অ্যাটর্নি জেনারেলের মুখেও বিএনপির সুর: খাদ্যমন্ত্রী

মীর কাসেম আলীর আপিল নিয়ে প্রধান বিচারপতির পর অ্যাটর্নি জেনারেলও ‘বিএনপির সুরে’ কথা বলছেন বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2016, 12:06 PM
Updated : 6 March 2016, 07:52 PM

“বিএনপির ভাষা এবং আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেলের ভাষা একই, তিনি আর রিজভী একই সুরে কথা বলতেছেন,” বলেছেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে মীর কাসেমের আপিলের পুনঃশুনানির দাবি মন্ত্রী কামরুল তোলার পর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বিচার নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

রোববার অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য আসার পর খাদ্যমন্ত্রী কামরুল তার দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, “বিচারপতিরা প্রকাশ্য আদালতে বলেন, প্রসিকিউটররা রাজনীতি করছেন। তখন ১৬ কোটি মানুষের একজন হিসেবে, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি কি রিঅ্যাকশন দিতে পারব না?

“আমি তো প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কথা বলছি না। …রায় ঘোষণার আগে আমাকে যেভাবে সংক্ষুব্ধ করেছেন… রিঅ্যাকশন দেওয়ার স্বাধীনতা কি আমার নেই? এখানে সংবিধানকে লংঘন করা, আদালত অবমাননা করা- এসব কথা বলার তো কোনো অর্থই হয় না।”

মীর কাসেম আলীর আপিলের শুনানিতে প্রসিকিউশনের কাজে প্রধান বিচারপতির অসন্তোষ প্রকাশের পর এর রায়ের তিন দিন আগে শনিবার এক আলোচনা সভায় ওই বিষয়টি ধরে কথা বলেন সাবেক আইনমন্ত্রী কামরুল।

তিনি বলেন, “জামায়াত যে অভিযোগ করেছে, বিএনপি যে অভিযোগ করেছে, তাদের আন্তর্জাতিক লবিস্ট গ্রুপ যে সুরে কথা বলছে, একই সুরে কথা বলেছেন প্রধান বিচারপতি।

“প্রকারান্তরে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন তিনি। এই মামলার রায় কী হবে, তা প্রধান বিচারপতির প্রকাশ্যে আদালতে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি।”

সাংবাদিকরা তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসা মাহবুবে আলম বলেন, প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে এই ধরনের বক্তব্য অসাংবিধানিক।

প্রধান বিচারপতিকে জড়িয়ে মন্ত্রীর ওই বক্তব্যকে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ’ হিসেবে মন্তব্য করেছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেনও।

খাদ্যমন্ত্রী কামরুলের বক্তব্যকে ‘চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ, হুমকিমূলক এবং রাজনৈতিক মাস্তানি’ বলেছেন বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

কামরুল ইসলাম (ফাইল ছবি)

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সময় আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা কামরুল নিজেকে একটা পক্ষ দাবি করে বলেন, “আমি কিন্তু আদালত অবমাননাকর কোনো কথা বলিনি, সংবিধান লংঘন করিনি।”

“আমি বলিনি যে আদালত বায়াসড হয়ে এ কথাগুলো বলেছে। আমরা সবাই রায়ের আগের মন্তব্যগুলোতে উদ্বিগ্ন হয়েছি যে কী হতে যাচ্ছে?”

আদালতের ওই বক্তব্যের সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে মাহবুবে আলমের ‘বাধা’ দেওয়া উচিৎ ছিল বলেও মন্তব্য করেন এই মন্ত্রী।

মন্ত্রীর পদে থেকে এ ধরনের মন্তব্য করা যায় কি না- এ প্রশ্নে কামরুল বলেন, “আরে, আমি তো মানুষ। মন্ত্রী কি আকাশের জীব? না-কি অন্য গ্রহের জীব? আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি এই মামলার বাদী, ১৬ কোটি মানুষই এই মামলার বাদী।”

“বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলা সমীচীন নয়”- স্বীকার করে আইনজীবী কামরুল বলেন, “কিন্তু বিচারাধীন বিষয় নিয়ে বিচার চলাকালীন কেউ কোনো পক্ষকে এরকমভাবে হার্ট বা কষ্ট দিতে পারেন না। কষ্ট দিয়েছেন বলেই আমার মুখ দিয়ে এ রকম কথা বের হয়েছে। জনমনের সংশয় দূর করার জন্য এই আপিল জানিয়েছি। আদালত অবমাননার জন্য নয়।

“যখন দেখি প্রকাশ্য আদালতে প্রসিকিউটরদের একেবারে ধুয়ে ফেলেছে এবং আদালত এক পর্যায়ে এমন কথাও বলেছে প্রসিকিউটররা মামলার নামে রাজনীতি করছে। তার মানে রাষ্ট্র বা সরকার রাজনীতি করছে তা বোঝা যাচ্ছে। তখন কি আমি সংক্ষুব্ধ হব না? উদ্বিগ্ন হব না? আমার কোনো রিঅ্যাকশন থাকবে না?”

“এখনও প্রত্যাশা করি রায়টা ঠিক হোক। মীর কাসেম আলীকে ছেড়ে দিলে কলিজাটা ফেটে যাবে,” বলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।