Published : 21 Mar 2016, 07:34 PM
তিনি বলছেন, নির্বাচনের সহিংস চরিত্র দূর করতে সময় লাগবে। নির্বাচন এখন ‘অর্থকেন্দ্রিক’ হওয়ার কারণে পেশীশক্তি খাটাচ্ছেন কোনো কোনো প্রার্থী। আর অন্যান্য দপ্তরের কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা না পাওয়ায়ও হচ্ছে নির্বাচনী সহিংসতা।
এরপরও মঙ্গলবার প্রথম ধাপের ভোটের পরিবেশ ‘পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে’ আছে দাবি কারে ভোটারদের নির্ভয়ে কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কাজী রকিব অনিয়ম ঠেকাতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন।
প্রথম ধাপের এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় অন্তত ৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে, আহত হয়েছে কয়েকশ।
নির্বাচনে সহিংসতা-অনিয়ম ঠেকাতে ইসির সাংবিধানিক ক্ষমতার প্রয়োগ বর্তমান কমিশন করছে না বলে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভিযোগ।
বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসির মিডিয়া সেন্টারে নির্বাচনের সার্বিক দিক নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন সিইসি কাজী রকিব।
তিনি বলেন, “কিছু কিছু এলাকায় ডেফিনিটলি খুব খারাপ হচ্ছে; যেখানে সহিংসতা হচ্ছে। উন্নত দেশের তুলনায় নির্বাচনের সহিংসতা আমাদের ও প্রতিবেশী দেশে বেশি। এটাকে আমরা কমিয়ে আনতে পারছি না। এটা চরিত্রগত বিষয়। এটা দূর করতে সময় লাগবে।”
তবে দলীয়ভাবে প্রথমবারের মতো ইউপি নির্বাচন হওয়ায় সহিংসতা বাড়ছে বলেও মনে করেন না কাজী রকিব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আসলে এটা খণ্ডিত চিত্র। অনেক জায়গায় উৎসবমুখর হচ্ছে। আমরা বলতে পারব না সব জায়গায় এমন (সহিংসতা) হচ্ছে। অনেক জায়গায় কিন্তু ভালো পরিবেশে ভোট করতে পারছে।”
এসময় তিনি সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে ইসির উদ্যোগ ও ‘কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার’ কথা তুলে ধরেন সিইসি।
কমিশনের বাইরে নির্বাচনী কাজে অন্যদের কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা না পাওয়ায় ‘প্রাণপণ চেষ্টা করেও’ কোথাও কোথাও গোলযোগ-সহিংসতা ঠেকানো যাচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।
কাজী রকিব বলেন, “সব ক্ষেত্রে যাতে খারাপ না হয়, আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা যাদের মাধ্যমে কাজ করি, বেশিভাগ অন্য দপ্তরের লোকজনের ওপর নির্ভর করছি। এবার অন্য ডিপার্টমেন্টের লোকদের রিটার্নিং অফিসারও করতে হয়েছে।
“তাদেরকে আমরা খুব অল্প সময়ের জন্য ট্রেনিং দেই। তাদের ওপর আমাদের তেমন কর্তৃত্বও নেই। কাজেই সেখান থেকে কাঙ্ক্ষিত সহযোগিত কিংবা, আমরা যে মাপের সেবা চাই তা পাই না। এজন্য এসব ঘটনা ঘটছে।”
এখন নির্বাচন অর্থকেন্দ্রিক হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ফলে যার গায়ে জোর বেশি তিনিই নিজেকে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি মনে করেন। এগুলোর সব সমাধান হবে ভোটারদের রায়ে। ভোটাররা ভালো ব্যক্তি নির্বাচিত করবেন। এভাবেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
নির্বাচনী সংস্কৃতির প্রসঙ্গ তুলে প্রার্থীদের উদ্দেশে কাজী রকিব বলেন, “আমাদের দেশের নির্বাচন দুর্ভাগ্যজনকভাবে সব সময় মারপিট, খুন-খারাবির চিত্র বহন করে আসছে বেশি।
“সবাই নিজেদের সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী মনে করেন, আর কারও যোগ্যতা নেই। উনি জিতলে নির্বাচন ঠিক হল। ভোটারের ওপর তা ছেড়ে দিন, তারা যাকে যোগ্য মনে করে তাকে ভোট দেবেন। তাদের রায় মেনে নিন।”
সিইসি রকিব বলেন, প্রতিটি পর্যায়ে প্রতিটি পদক্ষেপে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক ইউপি স্থগিত হয়েছে, এ সংখ্যা আরও বাড়বে।
অনিয়মের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও প্রার্থীরা মারপিটের পথ বেছে নিচ্ছ অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এ সংস্কৃতি থেকে উত্তরণ পেতে হবে আমাদের, দেশ হিসেবে, জাতি হিসেবে। এটা একদিনে হওয়ার বিষয় নয়।
“ট্রাডিশন ও কালচার গড়ে তুলতে হবে। এজন্য প্রতিটি রাজনৈতিক দল, প্রার্থীর সহযোগিতা লাগবে।”
নির্বাচনের সময় ইসির সহস্রাধিক কর্মকর্তার বাইরে প্রশাসন, পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের কয়েক লাখ লোক নিয়োজিত থাকে।
সুষ্ঠু ভোটে ইসির ব্যবস্থা
সিইসি জানান, তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত সাতজনকে এক মাস করে কারাদণ্ড ও ৬০ জনকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ওসি, ইউএনও, নির্বাচন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
এছাড়া অনেককে সতর্ক করা হয়েছে। একজন এমপির বিরুদ্ধে মামলা, একজনকে শোকজ ও এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সবার সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে বিশেষ নির্দেশ দিচ্ছি, ভোটকেন্দ্রে হাঙ্গামা সৃষ্টিকারীকে গ্রেপ্তার করতে হবে। নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে ভোটারদের জন্য।”
ভোটের আগের রাতে কারচুপি ঠেকাতে প্রয়োজনে ‘সর্বশক্তি’ প্রয়োগের নির্দেশও দেন তিনি।
স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ভোটের সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য অনিয়ম ও পক্ষপাতমূলক আচরণ বা দায়িত্বে অবহেলা করলে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব।”
মঙ্গলবার প্রথম ধাপের ৭৩২ ইউপির মধ্যে ৭১৯ ইউপিতে ভোট হবে। ২৩ মার্চ ১১ টি ও ২৭ মার্চ আরও দুটি ইউপির ভোট রয়েছে এ ধাপে।