নবম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দেশের ৭১৭ ইউপিতে ভোটগ্রহণ চলছে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে।
Published : 22 Mar 2016, 07:40 AM
স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে তৃণমূলের এই নির্বাচনে এবারই প্রথম চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে।
নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টায় নির্ধারিত সময়েই কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট শুরু হয়েছে, চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচনী এলাকায় রয়েছে সাধারণ ছুটি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ অনিয়ম ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনে ‘সর্বশক্তি’ প্রয়োগের নির্দেশ দিয়ে রাখলেও ভোট শুরুর আগেই লক্ষ্মীপুর, সাতক্ষীরা ও বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্র দখল করে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সকালে হাতিয়ায় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে দুই নির্বাচনী কর্মকর্তাকে গুলি করেছে দুর্বৃত্তরা। সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও বোমাবাজির খবর পাওয়া গেছে।
নির্বাচনে মোট ১৪টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও স্বাভাবিকভাবেই মূল লড়াই চলছে আওয়ামী লীগের নৌকা এবং বিএনপির ধানের শীষে। চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও সাধারণ এবং সংরক্ষিত সদস্য পদের নির্বাচন হচ্ছে নির্দলীয়।
প্রতি ভোটকেন্দ্রে ২০ জন নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়াও নির্বাচনী এলাকায় টহলে রয়েছেন পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, এপিবিএন, কোস্টগার্ড ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা।
# দেশের সোয়া চার হাজার নির্বাচন উপযোগী ইউপির মধ্যে মঙ্গলবার ৩৬ জেলার ১০১ উপজেলার ৭১৭টিতে ভোট হচ্ছে।
# নবম এই ইউপি নির্বাচনের প্রথম ধাপে আরও ১১টিতে ২৩ মার্চ ও দুটিতে ২৭ মার্চ ভোট হবে।
# ১৯৭৩, ১৯৭৭, ১৯৮৩, ১৯৮৮, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০৩ ও ২০১১ সালের ইউপি ভোট হয় নির্দলীয়।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি নবম ইউপি ভোটের প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন ঘিরে সহিংসতায় নয় জনের প্রাণহানি ও কয়েকশ লোক আহত হয়েছেন। এ কারণে ভোটের পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন পর্যবেক্ষক মহল।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ বলেন, “আমরা উদ্বেগে রয়েছি। ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। ইসিকে নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”
গত দুটি ইউপি নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আগের তুলনায় এবার ভোটের আগেই সহিংসতা হয়েছে বেশি। ইসি কার্যকর উদ্যোগ না নিলে ভোটারদের সংশয় দূর হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে ইসির উদ্যোগ নিতে হবে।
অবশ্য সিইসি রকিব বলেছেন, “ভোটের পরিবেশ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
গত ২২ নভেম্বর দলভিত্তিক স্থানীয় সরকার ইউপি নির্বাচন আইনের সংশোধনী পাস হয়। এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত বিধিমালা ও আচরণবিধি জারি করে ইসি। ১১ ফেব্রুয়ারি ছয় ধাপের ভোটের প্রথম দফার তফসিল ঘোষণা করা হয়।
এক নজরে প্রথম ধাপের ভোট তথ্য |
>> প্রথম ধাপে ৭৫২ ইউপিতে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হলেও নানা জটিলতায় বাতিল হয়েছে ও পিছিয়ে গেছে ৩৫টির। ২২ মার্চ ৭১৭টির পর ২৩ মার্চ হবে ১১টির ভোট ও ২৭ মার্চ দুটির। বাকি ২২টির ভোট আইনি জটিলতায় তফসিল থেকে বাদ দিয়েছে ইসি। |
>> এসব ইউপির ভোটে মোট প্রার্থী সাড়ে ৩৬ হাজার। চেয়ারম্যান প্রার্থী তিন হাজার ৪১ জন, সাধারণ সদস্য প্রার্থী ২৫ হাজার ৯৮৫ জন এবং সংরক্ষিত পদে প্রার্থী সাত হাজার ৬১৭ জন। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৭৩০ জন, বিএনপির ৬১০ জন ও স্বতন্ত্র এক হাজার ২৪৬ জন। |
>> ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৪ জন, সাধারণ সদস্য পদে ১৭৯ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। |
>> নির্বাচনে ভোটার এক কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার ৭৪১ জন। পুরুষ ভোটার ৫৯ লাখ ৯৫ হাজার ২৬৯ জন এবং নারী ৫৯ লাখ ৪২ হাজার ৬৯৪ জন। >> ছয় হাজার ৯৮৭টি ভোটকেন্দ্র; ভোটকক্ষ ৩৮ হাজারের বেশি। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা প্রায় এক লাখ ২১ হাজার ২০০ জন। >> আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এক লাখ ৮০ হাজারের বেশি। |
ইসি কেন্দ্রীয়ভাবে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ৪৪৩ জনকে, প্রিন্টের ৪৩৭ জনকে ও অনলাইনের ১৪২ জনকে (মোট ১০১৭ জন) সাংবাদিক কার্ড দিয়েছে। এর বাইরে স্থানীয় রিটার্নিং অফিসারে কার্যালয় থেকে কয়েক হাজার সাংবাদিক কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয়ভাবে ডেমোক্রেসি ওয়াচের ৫০ জনকে, বাংলাদেশ মানবাধিক কমিশনের ছয়জনকে, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার ছয়জনকে, ব্রতীর পাঁচজনকে ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ-জানিপপের চারজনকে (মোট ৭১ জন) পর্যবেক্ষক কার্ড দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে স্থানীয় পর্যায়ের পাঁটি সংস্থার প্রায় পাঁচ হাজার পর্যবেক্ষক কার্ড দেওয়া হয়েছে।