা এবং তা বাস্তবায়নের জন্য ২০১০ সালের অক্টোবরে এই টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার। টাস্কফোর্সই  আদালতের নির্দেশনা অনুসারে খুঁটি বসানোর উদ্যোগ নেয়। 

নৌমন্ত্রী জানান, নারায়ণগঞ্জে ৫ হাজার ৪১টি পিলারের মধ্যে ৫ হাজার ১১টি পিলার বসানো হয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার ১৯৮টি সঠিক স্থানে বসানো হয়নি।

ঢাকার চারপাশে বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা নদীর সীমানা নির্ধারণে বসানো ৯ হাজার ৭৪টি পিলালের মধ্যে ৩ হাজার ১৪০টি সঠিক জায়গায় স্থাপিত হয়নি; যা মোট পিলারের ৩৪ দশমিক ৬০ শতাংশ।

ভুল জায়গায় বসানো পিলারগুলো সরিয়ে আবার জরিপের মাধ্যমে নদীর সীমানা নির্ধারণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে শাজাহান খান জানান।

বুড়িগঙ্গার নদীর আদি চ্যানেল উদ্ধার করে সেখানে হাতির ঝিলের মতো ‘সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প’ নেওয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিআইডবিব্লিউটিএ এ বিষয়ে বৈঠকে একটি ধারণা উপস্থাপন করেছে।

“আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধার একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ আদি বুড়িগঙ্গা প্রভাবশালীরা দখল করে ভরাট করেছে। কঠোরভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করব।”

বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল উদ্ধারে সরকারের একটি কমিটি অনেক আগ থেকেই কাজ করছে বলে কর্মকর্তারা জানান।

শাজাহান খান জানান, ওই কার্যক্রমের তদারকির জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে একটি মনিটরিং কমিটি করা হয়েছে।

“আদি চ্যানেল দখল করে অনেকে ঘরবাড়ি তৈরি করেছে। ম্যাটাডোর কোম্পানি নদীর মধ্যে স্থাপনা করেছে; একটি মসজিদও করেছে। এই কাজগুলো যারা করেছে অমানুষের মতো কাজ করেছে।”

দখল করা জায়গাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “যেভাবে হোক আগে সীমানা পিলার দিয়ে নদীর জায়গা চিহ্নিত করা হবে, এরপর উচ্ছেদ করব।”

মন্ত্রী জানান, পাবনার বড়াল নদী ভরাট করে তিনটি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছিল, সেগুলো অপসারণে কাজ শুরু হয়েছে।

এসব রাস্তা অপসারণ করে নদীর গতিপ্রবাহ ঠিক রাখতে সেখানে সেতু নির্মাণ এবং বড়ালের তীরে ইকোপার্ক করার পরিকল্পনার কথাও জানান নৌমন্ত্রী।

তিনি নদীর জায়গা দখল করে বাড়ি-ঘর, মসজিদ-মন্দির না করতে সবাইকে অনুরোধ করেন।

নদী দখল করে স্থাপনা তৈরির সময় সরকার কেন বাধা দেয়নি- এমন প্রশ্নে হাসতে হাসতে নৌমন্ত্রী বলেন, “ওই সময় যারা ছিলেন (ক্ষমতায়) তারা বলতে পারবেন।

“রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন তার বউকে কী করে খাল বরাদ্দ দিয়েছিলেন? ওই সময় আপনারা (সাংবাদিক) তাকে ধরতেন- বউয়ের নামে খাল বরাদ্দ দিলেন কীভাবে?”

স্ত্রীর নামে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের বরাদ্দ দেওয়া খাল এখনও উদ্ধার হয়নি বলে জানান শাজাহান খান।

ঢাকার চারপাশের নদীগুলো ট্যানারির বর্জ্যের মাধ্যমে ৩০ ভাগ দূষণ হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকারিভাবে ট্যানারি স্থানান্তরে যা কিছু দরকার প্রায় সব কিছুই করা হয়েছে।

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, ৩১ মার্চের পর হাজারীবাগে কোনো ধরনের কাঁচা চামড়া ঢুকতে  না দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাংবাদিকরা জানতে চান, এরপর কাঁচা চামড়ার কী হবে।

জবাবে তিনি বলেন, “কী পদক্ষেপ নেবে, কীভাবে এটাকে মোকাবেলা করবে শিল্প মন্ত্রণালয় সে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়কে আমাদের সিদ্ধন্তের কথা পৌঁছে দিয়েছি।