রিজার্ভ চুরির তদন্তে হিমশিম খাচ্ছে সিআইডি

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরির মতো বিশ্বময় আলোচিত ঘটনার তদন্তে নেমে হিমশিম খাচ্ছে সিআইডি।

লিটন হায়দারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2016, 03:22 PM
Updated : 20 March 2016, 04:02 PM

এই তদন্তে সহযোগিতা নিতে এফবিআই প্রতিনিধির সঙ্গে রোববার কথা বলার পর সিআিইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, “একটা পাজল তাদের (এফবিআই) কাছে, আরেকটা পাজল আমাদের কাছে। এগুলোকে একত্রিত করাই মূল লক্ষ্য।”

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তারা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আর্থিক খাতের এই ধরনের বড় জালিয়াতির ঘটনার তদন্তের অভিজ্ঞতা তাদের নেই বললেই চলে। ফলে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ডলার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সরানোর ঘটনায় গত সপ্তাহে মামলার পর তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি।

দায়িত্ব পাওয়ার পরপররই সিআইডি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের ঢাকা প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানায়। যুক্তরাষ্ট্রও সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে।

রোববার এফবিআইয়ের একজন প্রতিনিধি মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে যান এবং প্রায় আধা ঘণ্টা বাংলাদেশের তদন্তকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, তারা বেশ কিছু বিষয় নিয়ে এফবিআইর প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেছেন।

“চুরি যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা, এটা আমাদের স্বার্থ। আর  তাদের স্বার্থ হচ্ছে একই ধরনের অপরাধ যারা করতে পারে তাদের চিহ্নিত করা।”

হ্যাকারদের শনাক্ত করা আর অর্থ ফিরিয়ে এনে এক্ষেত্রে যারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে তাদের চিহ্নিত করাই হচ্ছে এখন মূল কাজ, বলেন ডিআইজি শাহ আলম।

তিনি বলেন, এফবিআই, ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেওয়া ছাড়াও সুইফটসহ সংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে।

বলা হচ্ছে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাক করে সুইফট মেসেজের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তরের ওই বার্তা পাঠানো হয়েছিল ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কায়।

তখন বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি চেপে গেলেও ফিলিপিন্সের একটি সংবাদপত্র তাদের দেশ থেকে অর্থ পাচারের খবর ছাপালে প্রকাশ পায়, ওই অর্থ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকেরই রিজার্ভ।

চেপে রাখার সমালোচনার মুখে গভর্নর আতিউর পদত্যাগ করে চলে যাওয়ার পর গত মঙ্গলবার মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।   

বাংলাদেশ ব্যাংকে এফবিআইয়ের ফরেনসিক দল

ঘটনার ৪০ দিন পর তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে সিআইডির ডিআইজি সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনার দিনই বা তার পরের দিনই মামলা হলে অর্থ হয়ত আটকানো যেত, আর অপরাধীদের শনাক্ত করাও সহজ হত।”

তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়মিত যাচ্ছে সিআইডির দল। রোববারও বিভিন্ন নমুনা নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। 

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের গাফিলতি ধরা পড়ছে দাবি করে ডিআইজি সাইফুল বলেন, “কাউকে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।”

শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সে যাওয়া আট কোটি ডলারের অধিকাংশই জুয়ার টেবিল ঘুরে ব্যাংক চ্যানেলের বাইরে চলে গেছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

ডিআইজি সাইফুল বলেন, “অর্থ উদ্ধারের একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তবে এক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন রয়েছে।”