আলোচিত মীর কাসেমের চূড়ান্ত রায় মঙ্গলবার  

প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার কাজ নিয়ে শুনানিতে প্রধান বিচারপতির অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে তুমুল আলোচনায় উঠে আসা যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর আপিলের রায় হতে যাচ্ছে মঙ্গলবার।     

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2016, 04:19 PM
Updated : 8 March 2016, 02:18 AM

আপিলের উপর উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ রায়ের এই দিন ঠিক করে দিয়েছিল।

এই শুনানিতে প্রধান বিচারপতির বক্তব্য ধরে আপিলের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর এই নেতার মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পাওয়ার ইঙ্গিত মিলছে দাবি করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান মন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের এই অর্থ ‘জোগানদাতার’ আপিলের পুনঃশুনানি দাবি করেন তিনি। 

মন্ত্রীর ওই প্রতিক্রিয়া ধরে নানা বক্তব্য আসে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে থাকা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এই ধরনের বক্তব্য এড়িয়ে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।

সদ্য অবসরে যাওয়া এক বিচারপতির মীর কাসেমের পক্ষে আপিল শুনানিতে অংশ নেওয়ায় পর এই যুদ্ধাপরাধীকে রক্ষার ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে গণজাগরণ মঞ্চও সক্রিয় হয় রাজপথে। তবে পুনঃশুনানির দাবির পেছনেও ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে তারা।

মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল না পেলে শাহবাগে টানা অবস্থানের ঘোষণা দিয়ে ইতোমধ্যে রায়ের দিন সকাল থেকে অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবির আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।  

কামরুল ইসলাম, যার কথা ধরে তুমুল আলোচনা

এসব ঘটনার মধ্যেই সোমবার বিকালে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, রায় ঘোষণার জন্য মীর কাসেমের আপিলটি মঙ্গলবারের কার্যতালিকার এক নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।

এই বেঞ্চে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বাকি চার সদস্য হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।

২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর আপিলে আসা এটি সপ্তম মামলা, যার ওপর রায় হতে যাচ্ছে।

২৪ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড আপিলের রায়েও বহাল থাকবে বলে তারা আশাবাদী।  

“আমার মূল আর্গুমেন্ট ছিল দুটি হত্যাকাণ্ডে তাকে (মীর কাসেম) ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, সঠিকভাবে দেওয়া হয়েছে। ..বক্তব্য রেখেছি এটা বহাল রাখার জন্য।”

অন্যদিকে আসামির আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের তার আশা প্রকাশ করেছিলেন এভাবে- “যেভাবে সাক্ষ্য-প্রমাণ এসেছে, এই মামলায় মীর কাসেম আলী খালাস পাবেন।”

মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদসহ আটজনকে হত্যার দুটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তখনকার আলবদর কমান্ডার মীর কাসেমকে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল।

মীর কাসেমের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে যে ভবনটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হত, সেই ডালিম হোটেলকে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয় ‘মৃত্যুর কারখানা’।

বিচারক ওই রায়ে বলেন, “আলবদর সদস্য ও পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে ডালিম হোটেলে নিয়ে আসত আমৃত্যু নির্যাতন করার উদ্দেশ্যেই। এটাও প্রমাণিত যে, ডালিম হোটেলে আলবদর সদস্যদের পরিচালনা ও নির্দেশনা দিতেন মীর কাসেম আলী নিজে। ডালিম হোটেল সত্যিকার অর্থেই ছিল একটি ‘ডেথ ফ্যাক্টরি’।”

ডালিম হোটেল ছাড়াও নগরীর চাক্তাই চামড়ার গুদামের দোস্ত মোহাম্মদ বিল্ডিং, দেওয়ানহাটের দেওয়ান হোটেল ও পাঁচলাইশ এলাকার সালমা মঞ্জিলে বদর বাহিনীর আলাদা ক্যাম্প ও নির্যাতন কেন্দ্র ছিল।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “ডালিম হোটেলে ঘটে যাওয়া সবধরনের অপরাধের ব্যাপারে সবকিছুই জানতেন মীর কাসেম। এসব অপরাধে তার ‘কর্তৃত্বপূর্ণ’ অংশগ্রহণও প্রমাণিত। ফলে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৪ (২) ধারা অনুযায়ী তিনি ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃত্বের’ দোষে দোষী।”

