প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৪ মার্চ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ১৫ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে এই সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত করবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্মলেন্দু গুণকেও এবার স্বাধীনতা পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
“আগে ১৪ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করা হয়েছিল। তাদের সঙ্গে নির্মলেন্দু গুণকেও পদক দেওয়া হবে।”
সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমি ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার এই দাবিকে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং বাস্তবায়ন করেছেন বলে সম্ভব হয়েছে। উনি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়েছেন বলে এটা হয়েছে। এজন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ৭ মার্চ এবারের স্বাধীনতা পদকের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পাটের জিন নকশা উন্মোচনকারী প্রয়াত বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাসহ ১৪ বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নাম ঘোষণা করে।
ওই তালিকায় নাম না আসায় ১০ মার্চ ফেইসবুকে ক্ষোভের প্রকাশ ঘটান কবি নির্মলেন্দু গুণ, সত্তরের উত্তাল সময়ে যার কবিতা মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ছড়িয়েছিল।
‘আমাকে স্বাধীনতা পদক দিন’ শিরোনামে ওই পোস্টে তিনি লেখেন, “আমার একদা সহপাঠিনী, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার দৃষ্টে আমি প্রথম কিছুকাল অবাক হয়েছিলাম- কিন্তু আজকাল খুবই বিরক্ত বোধ করছি। অসম্মানিত বোধ করছি। ক্ষুব্ধ বোধ করছি।”
ষাটের দশকের শেষ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে একই ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন শেখ হাসিনা ও নির্মলেন্দু গুণ।
কবি লিখেছেন, “আমাকে উপেক্ষা করার বা কবি হিসেবে সামান্য ভাবার সাহস যার হয়, তাকে উপেক্ষা করার শক্তি আমার ভিতরে অনেক আগে থেকেই ছিল, এখনও রয়েছে।
“পারলে ভুল সংশোধন করুন। অথবা পরে এক সময় আমাকে এই পদকটি দেয়া যাবে, এই ধারণা চিরতরে পরিত্যাগ করুন।”
২০০০ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করেছিল জানিয়ে গুণ সেদিন বলেন, “কিন্তু সেই পদক তিনি নিজ হস্তে আমাকে প্রদান করে যেতে পারেননি। তখন নিয়ম ছিল প্রাপকের নাম ঘোষণার পরের বছর পুরস্কার দেওয়া। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন এবং ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া হাসিমুখে আমাকে একুশে পদক প্রদান করেন।”
সেই আওয়ামী লীগ গত সাত বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পরও স্বাধীনতা পদক না পেয়ে ক্ষুব্ধ নির্মলেন্দু গুণ লেখেন, “শেখ হাসিনা স্বাধীনতা পদকের মুলোটি আমার নাকের ডগায় ঝুলিয়ে রেখেছেন। কিন্তু কিছুতেই সেটি আমাকে দিচ্ছেন না।
“উনার যোগ্য ব্যক্তির তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হতে হতে আকাশ ছুঁয়েছে। কিন্ত সেই তালিকায় আমার স্থান হচ্ছে না।”
গুণের ওই ফেইসবুক পোস্ট নিয়ে আলোচনা শুরু হলে বিষয়টি সরকারের নজরে আসে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান।
একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে অবহিত করা হলে তিনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কবি নির্মলেন্দু গুণকে স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
পরে জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি চলতি বছরের স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীতদের তালিকায় গুণের নাম অন্তর্ভুক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠালে শেখ হাসিনা তা অনুমোদন করেন।
কবি নির্মলেন্দু গুণের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনেক কবিতাই বাংলার মানুষের মুখে মুখে ঘুরে চর্চিত। বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলন যখন তুঙ্গে, সে সময় তার লেখা ‘হুলিয়া’ দারুণ জনপ্রিয় হয়।
ওই কবিতায় ‘আইয়ুব খান এখন কোথায়? শেখ মুজিব কি ভুল করছেন?’ প্রশ্নের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকেই ফুটিয়ে তোলেন কবি।
পরে ‘শেখ মুজিব ১৯৭১’, ‘সেই রাত্রির কল্পকাহিনী’, ‘স্বাধীনতা- এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’, ‘আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি’ প্রভৃতি শিরোনামে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ককে নিয়ে কবিতা লিখেছেন গুণ।