তিতাসে তিন হাজার কোটি টাকার ‘গরমিল’

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড  ডিস্ট্রিবিউশান লিমিটেডের হিসাবে ছয় বছরে তিন হাজার ১৩৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকার গরমিলের তথ্য পেয়েছে জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2016, 03:51 PM
Updated : 15 March 2016, 03:51 PM

মঙ্গলবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তিতাস গ্যাস তাদের বিভিন্ন কাজে ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থ বছর পর্যন্ত ২১২টি অডিট আপত্তির কথা জানায়।

কমিটি দ্রুত এসব অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করার সুপারিশ করেছে।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শওকত আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক অডিট আপত্তি আর এর সঙ্গে জড়িত এত বিশাল পরিমাণ অডিট আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়। কমিটি দ্রুত অডিট আপত্তিগুলো নিষ্পত্তি করে জানাতে বলেছে।

সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, তিতাস গ্যাসের ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থ বছর পর্যন্ত ২১২টি অডিট আপত্তির সঙ্গে মোট জড়িত অর্থের পরিমাণ তিন হাজার ১৩৮ কোটি ৩৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

সবচেয়ে বেশি অডিট আপত্তি ছিল ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে। ওই দুই বছর মোট ৭৪টি অডিট আপত্তি ছিল, আর এর সঙ্গে জড়িত অর্থের পরিমাণ এক হাজার ৩৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

এছাড়া ১৯৭২-৭৫ থেকে ২০০৯-১০ পর্যন্ত ৩৭২টি অডিট আপত্তি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। এর সঙ্গে জড়িত অর্থের পরিমাণ ছয় হাজার ৪৩৮ কোটি ২১ লাখ ১৮ হাজার টাকা।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদক বিভাগের উপসচিব মো. শহীদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ছয় বছরে মাত্র ২১টি অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

শহীদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অডিট আপত্তি প্রতিনিয়তই নিষ্পত্তি হচ্ছে। কমিটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করে আপত্তিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

সংসদীয় কমিটিতে দেওয়া তিতাস গ্যাসের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এসব অডিট আপত্তি আর্থিক বিধি অনুসরণ না করা, সিস্টেম লস, চুরি ও ঘাটতি, মন্ত্রণালয় কর্তৃক গাড়ি ব্যবহার, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ এবং ‘অন্যান্য’ কারণ দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

কমিটি ‘অন্যান্য’ কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে বলে জানিয়েছে কমিটির সভাপতি ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী।

তিনি বলেন, “অন্যান্য কারণ বলে কিছু হতে পারে না। এটা স্পেসিফিক করতে হবে। এসব কারণ সুনির্দিষ্ট করতে তিতাস গ্যাসকে বলা হয়েছে। আসলে ওদের এত অডিট আপত্তি যে, সেগুলোর তালিকাও ঠিকমত করতে পারেনি।”

এদিকে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের (সিএজি) একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছিল। তবে একজন সহকারী পরিচালক আসায় কমিটি অসন্তোষ প্রকাশ করে কমিটি।

পরবর্তী বৈঠক থেকে মহাপরিচালক পদ মর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে একজনকে বৈঠকে অংশ নিতে বলা হয়েছে।

কমিটির বৈঠক সংক্রান্ত সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অবৈধ গ্যাস বিতরন লাইন উচ্ছেদের অংশ হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত মোট ১৯৯ টি অভিযানের মাধ্যমে প্রায় ৩১৬ কিলোমিটার পাইপ লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

কমিটি ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের মাধ্যমে অবৈধ গ্রাহক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সিস্টেম লস কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছে।

এছাড়া অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার সঙ্গে যে সমস্ত অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ এসেছে।