ট্রাইব্যুনালের রায়

ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৪টি অভিযোগ এনেছিল প্রসিকিউশন। এর মধ্যে দশটি ‘সন্দেহাতীতভাবে’ প্রমাণিত হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়। আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে।

এর মধ্যে ১১ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, মীর কাসেমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার পর তার এবং আরও পাঁচজনের লাশ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

এই ভবনটিই ডালিম হোটেল

আর ১২ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, মীর কাসেমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, রঞ্জিত দাস ওরফে লাঠুকে ও টুনটু সেন ওরফে রাজুকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। পরে জাহাঙ্গীরকে ছেড়ে দেওয়া হলেও লাঠু ও রাজুকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হয়।

১১ নম্বর অভিযোগে তিন বিচারক কাসেমকে সর্বসম্মতভাবে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ সাজার রায় দেয়। তবে ১২ নম্বর অভিযোগের ক্ষেত্রে এক বিচারক আসামিকে খালাস দেওয়ার পক্ষে মত দেওয়ায় ফাঁসির রায় আসে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে।

সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০ ও ১৪ নম্বর অভিযোগের সবগুলোতেই অপহরণ করে নির্যাতনের বর্ণনা রয়েছে। এর মধ্যে ২ নম্বর অভিযোগে মীর কাসেমকে ২০ বছর কারাদণ্ড, ১৪ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ড এবং বাকি ছয় অভিযোগের প্রতিটিতে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।

১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগে মীর কাসেমের সংশ্লিষ্টতা প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে না পারায় ট্রাইব্যুনাল এসব অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেপ্তার করার পর ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয় জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মীর কাসেমকে। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার যুদ্ধাপরাধের বিচার।

২০১৪ সালের ২ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডের রায় দিলে ৩০ নভেম্বর আপিল করেন মীর কাসেম। দেড়শ পৃষ্ঠার মূল আবেদন ও এক হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠার নথিপত্রসহ করা আপিলে তিনি সাজা বাতিল করে খালাস চান।

ওই আপিলের ওপর ৯ ফেব্রুয়ারি শুনানি শুরুর পর সাত কার্যদিবস দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে ২৪ ফেব্রুয়ারি আদালত রায়ের দিন ঠিক করে দেয়।

দুই পক্ষের যুক্তি

শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, “ডালিম হোটেলে নিয়ে যে অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে, আসামিরা কিন্তু তা অস্বীকার করেনি। আসামিপক্ষের মূল বক্তব্য ছিল, সে সময় তিনি চট্টগ্রামে ছিলেন না। মীর কাসেম আলীর পক্ষে তার বোন যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তাতে উনি উল্টো কথা বলেছেন। উনি বলেছেন, মীর কাসেম আলী কুমিল্লায় থাকতেন, তার বাবার সঙ্গে। কাজেই তাদের যে প্লি অব অ্যালিবাই, তা প্রমাণ হয়নি।”

“জসীম, টিন্টো সেন, রঞ্জিত দাসকে হত্যার দায় থেকে মীর কাসেম আলী কোনোভাবেই ‘অব্যাহতি পেতে পারেন না, বলেন তিনি।

অন্যদিকে খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা দেখাতে চেয়েছি মীর কাসেম আলী চিটাগাং ইসলামী ছাত্র সংঘের সেক্রেটারি ছিলেন একাত্তরের প্রথম থেকে। ৭ নভেম্বরের আগে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। হঠাৎ করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে জনসম্মুখে হেয় করার জন্য। এক্ষেত্রে সরাসরি কোনো এভিডেন্স নেই।”

“প্রসিকিউশনের ডকুমেন্ট থেকে আমরা প্রমাণ করেছি, ঘটনার যে তারিখ দিয়েছে- তখন তিনি ঢাকায় ছিলেন।”

বদর নেতা থেকে জামায়াতের শুরা সদস্য

মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের ত্রাস মীর কাসেম আলী রাজনৈতিক ও আর্থিক ক্ষেত্রে অসাধারণ ধূর্ততার স্বাক্ষর রেখে অত্যন্ত দ্রুততায় নিজের ও দলের উন্নতি ঘটিয়েছেন, পরিণত হয়েছেন জামায়াতের আর্থিক মেরুদণ্ডে।

জিয়াউর রহমানের আমলে জামায়াতের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর এই যাত্রাপথে তিনি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও পেয়েছেন।

মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার চালা গ্রামের তৈয়ব আলীর দ্বিতীয় ছেলে মীর কাসেম আলীর জন্ম ১৯৫২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তার ডাকনাম পিয়ারু হলেও চট্টগ্রামের মানুষ তাকে চিনত মিন্টু নামে।

গত শতকের ষাটের দশকে কাসেম ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষার্থী, ১৯৬৭ সালে ওই স্কুল থেকেই তিনি মেট্রিক পাশ করেন। বাবা তৈয়ব আলী ছিলেন চট্টগ্রাম টেলিগ্রাফ অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকার সিঅ্যান্ডবি কলোনিতে তারা থাকতেন।

চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর সেখানেই স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হন কাসেম, পরের বছর জামায়াতের তখনকার ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের কলেজ শাখার সভাপতি হন। স্বাধিকারের দাবিতে বাঙালির সংগ্রাম তখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।

একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী সারা দেশে বাঙালি নিধন শুরু করলে স্বাধীনতার লড়াইয়ে অস্ত্র হাতে নেয় এ দেশের মানুষ। ওই বছর ৬ নভেম্বর পর্যন্ত কাসেম চট্টগ্রাম শহর শাখা ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন এবং সেই সূত্রে ছিলেন চট্টগ্রামে আর বদর বাহিনীর নেতা।

৭ নভেম্বর দলে পদোন্নতি পেয়ে তিনি পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রাদেশিক কার্যকরী পরিষদের সদস্য এবং পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক  হন। সে সময় সংগঠনের সভাপতি ছিলেন যুদ্ধাপরাধী আরেক জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ।

মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডার হিসাবে মীর কাসেম চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত হন।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর তিনি আত্মগোপনে যান। স্বাধীন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয় ছাত্রসংঘ ও জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি।

ট্রাইব্যুনালের নথিপত্র অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালে ঢাকার আইডিয়াল কলেজ থেকে বিএ পাস করেন মীর কাসেম।

পঁচাত্তরে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমান জামায়াতকে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসংঘ নাম বদলে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করলে মীর কাসেম তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন।

১৯৮০ সালে কাসেম যখন সরাসরি জামায়াতের রাজনীতিতে যোগ দেন রাবেতা আলম আল-ইসলামী নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ সমন্বয়ক। বলা হয়, সেই সময় থেকেই তিনি জামায়াতের আর্থিক ভিত্তি মজবুত করতে কাজ করে যাচ্ছেন।

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড গঠন হলে মীর কাসেম প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান হন। দলে দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে ১৯৮৫ সালে তিনি হন জামায়াতের শুরা সদস্য।

ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মীর কাসেম ছিলেন ইবনে সিনা ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য ।

গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত মীর কাসেম দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনেরও চেয়ারম্যান ছিলেন। ওই প্রতিষ্ঠানেরই সংবাদপত্র দৈনিক নয়া দিগন্ত এবং টেলিভিশন চ্যানেল দিগন্ত টেলিভিশন। ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের অবস্থান নিয়ে ধর্মীয় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে দিগন্ত টেলিভিশন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সপ্তম রায়

আপিল বিভাগে যুদ্ধাপরাধ মামলায় এর আগের ছয়টি রায়ের মধ্যে চারটিতে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

আপিল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর দুই পক্ষের করা রিভিউ আবেদন এখন নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

আর সর্বশেষ রায়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর সর্বোচ্চ সাজা বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হলে দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করবে কারা কর্তৃপক্ষ। 

এছাড়া শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপিলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

৭২ বছর বয়সী নিজামী বিগত চার দলীয় জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। তার আগে ২০০১-০৩ সময়ে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী। এর আগে চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলাতেও তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়।